পাহাড়ঘেরা আশ্চর্য এক দেশ আফগানিস্তান—এশিয়া-ইউরোপের সদর দরজা। আরও আশ্চর্য সেই দেশের মানুষ—উদার, অকুতোভয়, আলখাল্লা-পাগড়ি-শ্মশ্রু-শোভিত এবং অতিমাত্রায় স্বাধীনচেতা। ইতিহাসের যে অপ্রতিরোধ্য সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটেন দুনিয়ার ১ কোটি ৩০ লাখ বর্গমাইল এলাকা দখল করে ঘোষণা করেছিল ‘ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে কখনো সূর্য অস্ত যায় না’—সেই ব্রিটেন তিন দফা (১৮৩৯, ১৮৭৮, ১৯১৯) আফগানিস্তানে হামলা করে প্রতিবারই গো-হারা হেরে লেজ গুটিয়ে পালাতে বাধ্য হয়। পরাক্রান্ত সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তান দখল করতে যুদ্ধাভিযান চালিয়ে যায় টানা ১০ বছর (১৯৭৯-১৯৮৯) ধরে, কিন্তু মাথা-নত-না করা পশতুন-পাঠানদের কঠিন প্রতিরোধের মুখে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে অবশেষে পিছু হটে। সবশেষে তালিবানকে বশ করতে মাঠে নামে দাম্ভিক পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইতিহাসের দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে (২০০১-২০২১) তারা আড়াই ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করে, হাজার হাজার সৈন্য হারায় এবং নাকে খত দিয়ে ঘরে ফেরে। এখন তালিবান হিন্দুকুশ পর্বতের চূড়ার মতোই আচ্ছামতো পাগড়ি পেঁচিয়ে মাথা উঁচু করে দেশ চালায়, আফগানিস্তান রয়ে যায় অজেয়। সিসাঢালা প্রাচীর এই অজেয়তাকেই উচ্চকিত করে। ইতিহাসের বই নয় এটা, প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকের সাক্ষ্য। আল জাজিরা আহমাদ ফালুদ্দিনকে পাঠিয়েছিল ক্লান্ত পরাস্ত মার্কিনদের আফগানিস্তান থেকে পলায়নের ঘটনার প্রতিবেদন করতে। কিন্তু এ বই প্রতিবেদনও নয়, বরং সেই প্রত্যক্ষণ ও প্রতিবেদনের অভিজ্ঞতার প্রাণবন্ত বয়ান। লেখক বার বার গিয়েছেন আফগানিস্তানে, যোদ্ধা আর নেতাদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন, বন্ধু হয়ে মিশে গিয়ে নিবিড়ভাবে পাঠ করেছেন সেই মুজাহিদদের মন যারা কখনোই হারে না।