ভূমি শুষ্ক ভূমি বলে চিহ্নিত করা হয়, পৃথিবীর কঠিন বহিরাবরণ যা স্থায়ীভাবে পানিতে নিমজ্জিত হয় না। মানবজাতির প্রায় সকল প্রকার কর্মকান্ডই ভূমিতে সংগঠিত হয় যা কৃষি, বসতি এবং বিভিন্ন প্রকার প্রাকৃতিক সম্পদের দ্বারা সহায়তা করে। স্টেট ইকুইজিশন এন্ড টেন্যান্স এ্যাক্ট ১৯৫০-এর ২ ধারা (১৬) দফা (Clasue) এ ভূমি বলতে বুঝায়, সে ভূমি আবাদি, অনাবাদি, অথবা সৎসরের যে কোনো সময় পানি দ্বারা নিমজ্জিত থাকে এবং (ভূমি হতে উৎপন্ন সুবিধাদিসহ) বাড়িঘর, দালান-কোঠা, ভূমির সাথে সংযুক্ত বস্তুসমূহ বা ভূমির সাথে সংযুক্ত কোনো বস্তুর সাথে স্থায়ীভাবে আবদ্ধ রয়েছে এমন বস্তু বা বস্তুসহ ভূমির অন্তর্ভুক্ত বা ভূমি হিসেবে গণ্য হবে। বাংলাদেশে ভূমির মালিকানার ইতিহাস মাটির সাথে এ দেশের মানুষের সম্পর্ক। এক খণ্ড জমি বাংলাদেশের মানুষের কত আপন তা জমি-জমার সাথে সংশ্লিষ্ট ও ভুক্তভোগী মাত্রই অবগত আছেন। ব্রিটিশ ভূ-ভারতের সময়কাল হতে জমি-জমা সম্পর্কিত আবেগ-অনুভূতি ঐতিহাসিকভাবে আরো ঘনীভূত হয়েছে। জমিদারি প্রথা, চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত, মধ্যস্বত্বভোগীদের নিপীড়ন, নীলচাষ... এ শব্দগুলির সাথে আমরা সকলেই পরিচিত। বাংলার ইতিহাসের পরিক্রমায় সাধারণ মানুষের জমি-জমা নিয়ে বঞ্চনা, দুর্ভোগ আজ কালোত্তীর্ণ বিভিন্ন শব্দমালায় উপন্যাস কিংবা কবিতার অক্ষরে লিপিবদ্ধ। ১৮৮৫ সালের বেঙ্গল টেন্যান্সি অ্যাক্টের মধ্যে দিয়ে প্রজা হিসেবে স্বীকৃতি লাভের মধ্যে দিয়ে সাধারণ মানুষের জমির উপর স্বত্ব প্রতিষ্ঠার প্রথম ধাপ পার হলেও ১৯৫০ সালের জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন প্রণয়ন পর্যন্ত সাধারণ জনগণকে অপেক্ষা করতে হয়েছে নিপীড়নের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০ প্রণয়নের মাধ্যমে রায়তি প্রজাগণ জমির মালিক হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন যদিও সরকারই প্রকৃতপক্ষে সকল জমির নিরঙ্কুশ মালিক। বাংলাদেশে ভূমি ও জমি-জমা ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। কৃষি হচ্ছে এ দেশের অন্যতম জাতীয় আয়ের অন্যতম উৎস এবং প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষের জীবন-জীবিকার অবলম্বন। তাই এ দেশে ভূমি ও পানি সম্পদের গুরুত্ব অপরিসীম। ভূমি হচ্ছে মৌলিক প্রাকৃতিক সম্পদ যা মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য, শিল্পপণ্য, ভোগ বিলাস, স্বাস্থ্য রক্ষার উপকরণ ইত্যাদির মূল উৎস। কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধি, ভূমি অপরিকল্পিত ব্যবহারের কারণে আমাদের এ গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। অর্থনৈতিক অগ্রগতির সাথে সাথে নগরায়ণের প্রবণতা বাড়ছে, শিল্পায়ণের পরিধি ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে, রাস্তাঘাট, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্রমাগত সম্প্রসারণের ফলে মাথাপিছু জমির পরিমাণ ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ এ সম্পদের ব্যবহার সঠিক পরিকল্পনার উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। তাই একটি যথাযথ সুষ্ঠু পরিকল্পনা, নীতির মাধ্যমে এ প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার তথা সীমিত ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহার সুনিশ্চিত করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে ভূমি মন্ত্রণালয় হতে ভূমি ব্যবহার নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ভূমি সংক্রান্ত সকল কার্যাদি সম্পাদনের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রণালয় গঠন করা হয়। বর্তমানে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর, ভূমি সংস্কার বোর্ড, ভূমি আপীল বোর্ড, ভূমি প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং হিসাব নিয়ন্ত্রক (রাজস্ব) দপ্তর ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করছে। বিভাগীয় পর্যায়ে কমিশনার, জেলা পর্যায়ে কালেক্টর (জেলা প্রশাসক), উপজেলা পর্যায়ে সহকারী কমিশনার ভূমি, ইউনিয়ন পর্যায়ে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (তহশীলদারগণ) ভূমি সংক্রান্ত কার্যাদি সম্পাদনে নিয়োজিত রয়েছেন। ভূমি উন্নয়ন কর ও রাজস্ব আদায়, খাস জমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত, জলমহাল ব্যবস্থাপনা, ভূমি অধিগ্রহণ ও হুকুম দখল, ভূমি রেকর্ড ও জরিপকরণ এবং ভূমি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা/কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ প্রদান ইত্যাদি বিষয়ে ভূমি মন্ত্রণালয় কাজ করে থাকে। এছাড়াও ব্যাংকের মাধ্যমে ভূমি উন্নয়ন কর আদায়, জনস্বার্থে ভূমি আইন ও বিধি প্রণয়ন ইত্যাদি সংস্কারমূলক কার্যক্রম এবং ভূমিহীন ছিন্নমূল জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন, ভূমি জোনিং কার্যক্রম, চর ডেলেপমেন্ট এন্ড সেটেলমেন্ট প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীনদের মধ্যে খাসজমি বন্দোবস্ত প্রদান, উপজেলা ও ইউনিয়ন ভূমি অফিস নির্মাণ, মেরামত, ভূমি রেকর্ড আধুনিকীকরণ ও ভূমি সংক্রান্ত সেবা প্রদান ইত্যাদি উন্নয়নমূলক কার্যাদি সম্পাদিত হয়ে থাকে। ১৯৫০ সনে, রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ এবং প্রজাস্বত্ব আইন পাশের মাধ্যমে জমিদারি প্রথার বিলুপ্তির পর ভূমি রাজস্ব আদায় ও ভূমি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য সরকার রাজস্ব বিভাগ (Revenue Department) সৃষ্টি করে। তৎকালীন রাজস্ব বিভাগকে সহায়তা করার জন্য প্রাদেশিক সরকারের অধীনে বোর্ড অব রেভিনিউ নামে একটি উচ্চ পর্যায়ের বোর্ড গঠন করা হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ভূমি সংক্রান্ত সকল কার্যাদি সম্পাদনের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রণালয় গঠন করা হয়। বিভাগীয় পর্যায়ে কমিশনার, জেলা পর্যায়ে কালেক্টর (জেলা প্রশাসক), মহকুমা পর্যায়ে মহকুমা প্রশাসক, থানা পর্যায়ে সার্কেল অফিসার (রাজস্ব) ও ইউনিয়ন পর্যায়ে তহসিলদারগণ ভূমি সংক্রান্ত কাজ করতেন। জমি-জমা ব্যবস্থাপনার কার্যাবলী ১. সরকারের পক্ষে ভূমির অধিকার ও স্বত্ব সংরক্ষণ; ২. ভূমি রাজস্ব নির্ধারণ ও আদায় এবং ভূমি প্রশাসন পরিচালনা ও তত্ত্বাবধান; ৩. খাস জমি, অর্পিত ও পরিত্যক্ত সম্পত্তির ব্যবস্থাপনা; ৪. ভূমি জরিপ এবং ভূমির নকশা ও রেকর্ড প্রণয়ন, সংরক্ষণ এবং প্রকাশ; ৫. অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক সীমানা চিহ্নিতকরণ ও সীমানা পিলার মেরামত ও সংরক্ষণ; ৬. সায়রাত মহালের (জলমহাল, বালুমহাল, পাথরমহাল, চিংড়ীমহাল ইত্যাদি) ব্যবস্থাপনা; ৭. ভূমি অধিগ্রহণ ও হুকুমদখল সংক্রান্ত কাযক্রম; ৮. ভূমি সংস্কার ও ভূমি ব্যবহার নীতিমালা বাস্তবায়ন। ভূমি আইন জমি লেনদেন, বেচাকেনা, হস্তান্তর, ভূমিস্বত্ব ইত্যাদি বিষয় যে আইনে অন্তর্ভুক্ত তাকে ভূমি আইন বলে। খতিয়ান মৌজা ভিত্তিক এক বা একাধিক ভ‚মি মালিকের ভূ-সম্পত্তির বিবরণ সহ যে ভূমি রেকর্ড জরিপকালে প্রস্তুত করা হয় তাকে খতিয়ান বলে। এতে ভূমধ্যাধিকারীর নাম ও প্রজার নাম, জমির দাগ নং, পরিমাণ, প্রকৃতি, খাজনার হার ইত্যাদি লিপিবদ্ধ থাকে। আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের খতিয়ানের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। তন্মধ্যে সিএস, এসএ এবং আর.এস উল্লেখযোগ্য। ভূমি জরিপকালে ভূমি মালিকের মালিকানা নিয়ে যে বিবরণ প্রস্তুত করা হয় তাকে খতিয়ান বলে। খতিয়ান প্রস্তত করা হয় মৌজা ভিত্তিক। জমির খতিয়ান বা পর্চা খতিয়ান বা পর্চা একই জিনিস। জমির মালিকানা প্রমাণের সরকারি যে দলিল তাকে খতিয়ান বলে। বিভিন্ন এলাকায় এটাকে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। মৌজা ভিত্তিক এক বা একাদিক ভূমি মালিকের ভূ-সম্পত্তির বিবরণসহ যে ভূমি রেকর্ড জরিপকালে প্রস্তুত করা হয় তাকে খতিয়ান বলে। খতিয়ানের অর্থ হইল হিসাব। সাধারণভাবে স্বত্ব সংরক্ষণ ও রাজস্ব আদায়ের উদ্দেশ্যে জরীপ বিভাগ কর্তৃক প্রত্যেক মৌজার ভূমির মালিক বা মালিকগণের নাম, পিতা অথবা স্বামীর নাম, ঠিকানা, হিস্যা (অংশ) এবং তাদের স্বত্বাধীন দাগসমূহের নম্বরসহ ভূমির পরিমাণ, শ্রেণী, এদের জন্য দেয় খাজনা ইত্যাদি বিবরণ সহ ক্রমিক সংখ্যা অনুসারে যে স্বত্ব তালিকা বা স্বত্বের রেকর্ড প্রস্তুত করা হয় তাদের প্রত্যেকটিকে খতিয়ান বলা হয় এবং উক্ত রেকর্ডকে স্বত্বের রেকর্ড বা রেকর্ড অব রাইটস (ROR) বলা হয়। এক বা একাধিক দাগের সম্পূর্ণ বা আংশিক পরিমাণ ভূমি নিয়ে এক বা একাধিক ব্যক্তির নামে স্মরণীয় বা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক যে ভূমি স্বত্ব প্রস্তুত করা হয় তাকে খতিয়ান বলে। খতিয়ানগুলো ১, ২, ৩, ৪, ৫ ইত্যাদি ক্রমিক সংখ্যা দ্বারা সাজানো হয়ে থাকে। প্রত্যেক খতিয়ানে একটি সংখ্যা রয়েছে। ইহাদেরকে খতিয়ান নম্বর বলা হয়। প্রত্যেক মৌজার খতিয়ান ১(এক) হতে শুরু হয়। কোনো কোনো মৌজার কয়েক হাজারের বেশি থাকতে পারে। কোনো মৌজার কতটি খতিয়ান রয়েছে তা উক্ত স্বত্বের রেকর্ডে (ROR) পাওয়া যায়। আইনিভাবে খতিয়ানের পরিচয় আইনিভাবে বলতে গেলে বলা যায় সরকারিভাবে জমি জরিপ করার সময় জরিপের বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করে চূড়ান্তভাবে বাংলাদেশ ফরম নং ৫৪৬২ (সংশোধিত)-তে ভূমির মালিকানা/দাগের বর্ণনাসহ যে নথিচিত্র প্রকাশ করা হয় তাকে খতিয়ান বলে। খতিয়ান বা পর্চা প্রস্তুতের ইতিহাস ১৯৫০ সালের রাষ্ট্রীয় অর্জন ও প্রজাস্বত্ব আইনের চতুর্থ অধ্যায় অর্থাৎ ১৭ হতে ৩১ ধারায় খতিয়ান প্রস্তুতকরণ সম্পর্কিত বিধিবিধান রয়েছে। ১৭ নম্বর ধারার ১ নম্বর উপধারা অনুযায়ী সরকারকে কোনো জেলা, জেলার অংশ অথবা স্থানীয় এলাকার ক্ষেত্রে খতিয়ান প্রস্তুত করার জন্য অথবা ১৮৮৫ সালের বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন অনুসারে প্রস্তুতকৃত ও চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত খতিয়ান পরিমার্জন করার জন্য ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। ২ নম্বর উপধারয় বলা হয়েছে যে, যদি ১৮৮৫ সালের বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন অনুসারে প্রস্তুতকৃত ও চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত খতিয়ান পরিমার্জন করার জন্য ক্ষমতা প্রদাণ করা হয়েছে।
কাউসার মোল্লা (কে এম টিপু সুলতান) বৃহত্তর উত্তরা থানার দক্ষিণখানে জন্মগ্রহণ করেন, তিনি সিভিল এভিয়েশন হাই স্কুল থেকে এসএসসি, ঢাকা কমার্স কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এইচএসসি সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে উচ্চশিক্ষায় লন্ডন পাড়ি জমান। আইনে স্নাতক (ফার্স্ট ক্লাস) শেষে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া থেকে আইনে স্নাতকোত্তর (ফার্স্ট ক্লাস), নর্দান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কর্পোরেট ল এর উপর স্নাতকোত্তর (ফার্স্ট ক্লাস) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কে এমএসএস, ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে সিটি ল চেম্বার এ কর্মরত আছেন। আন্তর্জাতিক সামাজিক সংগঠন আমিনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, রোটারি ইন্টারন্যাশনাল, এপেক্স ক্লাব, ফেলোশিপ ইন্টারন্যাশনাল, ডেন্টাল হেলথ সোসাইটি, বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা সমিতি (এফপিএবি) ও ফাউন্ডারস কমিউনিটি ক্লাব এর সাথে জড়িত আছেন। তিনি যুক্তরাজ্য, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস্, নর্দান আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, ইটালি ও ইন্ডিয়া ভ্রমণ করেছেন।