স্বপ্ন নয়—শান্তি নয়—ভালোবাসা নয়, হৃদয়ের মাঝে এক বোধ জন্ম লয়; -জীবনানন্দ দাশ পৃথিবীতে নাকি একজন মানুষ সব থেকে বেশি অসহায় হয়ে পড়ে, তার বোধের সঠিক প্রকাশ করতে না পেরে। একটু খেয়াল করলেই দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি মানুষ তার বাস্তব জগতের সমান্তরালে একটি কল্পনার জগতে বিচরণ করে। বাস্তব জগতের বিচরণে নানা প্রতিবন্ধকতা কিংবা সামাজিক ও পারিবারিক সীমাবদ্ধতা, মানুষের নানারকম বোধ, শখ কিংবা ভাবনার সহজাত গতিকে রোধ করে। এমনসব মুহূর্তে, মানুষটি তার শখ এবং ইচ্ছাগুলোকে কল্পনার জগতে সাজিয়ে নিয়ে যদি বাস্তব জীবন আর কল্পনার জীবনে সমান্তরালভাবে চলতে পারে তবে ভিন্ন একটি মিশ্রবোধের জগতে বিচরণ করা সম্ভব হয়। সেই জগতে মানুষটি অনায়াসেই নিজের খেয়াল খুশিমতো চলতে পারে। বিচরণ করতে পারে নিজস্ব বোধের গভীর থেকে গভীরতর পর্যায়ে। বোধের গভীরে লুকিয়ে রাখা অনুভূতি ও মুহূর্তগুলোকে লেখার মাধ্যমে গল্প কিংবা ঘটনার আকারে প্রকাশ করে ফেলতে পারলেই, মনের ভিতরের সুপ্ত বোধের পাখি ডানা মেলে। আর ফিনিক্স পাখির মতোই তখন, একজন সাধারণ মানুষ থেকে একজন লেখকের উত্থান ঘটে। পার্থিব এই জগতে শত কোটি মানুষের ভিড়েও, প্রায় প্রতিটি মানুষ জীবনের কোনো না কোনো সময় নিঃসঙ্গতায় ভোগেন। অধিকাংশ মানুষই তার নিজস্ববোধ সঠিকভাবে প্রকাশ করে, অন্যজনের সঙ্গে আলাপ জমাতে পারে না। ভিন্ন ভিন্ন মানুষের বোধের তারতম্য, তাদের নিজস্ব নিঃসঙ্গতার অভ্যন্তরে তৈরি করে নানা অব্যক্ত আলাপন। সেই সব আলাপন যখন মানুষটি মুখে বলতে না পেরে, নানা গল্প/ঘটনায় কিছু পজিটিভ/নেগেটিভ চরিত্র এবং নিজস্ববোধের নানারকম ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করে, লেখার মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করে তখন সেই চেষ্টা থেকেই তৈরি হয় আশ্চর্য সব গল্প। নিজস্ববোধের এমন গল্প লিখতে লিখতেই, একজন সাধারণ মানুষ হয়ে ওঠেন লেখক। কিংবা বলা যেতে পারে নিজস্ববোধের প্রকাশক। আধুনিক এই পৃথিবীতে মুখবই-এর দরুন, যাবতীয় সকল বোধ প্রকাশ করা কিংবা লেখা খানিকটা সহজ ও সাবলীল এক বিষয়। তবুও ছাপার সাদা কালো অক্ষরে প্রিয় লেখা পড়তে পারার একান্ত ইচ্ছা, সবসময়ই লুকানো থাকে প্রায় প্রত্যেক লেখকের মনে। সেই ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষাকে সাধুবাদ জানিয়ে লেখকদের অনুপ্রাণিত করাই পেন্সিল সংকলনের মূল উদ্দেশ্য। সেই উদ্দেশ্য ধরেই প্রতিবছর অমর একুশে বইমেলায়, পেন্সিলরদের অংশগ্রহণে অসংখ্য লেখা যাচাই-বাছাইয়ের মধ্য দিয়ে, নতুন পুরাতন লেখকদের লেখা ছাপার অক্ষরে একসঙ্গে এক মলাটে বন্দি করে চলেছে পেন্সিল। আধুনিক পৃথিবীর কল্যাণে ভিডিয়ো কলে যেমন সবাই সবার কাছাকাছি থাকতে পারে, ঠিক তেমন পেন্সিল সংকলনেও একত্রে পাওয়া যাবে দেশি-প্রবাসী, নতুন-পুরাতন লেখকদের নানারকম লেখা। এক মলাটের ভেতর পাঠক পেয়ে যাবেন বিভিন্ন লেখকের গল্প, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনি এবং কবিতা। আমরা সবসময়ই বলি পেন্সিল একটি পরিবার এবং পেন্সিল শুধু একজন পেন্সিলরেরই নয় বরং একটি পুরো পরিবারের শিল্প প্রকাশের প্ল্যাটফর্ম। শুধু একজন পেন্সিলরই নয়, তার পরিবারের সব বয়সি সদস্যই যেমন পেন্সিল ফেসবুক গ্রুপের লেখায়, গাওয়ায়, আঁকায় এবং পেন্সিল আয়োজিত সকল অনুষ্ঠানে অংশ নেয় তেমনি পেন্সিল প্রকাশিত সংকলনও তুলে নেয় সব বয়সি পেন্সিলর। তাই সংকলনের লেখা বাছাইয়ে প্রাধান্য দেওয়া হয়ে থাকে সহজবোধ্যতা এবং সর্বজনগ্রাহ্যতা। পেন্সিল গ্রুপ গড়ে ওঠার পর থেকে পেন্সিলরদের ভালোবাসা একাগ্রতা এবং সকল উৎসবে তাদের অংশগ্রহণ ব্যতীত প্রায় সাড়ে চার লক্ষ পেন্সিলরদের এই পেন্সিল গ্রুপ এতটা সচল রাখা সম্ভব হতো না। এই পেন্সিলরদের ভালোবাসা, একাগ্রতা, আগ্রহ পেন্সিলের এগিয়ে যাওয়ার পাথেয়। তাই এবারের পেন্সিল সংকলন ২০২৪ উৎসর্গ করা হলো পেন্সিলরদের। পৃথিবী হয়ে উঠুক কল্পনা আর স্বপ্নের থেকেও সুন্দর। সহজ হোক বাস্তব জীবনের উত্থান পতন এবং নিরবচ্ছিন্ন হোক কল্পনার রাজ্যে বিচরণ। সকল নেতিবাচক ভাবনার অবসান হোক। বোধের বিকাশ ও প্রসারে ভালো থাকুক সকলে, ভালো থাকুক আমাদের প্রাত্যহিক ভুবন। এই প্রত্যাশা নিয়ে প্রকাশিত হলো ‘পেন্সিল সংকলন ২০২৪’। ধন্যবাদান্তে পেন্সিল সংকলন কমিটি