বাঙ্গালার নব্য লেখকদিগের প্রতি নিবেদন' প্রবন্ধটি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের একটি উপদেশমূলক প্রবন্ধ। এ প্রবন্ধে তিনি বাংলার নতুন লেখকদের গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁর এ পরামর্শের মূলে ছিল বাংলা সাহিত্যের উন্নতি বিধান। তিনি নতুন লেখকদেরকে দেশ ও জাতির কল্যাণের জন্য লেখনী ধারণ করতে বলেছেন। অর্থ ও খ্যাতির জন্য না লিখে সৌন্দর্য সৃষ্টি করে মানুষকে আনন্দদানের জন্য লিখতে বলেছেন। আর সেই লেখা যেন সত্য ও ধর্মের মর্যাদা ক্ষুন্ন না করে। কারণ সাহিত্যের মূল উদ্দেশ্য সত্য ও ধর্ম। এর অন্যথা করা পাপের কাজ। নতুন লেখকরা যেন লেখার প্রতি আন্তরিক হন। পরনিন্দা বা পরপীড়ন বা স্বার্থের বশে যেমন তেমন লেখা যেন না লেখেন। আর যা লিখবেন, তারা যেন তা তখনই না ছাপান। কিছুদিন রেখে বন্ধুদের পড়ে শুনিয়ে, তাদের মতামত নিয়ে সংশোধন করে পরে ছাপাতে দেন। লেখার ক্ষেত্রে তারা যেন কাউকে অনুকরণ অনুসরণ না করেন। নিজের ক্ষমতার বাইরে গিয়ে যেন কিছু সৃষ্টি করার দুঃসাহস না করেন। কারণ তাতে শক্তির অপচয় ঘটে যত, কাজ তত হয় না। তিনি নব্য লেখকদের দেশের সাধারণ পাঠকের রুচি ও শিক্ষা বিবেচনা করে লোকরঞ্জনের জন্য লিখতে বারণ করেছেন। তাতে রচনার মান নষ্ট হয়, বৃহত্তর কল্যাণ সাধন ব্যর্থ হয়। লেখার ক্ষেত্রে পাঠকের বোঝার উপযোগী সহজ-সরল ভাষা ব্যবহার করতে বলেছেন। কেউ যেন অযথা অপ্রয়োজনীয় অলংকার, অন্য ভাষার শব্দ ব্যবহার না করেন এবং নিজে বোঝেন না এমন ভাষা প্রয়োগ না করেন সেই বিষয়ে তিনি নব্য লেখকদের সতর্ক করেছেন। কারণ এ ধরনের বিদ্যা প্রকাশ করতে গিয়ে বেশিরভাগ লেখাই বুচিহীন এবং দুর্বল হয়ে পড়ে, যা উন্নত সাহিত্য সৃষ্টির অন্তরায়। তাই তিনি বাংলার নব্য লেখকদের এ বিষয়ে যত্নবান হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তারা যেন কারও অনুকরণ করতে গিয়ে তার দোষগুলো অনুকৃত না করেন। ভাষা প্রয়োগে নিজের ভাণ্ডারে যা আছে তা-ই ব্যবহার করেন। অযথা ইংরেজি, সংস্কৃত বা অন্য কোনো বিদেশি ভাষার শব্দ, কোটেশন ব্যবহার করে রচনাকে জটিল করে না তোলেন। পাঠককে সহজ-সরল ভাষায় তার লেখার মূল উদ্দেশ্য যেন বুঝিয়ে দেন। তারা যেন মনে রাখেন যে, সকল অলংকারের শ্রেষ্ঠ অলংকার সরলতা। আর এসব নিয়ম মেনে সাহিত্য সৃষ্টি হলে বাংলা সাহিত্যের দ্রুত উন্নতি সম্ভব।
Title
লেকচার আলিম সৃজনশীল বাংলা - প্রথম পত্র পরীক্ষা-২০২৫