মানুষকে দেশ থেকে দেশান্তরে নিয়ে যায় ভ্রমণপিপাসু মন। কেউ দেখেন মুগ্ধ দৃষ্টিতে, ডোবেন ভাবনার অতলে। নেন ভিনদেশি ব্যঞ্জনের স্বাদ, মাতেন শখের কেনাকাটায়। কাফি কামাল চোখ দিয়েই কর্ষণ করতে চান প্রকৃতি, স্থাপত্যকলা আর মনুষ্যস্বভাব। কেবল নিজে দেখেন না, দেখান অন্যদেরও। তাঁর চিত্ররূপময় বর্ণনায় বাঙ্ময় হয়ে ওঠে বাগান, মান্দালয়, পিন উ লউইন, রেঙ্গুনের ইতিহাস—ঐতিহ্য আর প্রাকৃতিক নৈসর্গ। ইরাবতীর কূল থেকে হাজার মন্দিরের বাগান, মান্দালয় পাহাড়ের চূড়া থেকে পিন উ লউইনের লীলাময় নিসর্গ, রেঙ্গুনের শোয়েডাগন প্যাগোড়া থেকে বাহাদুর শাহ জাফরের কবর নানা আকর্ষণীয় স্থান ঘুরে দেখতে দেখতে পাঠকদেরও অবলীলায় করে নেন ছায়াসঙ্গী। কবিতার উদ্ধৃতি, গল্পগাঁথা ও হাস্যকৌতুকে চারিয়ে দেন ঐতিহ্যের গভীর শেকড়ে। নানা ঘটনা ও তথ্যে পাঠকদের ইতিহাসের বর্ণিল অলিগলিতে ছুটিয়ে নেন। ঘুরিয়ে আনেন এক মায়াময় স্বপ্নাচ্ছন্নতায়। কাফি কামাল তাঁর লেখায় ফুটিয়ে তুলেছেন বর্ণিল প্রকৃতি ও স্থাপনার সৌন্দর্য, ব্যঞ্জনের স্বাদ, নানা শ্রেণি—পেশা—বর্ণের মানুষের আচার—আচরণ আর চলতি পথের খুঁটিনাটি। তাঁর ভ্রমণবর্ণনায় নেইপিডোর সেলসগার্লের জবান, বাগানের প্যাগোড়া সংক্রান্ত মিথ, মেহিকান তরুণীদের কলকাকলী, মাইনকাবা গ্রামের শ্রমজীবী পরিবার, বুড়ো ডাক্তারের নীরব চাহনি, মান্দালয় হিলের চূঁড়া থেকে অর্ধচন্দ্রাকৃতির কারাগার, মুখে তানাক্কার নকশা আঁকা মেয়ে, রেঙ্গুন ফেরিঘাটে বৃষ্টি, সন্ধ্যাকালীন বাহারি স্ট্রিট ফুড, শোয়েডাগনে তরুণ চিত্রশিল্পীর দল, বাহাদুর শাহ জাফরের সমাধিস্থলের নির্জনতা ও যুবকদের পায়ে সিনলুনশৈলী সবকিছু এবং সকলে সমান রঙিন।