বাংলাদেশের সামাজিক অগ্রগতির অন্তর্নিহিত সূত্রগুলো উন্মোচনের এবং এদের মধ্যকার আন্তঃসম্পর্ক পাঠকের সামনে তুলে ধরার প্রয়াসে ‘ক্ষুদ্রঋণ, শিক্ষা, বেকারত্ব ও বিসিএস; চলমান ডিসর্কোসের বাইরে বিকল্প প্রস্তাবনা’ বইটি রচনা করার প্রয়াস পেয়েছি। বাংলাদেশের সামাজিক উন্নয়ন, শিক্ষা ও কর্মসংস্থান কাঠামোর বর্তমান বুননের মধ্যে থেকে বইটির আলোচনাকে ক্ষুদ্রঋণ, শিক্ষা, কর্মসংস্থান, বেকারত্ব ও বিসিএস চাকুরির রহস্যময় এবং অন্তর্নিহিত থ্রেডগুলির ভেতর দিয়ে নেভিগেট করিয়েছি। আপাতদৃষ্টিতে পরস্পর বিচ্ছিন্ন হলেও, বাংলাদেশের একটি ভালো আগামীর জন্য এই থ্রেডগুলিকে একত্রিত করেছি। আমাদের সম্মিলিত সামাজিক অগ্রগতির একটি দার্শনিক অন্বেষণে তাড়িত হয়ে এসব খাতের চ্যালেঞ্জগুলো অনুসন্ধান করেছি। এখানে দেশের ক্ষুদ্রঋণের সাথে দারিদ্র্য বিমোচনের, দারিদ্র্যের সাথে শিক্ষার, শিক্ষার সাথে দক্ষতার, দক্ষতার সাথে বেকারত্বের এবং বেকারত্বের সাথে সরকারি চাকুরি তথা বিসিএস পরীক্ষার আন্তঃসম্পর্ক ব্যাখ্যা করেছি। প্রথম অধ্যায়টির নাম দিয়েছি-ক্ষুদ্রঋণ, শিক্ষা এবং দারিদ্র্যর আন্তঃসম্পর্ক। তৃতীয় বিশ্বের বহু দেশে বাংলাদেশের ক্ষুদ্রঋণ সামাজিক উন্নয়নের মডেল হিসেবে স্বীকৃত। এই অধ্যায়ে আমি ক্ষুদ্রঋণের মাঠের বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে এর চ্যালেঞ্জগুলো বিস্তারিত আলোচনা করেছি, ডিজিটাল রূপান্তরেরকালে ক্ষুদ্রঋণের সংস্কার নিয়ে কথা বলেছি এবং সাথে সাথে ক্ষুদ্রঋণের পরিচালনা খরচ ও সুদ কমানোর গ্রাহকবান্ধব সমাধান খোঁজার চেষ্টা করেছি, কিছু সমাধান বাতলে দিয়েছি। এরপরে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক বাস্তবতার একটা চিত্র এঁকেছি মাদ্রাসার ভাইরাল শিশু রিফাতকে উপলক্ষ্য করে। পরবর্তীতে বিদেশে নারী শ্রম বিক্রি, নারী শ্রমের উপর জলবায়ুর প্রভাবের বিষয়টি সামান্য করে টাচ করেছি। এরপরে দারিদ্র্য বিমোচনে শিক্ষার বিনিয়োগ নিয়ে আলাপ তুলেছি, শিক্ষকদের পদ শূন্যতাকে প্রশ্ন করেছি। বাংলাদেশের স্কুল শিক্ষার কারিকুলাম নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিষয় এনে স্কুল শিক্ষা বেসরকারিকরণের প্লট ও প্রেক্ষাপট আলোচনা করেছি। আলোচনা করেছি দারিদ্র্য বিমোচনে কওমি শিক্ষার প্রভাব নিয়ে। এখানে মাদ্রাসা শিক্ষার কারিগরি রুপান্তর নিয়ে কথা বলেছি। সবমিলে, প্রথম অধ্যায়ে কেন্দ্রীয় চেষ্টা হচ্ছে-ক্ষুদ্রঋণের সাফল্য, আগামী দিনের হুমকি এবং ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের রূপান্তরমূলক প্রভাবগুলো অন্বেষণ করা। বাংলাদেশে টেকসই্উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি যে এখনও ‘শিক্ষা বিনিয়োগ’ হয়ে ওঠেনি সেটাকে আমি প্রশ্নবিদ্ধ করেছি।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব, প্রকৌশলী ও প্রযুক্তিবিদ, ১৯৮০ সালে কুমিল্লা জেলার লাকসাম (মনোহরগঞ্জ) উপজেলার খিলা ইউনিয়নের বান্দুয়াইন গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। ইলেক্ট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং এ স্নাতক। তিনি ১৯৯৭ সালে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও ১৯৯৯ সালে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। ২০০৫ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল-এ স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০৫ থেকে ২০০৭ সময়কালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমবিএ অধ্যয়ন করেন। ২০০৫ থেকে অদ্যাবধি টেলি যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ হিসবে বাংলাদেশ ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মরত রয়েছেন। বর্তমানে তিনি সিনিয়র সফটওয়্যার সল্যুশন আর্কিটেক্ট হিসেবে ‘ভোডাফোন জিজ্ঞো’ নেদারল্যান্ডস-এ কর্মরত আছেন। ইতিপূর্বে তিনি এলকাটেল লুসেন্ট বাংলাদেশ, টেলিকম মালয়েশিয়া বাংলাদেশ একটেল (বর্তমান রবি), এমটিএন কমিউনিকেশনস নাইজেরিয়া, এরিকসন নাইজেরিয়া, এরিকসন ঘানা, এরিকসন দক্ষিণ কোরিয়া, এরিকসন নেদারল্যান্ডস এ কাজ করেছেন। পেশাগত জীবনে তিনি দ্বিতীয় তৃতীয় চতুর্থ এবং পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল কমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক ডিজাইন ও বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন। জনাব ফয়েজ তৈয়্যব একজন ‘টেকসই উন্নয়ন ও অবকাঠামো’ বিষয়ক প্রবন্ধকার। টেকসই উন্নয়নের নিরিখে বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরের কাঠামোগত সংস্কার, সুশাসন, প্রতিষ্ঠানিক শুদ্ধিকরন এবং প্রযুক্তির কার্যকরীতার সাথে স্থানীয় জ্ঞানের সমন্বয় ঘটিয়ে বাংলাদেশের ছোট বড় সমস্যা সমাধানের পর্যালোচনা করে থাকেন। তিনি তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা এবং পেশাদারিত্বের মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার আলোকে দেশের আর্থ সামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে চান। তাই এসকল বিষয়ে তাঁর নিজস্ব মুক্ত চিন্তা স্বাধীন ভাবে প্রকাশের প্রয়াস করেন। তাঁর লিখায় যা বিশেষ ভাবে গুরুত্ব পায়ঃ সাস্টেইনএবল ডেভেলপমেন্ট এর নিরিখে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন পদ্ধতিগত দিক, বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রকল্পের ডিজাইন ত্রুটি, অর্থনীতি শিক্ষা স্বাস্থ্য ও কৃষি ইত্যাদি খাতের কারিগরি ব্যবস্থাপনা ও অবকাঠামোগত সংস্কার, জলবায়ু পরিবর্তনের কারিগরি প্রস্তুতি, ম্যাক্রো ও মাইক্রো ইকোনমিক ম্যানেজমেন্টের কারিগরি দিক এবং অটোমেশন। সামাজিক সংযোগের দিক থেকে উনি একজন টেকসই উন্নয়ন কর্মী, ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিস্ট। গ্রীণপিস নেদারল্যান্ডস এর সদস্য। দৈনিক বণিকবার্তা, দৈনিক শেয়ারবিজ ও দৈনিক প্রথম আলো অনলাইনের উপসম্পাদকীয় কলাম লেখক।