সুলতান সুলেমান দ্য ম্যাগনিফিসেন্ট-এর নির্দেশে গ্রন্থটি রচনার উদ্যোগ নেন খাইরুদ্দীন বারবারোসা। শ্রুতিলিখন করেন তারই সহযোদ্ধা কবি সাইয়েদ আলি মুরাদি। বারবারোসার মিডিল্লি ত্যাগ থেকে নিয়ে আলজেরিয়ার শাসনভার গ্রহণ, দখলদার স্পেনীয়দের বিতাড়ন ও লাখও নিপীড়িত মুসলিম ও ইহুদিকে উৎপীড়নের নাগপাশ থেকে মুক্ত করার একটা অকপট আখ্যান বিবৃত হয়েছে এতে। বইটি কয়েক শতাব্দীপ্রাচীন। তবু দুর্বোধ্যতামুক্ত সাবলীল এর গদ্যভঙ্গি। এর কারণ হয়তো এই যে, এ এমন এক মহামানবের অকপট স্বীকারোক্তি, যোদ্ধা ছাড়া যার দ্বিতীয় কোনও পরিচয় নেই। পাঠযাত্রায় আমরা দেখব, তিউনিসিয়ার জারবা দ্বীপে পৌঁছে বড়ভাই উরুচকে উদ্দেশ করে তার দীপ্ত উচ্চারণ: মৃত্যুই যখন জীবনের শেষগন্তব্য, তাহলে তা আল্লাহর রাস্তায় কেন নয়, এ-ই তো শ্রেয়! এখানে যেমন এসেছে তার নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানের কথা, তেমনি এসেছে তার নির্দেশে পরিচালিত অভিযানের বর্ণনাও। বারবারোসা পাঠককে ধরে রাখতে, নিজ জীবনের ঢেউয়ে পাঠককে আন্দোলিত করতে সিদ্ধহস্ত। তার সঙ্গে পাঠকও হাজির হন আলজেরিয়া প্রতিরক্ষাযুদ্ধের ময়দানে, কেঁপে ওঠেন তিউনিসিয়া, আলজেরিয়া উপকূলে স্পেনের হামলার সমুচিত জবাব দেওয়ার আকাঙ্ক্ষায়; অথচ তিনি কেবল যুদ্ধের সরল ধারাবিবরণীই দিয়ে চলেছেন। আরেকটা বিষয় লক্ষ করবার আছে। বারবারোসা কিন্তু নিরপেক্ষতার ধোঁয়া তোলেননি ধড়িবাজ ইতিবাসবেত্তাদের মতো। এক্ষেত্রে তিনি নাজিল হন সত্যের ত্রাতার ভূমিকায়। লুণ্ঠিত সত্যকে তিনি উদ্ধার করেন। মিথ্যার আঁধার থেকে সত্যকে অবমুক্ত করাই ছিল তার যাবতীয় তৎপরতায় প্রণোদায়িনী। নিঃসংশয়ে বলা যায়, বইটি কালের মূল্যবোধ, মানস ও মানুষের এক দর্পণ হয়ে উঠেছে। অনুবাদে চেষ্টা থেকেছে খাইরুদ্দীন বারবারোসা ও সমকালীনরা যে চোখে প্রত্যক্ষ করেছেন দৈনন্দিন ঘটনা, ঠিক সেভাবেই যেন পাঠক ঘটনাগুলো দেখতে পারেন—তা নিশ্চিত করতে। চেষ্টা ছিল পাঠকের সামনে তৎকালের রাজরাজড়া, পদস্থ ব্যক্তিবর্গের ব্যাপারে বারবারোসা ও তার সঙ্গীদের মনোভাব অপরিবর্তিতভাবে তুলে ধরতে।