শোবার ঘরে পা দিতেই চিৎকার ভেসে এল। একমুহূর্ত থমকে দাঁড়াল রিয়া। সতর্কভাবে এগিয়ে গেল সে। নব ঘুরিয়ে চাপ দিতেই খুলে গেল দরজা এবং পরমুহূর্তেই সে পাথরের মতো স্থির হয়ে গেল। তাঁর সামনে যা দেখছে তা সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত। এমন অবাঞ্ছনীয় দৃশ্য তাকে দেখতে হবে তা সে কল্পনাও করতে পারে নি। চোখ যা দেখল তা সে বিশ্বাস করল করল না। না। মস্তিষ্কে যে ইশারা পেল, তা সে জানতে চাইল না। মন যা অনুভব করল, তা সে কল্পনা বলে উড়িয়ে দিতে চাইল। কিন্তু তাঁর চোখের সামনে যা দেখা যাচ্ছে তাকে তো অস্বীকার করাও যাচ্ছে না। রিয়ার শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে এল ভয়ের শীতল স্রোত। তাঁর প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, অনুভূতি তাকে সতর্ক করে দিল। তবুও তার অজান্তেই সে এক পা এক পা করে এগিয়ে গেল অনেকটা কাছাকাছি। মদ আর সিগারেটের গন্ধের সাথে ভেসে আসছে রক্তের গন্ধ। হঠাৎ সব যেন আলোকিত জ্যোস্নার মতো পরিষ্কার দেখতে পেল রিয়া। শর্মির নিথর দেহ পড়ে আছে মেঝেতে। কার্পেটের ওপর ছোপ ছোপ রক্তের দাগ। সে কি বেঁচে আছে? কী হয়েছিল ওর সঙ্গে? কে করল এমন কাজ। আরমানকে দেখা যাচ্ছে, উদ্ভ্রান্ত দৃষ্টিতে বসে আছে সোফায়। হাতে সিগারেট পুড়ছে। সে তাকিয়ে আছে শর্মির নিথর দেহের দিকে নিষ্পলক। বিস্ময় আর অনুশোচনা তার মুখের চামড়ার পরতে পরতে স্পষ্ট। শর্মিকে কি সে সত্যিই ভালোবেসে ছিল? মাত্র দু'মাসের পরিচয়ে কি কারী সাথে ভালোবাসার সম্পর্ক হয়? নাকি এটা ছিল নিছক একটা ক্ষণস্থায়ী আকর্ষণ মাত্র! তাই যদি না হবে, তবে এক মুহূর্তের অপমান আর উত্তেজনার বশে কী থেকে কী হয়ে গেল। সামান্য উত্তেজনায় এক মুহূর্তের ভুল অথচ কত বড় ক্ষতি।
জন্ম ও বেড়ে ওঠা ফরিদপুর শহরে। স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। ফরহাদ হোসেন—একজন লেখক, চিত্রনাট্যকার, নির্মাতা, প্রযোজক, সঞ্চালক এবং সাংস্কৃতিক সংগঠক। শিকাগোর বিখ্যাত ডিপল ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার ম্যানেজমেন্ট এবং ইনফরমেশন সিস্টেমস-এ স্নাতকোত্তর, বর্তমানে আমেরিকার একটি প্রখ্যাত কোম্পানীতে আইটি কনসালট্যান্ট হিসেবে কর্মরত শশব্যস্ত ফরহাদ হোসেনের সিংহভাগ সময় কাটে লেখালেখি এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে। উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন ধারার সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অবাধ বিচরণকারী ফরহাদ হোসেন মূলত নিরীক্ষাধর্মী চিত্রনাট্য লেখার মাধ্যমে তার লেখালেখির জগতে পদচারণা শুরু করেন। এক দশকেরও অধিক সময় ধরে তিনি চিত্রনাট্য ও গল্প লিখে চলেছেন। থেমে থাকে নি উপন্যাস লেখার কাজও। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা চারটি। সমকালীন গল্পগ্রন্থ ‘তৃতীয় পক্ষ’, ছোট গল্পের সংকলন ‘ধূসর বসন্ত’ এবং উপন্যাসিকার সংকলন ‘…এবং একদিন হঠাৎ’। ‘স্বপ্নজাল’ তাঁর প্রথম উপন্যাস। বর্তমানে স্ত্রী, এক কন্যা এবং এক পুত্রকে নিয়ে বসবাস করছেন টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের ডালাস শহরে।