"সিদ্ধার্থ" বইটিতে লেখা ফ্ল্যাপের কথা: সিদ্ধার্থ উপন্যাসের কাহিনী নির্মিত হয়েছে এক ঐতিহাসিক সময়কে কেন্দ্র করে। এ সময়ে গৌতমবুদ্ধ তার মহান নির্বাণের দেশনা প্রচার করছিলেন। আড়াই হাজার বছর আগের ঐতিহাসিক বাস্তবতায় এ কাহিনী নির্মিত হলেও এর পুরাে কাহিনীই লেখকের নিজের। তবে বাস্তব এই যে, সিদ্ধার্থ নামের যে চরিত্র (গৌতমবুদ্ধের ডাক নামও সিদ্ধার্থ, তবে এ সিদ্ধার্থ ভিন্ন) সত্যকে জানার জন্য, মােক্ষ ও মুক্তির পথকে পাবার ব্যাকুলতায় পথে নেমেছিল তা ঐ সময়ের জন্য এক ঐতিহাসিক সত্য। যে কারণে ঐ সময়েই চার্বাক দর্শনের প্রভাব চূড়ায় পৌছে, ঐ সময়েরই অজিন নাথপুত্র অর্থাৎ তীর্থঙ্কর মহাবীর জৈন ধর্মের দীক্ষক হিসেবে বা চব্বিশতম তীর্থঙ্কররূপে আত্মপ্রকাশ করেন। আরাে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধর্মগােষ্ঠীর তখন আবির্ভাব ঘটে। কাল্পনিক চরিত্র হলেও এদলেরই একজন সিদ্ধার্থ। সত্য, মােক্ষ, নির্বাণ এসব বােঝার মানসে সে তার শৈশবের মহান শিক্ষক তার পিতা ও অন্য ব্রাহ্মণদের ত্যাগ করে তার অনুসরণ করে বন্ধু গােবিন্দও। অতঃপর তারা বিভিন্ন শ্রমণ ও সন্ন্যাসীর দ্বারস্থ হয়। মহান বুদ্ধের আকর্ষণে তারা উভয়েই জেতুবনে উপস্থিত হয়। বন্ধু গােবিন্দ বুদ্ধের শরণ লাভ করে। সিদ্ধার্থ গৌতমের দেশনায় ও তার সাথে সরাসরি বাক্যালাপে প্রবলভাবে আলােড়িত হলেও সে অবলােকন করে গৌতমের দের্শনার এক বৃহৎ ক্রটি। গৌতমকে নির্বাণপ্রাপ্ত জ্ঞান করেই এবং তাঁকে তার দেখা শ্রেষ্ঠতম শিক্ষক হিসেবে স্বীকার করেও সে জেতুবন ত্যাগ করে। সত্য লাভের আশায় এত বছর পর এবার সে প্রবেশ করে ইন্দ্রিয়পরায়ণতার জগতে। এ কাজে তার শিক্ষয়িত্রী হয় কমলা নামের এক ধনাঢ্য ও সম্ভান্ত গণিকা। সে শিক্ষকরূপে আরাে পায় কামস্বামী নামের এক ধনাঢ্য শ্ৰেষ্ঠীকে, একদল পাশা খেলােয়াড়কে এবং পরিশেষে এক খেয়া পারাপারকারী মাঝিকে। এই মাঝিই পরিশেষে তার শ্রেষ্ঠ শিক্ষকরূপে আবির্ভূত হয়। কিন্তু এই সুদীর্ঘ যাত্রায় সিদ্ধার্থ কি শেষ পর্যন্ত তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছে। সে কি লাভ করতে পেরেছে নির্বাণের মহান পথ। এই অসামান্য গল্প শুনিয়েছেন দীর্ঘকাল ভারতে বসবাসকারী নােবেল বিজয়ী ঔপন্যাসিক হেরমান হেসে। বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই কাহিনীকার তার জাদুস্পর্শী লেখার মধ্য দিয়ে আড়াই হাজার বছর পূর্বের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের ওপর তৈরি করেছেন এক বিস্ময়কর ফিকশন।
হারমান হেসের জন্ম ১৮৭৭ সালে জার্মানীর কালে।। তার পিতা এবং পিতামহ ছিলেন প্রটেস্ট্যান্ট মিশনারি।। সেই সুবাদে তের বছর বয়স পর্যন্ত তিনি ধর্মীয় বিদ্যালয়ে পড়াশােনা করার পর ছেড়ে দেন। আঠারাে বছর বয়সে বই বিক্রেতা হিসেবে সুইজারল্যাণ্ডের ব্যাসেলে চলে আসেন এবং জীবনের প্রায় পুরােটাই তিনি সুইজারল্যাণ্ডে বাস করেন। তার প্রথম দিককার রচনাসমূহের মধ্যে রয়েছে পিটার ক্যামেনজিন্দ (১৯০৪)। বিনিথ দ্য হুইল (১৯০৬), গারট্রড (১৯১০)। এই সময়কালের মধ্যে হেস বিয়ে করেন এবং তিন পুত্র সন্তানের জনক হন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় হেস জার্মান যুদ্ধবন্দীদের বই পুস্তক সরবরাহ শুরু করেন এবং এই সময়ে তার লেখনিতে যুদ্ধবিরােধী এবং শান্তিবাদী মতবাদ প্রকট হয়ে ওঠে। প্রথম বিবাহ বিচ্ছেদের পর তিনি সুইজারল্যাণ্ডের মন্টাগানােলায় চলে আসেন এবং এখানেই তিনি তার সর্বাধিক উল্লেখযােগ্য গ্রন্থগুলাে রচনা করেন : সিদ্ধার্থ (১৯২২), স্টিপেনওলভ (১৯২৭), নার্সিশাস অ্যাণ্ড গােল্ডমুন্ড (১৯৩০)। ১৯৪৬ সালে সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি নােবেল পুরস্কার লাভ করেন। হারমান হেস ১৯৬২ সালে পঁচাশি বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।