আমি মাত্র ক্লাস সেভেনে উঠেছি। পরিবারের বড় ছেলে। ঘরের যাবতীয় কাজকর্ম আমাকেই করতে হয়। এজন্য যে আমার খুব কষ্ট হয় তাও না। বরং আমি বেশ একটু গর্ববোধই করি। এসব করতে গিয়ে আমি পড়াশোনায় একটু পিছনে পড়ে গেছি। একটু না, অনেকখানি পিছনে পড়ে গেছি। এবার সববিষয়ে উত্তীর্ণ ছাত্রদের মধ্যে আমি সর্বশেষ। বন্দুকের গুলি একেবারে কানের পাশ দিয়ে গেছে। আরেকটু হলেই গণিতে আর সামাজিক বিজ্ঞানে ফেল হয়ে যেত, আর আমার সারা জীবনের খেতাব জুটে যেত ফেলটু। সেভেনে ভর্তি হবার পর মা বললেন, "যাও তো বাবা গনি মিয়া, ছোট মামার বাড়ি থেকে পিঠা খাবার আতপ চাল দেবে, নিয়ে এসো।" এবার কিন্তু আমি ভয় পেলাম। ছোটমামার বাড়ি সেই কাশীপুর। শহর থেকে প্রায় আটকিলোমিটার রাস্তা দূরে। আমি কি করে একা একা অতবড় দুইমনি চালের বস্তা নিয়ে আসবো? কিন্তু আমার মা অনেক নিষ্ঠুর। কবে ধান রেডি হয়ে গেছে। তার ভাই ধান থেকে ভাঙিয়ে বোনের জন্য চালও বস্তায় ভরে রেখেছে। এখন গিয়ে শুধু আনার অপেক্ষা। মা নিজে আমাকে নিয়ে এসে জেলখানার সামনের টেম্পুস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে একটা টেম্পুতে তুলে দিলেন। আগেও আমি ছোটামামার বাড়ি কয়েকবার গেছি মায়ের সঙ্গে। তাই বলে এতদূরে একা একা! আমার খুব ভয় ভয় লাগল।
তিনি তরুণ কবি হিসেবেই সমধিক পরিচিত। সমান দক্ষতা রয়েছে কথাসাহিত্য ও অনুবাদে। প্রথম কাব্যগ্রন্থ সহাস্য বিষন্নতা প্রকাশিত হয় ২০০৭ সালে। প্রথম উপন্যাস আরমান শেখ ও তার শেকড় সংক্রান্ত জটিলতা (২০০৮)-এর জন্য পেয়েছেন খুলনা রাইটার্স্ পদক ২০০৯। তৃণমূল মানুষকে খুব কাছে থেকে দেখেছেন। প্রান্তিক সাংবাদিকতার সুবাদে পেয়েছেন প্রাকৃতজন পুরস্কার ২০০১। তাঁর উপন্যাসের প্রতি পরতে মানুষের জীবনবোধ, দ্বন্ধ, দর্শ্ন, জীবনকে নৈর্ব্যক্তিকভাবে দেখার প্রবণতা লক্ষনীয়। এই সঙ্গে প্রবল আবেগময় ভাষার সহজ সরল বুননে পাঠককে ধরে রাখেন উপন্যাস শেষ না হওয়া পর্য্ন্ত। একাধিক বই পুনঃমুদ্রিত হয়েছে। এ লেখকের প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ২৬টি।