ইতিহাস কথা বলে। যথার্থই বলে। আর সেই ইতিহাস যদি হয় মহাসত্যের সম্মানের ন্যায়ের সাহসের সংগ্রামের বিপ্লবের সার্বজনিক কল্যাণ ও মানবিকতা প্রতিষ্ঠার স্বার্থে, তাহলে সে আরও স্বতঃস্ফূর্ত বেগবান ও দুর্দমনীয় শক্তি নিয়ে কথা বলবে। কারণ ইতিহাসের একটি নিজস্ব ঘূর্ণি আছে। ইতিহাসের নিজস্ব একটি মহাপ্লাবন আছে। ইতিহাসের নিজস্ব একটি মহাসঞ্চয় বা মহাযাত্রা আছে। যেখানে সে নিরাপস। যেখানে সে নির্লোভ। যেখানে কখনো কখনো সে নির্মম ও নৃশংসও। যেখানে সে তরতাজা খুনের অথই দরিয়ার মাঝেও থাকে অবিচল ও দুর্লঙ্ঘ দুর্মর। প্রকৃত ইতিহাস এমনই মহাশক্তিধর এক অপ্রতিরোধ্য অভিশুদ্ধি বটে। বিশাল হিন্দুস্তানের বিপুল সময়কালের বিরাট জনগোষ্ঠীর দুর্দণ্ড প্রতাপশালী মহাসম্মানিত মুসলিম মোঘল শাসকদের রাজসিক শাসনব্যবস্থার সামগ্রিক পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায় উপর্যুক্ত কথাকটি আমাদের মানসপটে ভেসে ওঠে। মোঘলদের বর্ণাঢ্য শাসনব্যবস্থাই মোঘলদের যুগপৎ অমিত শক্তি ও নিঃসীম অপসৃতি। যে ঐশী শক্তিমত্তা তাদের ঈমানি পথচলাকে সুগম করেছির, সেই মানবিক অবিমৃষ্য দৌর্বল্যই তাদের হৃদয়াত্মাকে চুরমার করে দিয়েছিল। যে পবিত্র সারবান প্রত্যাদেশনা ও নীতি-নৈর্ব্যক্তিকতা মোঘল সিংহাসনকে দৃঢ়মূল করেছিল, সেই হৃদয়ার্পিত নিরঙ্কুশ উদার অভিপ্রায়ই তাদের সাম্রাজ্যের ভিতকে নিঃশেষ করে দিয়েছিল। মোঘল সাম্রাজ্যের দিগ্বিজয়ী ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী শক্তিমত্তার মর্মস্পর্শী রাজকাহিনি এ গ্রন্থের পরতে পরতে ঠাঁই পেয়েছে—যেখানে পাঠক মাত্রই হেসে উঠবেন তাদের দুর্নিবার সাহসে-শাসনে ও সম্মানে। আবার কেঁদে উঠবেন মর্মন্তুদ বেদনাবিধুর অবসানে। প্রিয় পাঠক, এখানেই এই গ্রন্থের আশ্চর্য ও অলৌকিক সম্মোহনী!