"ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশি বছর (১৯২১-২০০১)" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশি বছর' গ্রন্থটি রচনার অনুপ্রেরণা এসেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আমার ছাত্র ও শিক্ষক রূপে অর্ধ শতাব্দীকালের অধিক অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক থেকে। বস্তুত রমনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আমার বাল্য জীবন অতিবাহিত হয়েছে ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের অন্তত: পাঁচ বছর আগে থেকে। স্কুল ও কলেজের। যখন ছাত্র ছিলাম তখন থেকেই এ বিশ্ববিদ্যালয়কে আমি দেখে ও জেনে এসেছি, তারপর ১৯৫১ সাল থেকে আমি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ১৯৪৮ সালের ভাষা আন্দোলন খুব কাছে থেকে দেখেছি আর ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রূপে। ১৯৫৭ সালের শেষ দিক থেকে আমি বাংলা বিভাগের গবেষণা স্কলার ও খণ্ডকালীন শিক্ষক, ১৯৬১ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত আমি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, বিভাগীয় প্রধান ও নজরুল অধ্যাপক পদে কাজ করেছি। ১৯৯৯ সাল থেকে আমি বাংলা বিভাগের সংখ্যাতিরিক্ত শিক্ষক, তদুপরি আমি ভাষাতত্ত্ব বিভাগের খণ্ডকালীন শিক্ষক। সুতরাং এই দীর্ঘ সময় নানা ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক অভিযাত্রার দৃশ্য আমি দেখেছি। বিশ শতকের ষাটের দশকে পরপর তিনবছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবের সম্পাদক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাবলির সঙ্গে আমি ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলাম। ১৯৭১ সালের ২৫ ও ২৬ মার্চ নীলক্ষেত আবাসিক এলাকায় থেকে পাকিস্তান বাহিনীর নারকীয় অভিযান থেকে শুধু নয় মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান বাহিনীর বন্দী শিবিরে কিছুকাল আটক থেকেও আমি দৈবক্রমে বেঁচে যাই। স্বাধীনতার পর একটানা প্রায় পঁচিশ বছর শহীদ মিনার আবাসিক এলাকায় থেকে শহীদ মিনারের অসংখ্য ঘটনা আমি দেখেছি। স্বাধীনতার পর কয়েক বছর ‘ডাকসু’র ট্রেজারার রূপেও অনেক নাটকীয় ঘটনা দেখার সুযােগ আমার হয়েছে। সুতরাং আমি হয়তাে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ব্যক্তিগত স্মৃতিকথা লিখতে পারতাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশি বছরের ইতিহাস রচনার চেষ্টাও হয়তাে করতে পারতাম কিন্তু ঐ দুটি পথের কোনটিতেই না গিয়ে আমি একরকম ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশি বছরের কিছু কথা লিপিবদ্ধ করার চেষ্টা করেছি। তবে শুধুমাত্র আমার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা বা স্মৃতির ওপর নির্ভর করে নয় কারণ স্মৃতি অনেক সময় মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশি বছর’ গ্রন্থ রচনায় যা বেরিয়ে এসেছে তাতে হয়তাে প্রাধান্য পেয়েছে কি প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে এই মহান বিদ্যাপীঠ বিশ শতকের আটটি দশক পেরিয়ে একুশ শতকে প্রবেশ করছে সেই কাহিনী।
শহীদ পরিবারের সন্তান লেখক রফিকুল ইসলাম । 1966 সনের 1 ফেব্রুয়ারি নেত্রকোণা জেলার দুর্গাপুরের নওয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । শৈশবে 1971 সনের মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর একমাত্র চাচা শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক আরজ আলী বীরোচিতভাবে শহীদ হন, যিনি ছিলেন নিজ পরিবার এবং এলাকাবাসীর স্বপ্ন । অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট হতে দেখেন তাদেঁর বাড়িঘর। তাঁর পারিবারিক এই ট্রাজেডি/বিয়োগ-ব্যাথা নিয়ে রচিত হতে দেখেন বাউলগান ও গীতিকবিতা। তখন থেকেই উপলব্ধি করতে শেখেন- মুক্তিযুদ্ধে খুবই মর্মন্তুদ ও বীরোচিত এক ঘটনা ঘটে গেছে তাদেঁর পরিবারে, যার উপলব্ধি ও মূল্যায়ন রয়েছে ময়মনসিংহ অঞ্চলের সর্বসাধারণের মধ্যে । তখন থেকেই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হন- বড় হয়ে তিনিও লিখবেন মহান মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বস্তুনিষ্ঠ উপাখ্যান । যার ফলশ্রুতিতেই লেখকের এময়ের সৃষ্টি সাড়াজাগানো মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস 'একাত্তরের বিষাদ সিন্ধু'। তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন- ত্রিশ লক্ষ শহীদ পরিবারে ঘটে যাওয়া কাহিনীগুলো পৃথিবীর সবচেয়ে ট্র্যাজিক সাহিত্যের উপাদান, আর দেশপ্রেমিক প্রতিটি শহীদ এ জাতির শ্রেষ্ঠ বীর । এ উপন্যাসটি লেখকের প্রথম গ্রন্থ হলেও লেখালেখির জগতে তিনি নতুন নন। কৈশোর কাল থেকেই তিনি ছড়া ও কবিতা লিখতেন দেশ-বিদেশের রেডিওর সাহিত্য আসরে, শিশু পত্রিকায়, সাপ্তাহিক বিচিত্রায় এবং লিটল ম্যাগাজিনে। অধ্যাপনা পেশায় থেকেও তিনি দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক জনকণ্ঠ ও বিভিন্ন অনলাইন মিডিয়ায় মুক্তিযুদ্ধ, অর্থনীতি, পরিবেশ-প্রতিবেশ, সমাজ ভাবনা ও ভ্রমণ বিষয়ে দীর্ঘদিন যাবত কলাম/নিবন্ধ লেখক । গদ্য সাহিত্যে তাঁর লেখার সাবলীলতা ও স্বকীয় ছন্দময়তা পাঠককে মোহাবিষ্ঠ করে তুলে । এটি তাঁর লেখার অন্যতম বৈশিষ্ট্য ও আকর্ষণ। যা প্রতিফলিত হয়েছে তাঁর মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক উপন্যাস 'একাত্তরের বিষাদ সিন্ধু'র শুরু থেকে শেষ পর্যন্তও । আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস- এ লেখকের লেখা সর্বদাই পাঠকদের কাছে সমাদৃত হবে ।