ভাষা লোকের মুখ থেকে কলমের মুখে আসে, উল্টাটা করতে গেলে মুখে খালি কালি পড়ে- এই রকম বলছিলেন প্রমথ চৌধুরী। অথচ আমাদের লেখায় এমন এক বাংলা ভাষা রাজত্ব করে যেইটা লোকেরে কায়দাকানুন করে বহুত মেহনতের ভিতর দিয়া শিখা লাগে। এইটারে মান বা প্রমিত বাংলা কিংবা শুদ্ধ ভাষা বলে। যেন আর সবই অশুদ্ধ! কিন্তু, বাস্তবতা হইলো দেশের যেই সব জায়গার ঢাকার মতন একটা কসমোপলিটান রাজধানীর চরিত্র আছে, মানে যেইখানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের অনেক লোকজন নিয়মিত আসে, একটা মোটামুটি লম্বা সময় বসবাস করে, যেমন- বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, সেনানিবাস, কলোনি, মিল-কারখানা- এইসব ঘেট্টো ধরনের মানে অনেক লোক একত্রে থাকে, এলাকার মানুষ একধরনের ভাষা বা বুলি লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কার মতন ব্যবহার করে। আগে প্রচারের অভাবে কেবল ঘেট্টোগুলাতেই এইটা সীমাবদ্ধ থাকলেও টিভি-সিনামায়, পরে এফএম রেডিও, ইউটিউব, ফেসবুকের ভিতর দিয়া এই জিনিস যখন সারা দেশেই ছড়ায় পড়ে, তখন বিশুদ্ধতাবাদীদের ল্যাং মেরেই আমজনতা এই ভাষা গ্রহণ করছে। এই ভাষা এখন সকলেই বুঝে, ব্যবহারও করে। আগে শুদ্ধ উচ্চারণ আর বাচনভঙ্গিতে কইতে না পারার লজ্জা থেকেই লোকে মনের কথা বলতে ভয় পাইতো, মুখও খুলতো কালেভদ্রে, সাবধানে। কিছু কইলেই সারস্বত সমাজে 'খ্যাত' বলে নাক সিঁটকানির কবলে পড়া একদম নিশ্চিত ছিলো। বলা যায়, এই ভাষা আমজনতার জবানের মুক্তি দিছে। এই মুক্তির ভাষাতেই এই লেখা এই গ্রন্থ। বিষয় হইল- রাষ্ট্র, তার আচার-ব্যবহার, চরিত্র, কাঠামো, এই সব।