যদি প্রশ্ন করা হয় সায়েন্স ফিকশন বা বিজ্ঞান কল্পকাহিনী কী? তাঁর উত্তর কিন্তু এক কোথায় দেয়া যায় না। সায়েন্স ফিকশনের সঠিক সংজ্ঞাটি লেখক, সমালোচক, পণ্ডিত এবং পাঠকদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্কিত। যদিও বলা হয় অনুমানমূলক কল্পকাহিনীর একটি ধারা, যা সাধারণত উন্নত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, মহাকাশ অনুসন্ধান, সময় ভ্রমণ, সমান্তরাল মহাবিশ্ব এবং বহির্জাগতিক জীবনের মতো কল্পনাপ্রসূত এবং ভবিষ্যত ধারণা নিয়ে কাজ করে। এটি ফ্যান্টাসি, হরর এবং সুপারহিরো কল্পকাহিনীর সাথে সম্পর্কিত এবং এতে অনেকগুলি উপধারা রয়েছে। বিশ্বখ্যাত সায়েন্স ফিকশন লেখক আইজ্যাক আসিমভের মতে, "সায়েন্স ফিকশনকে সাহিত্যের সেই শাখা হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে যা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পরিবর্তনের সাথে মানুষের প্রতিক্রিয়া নিয়ে কাজ করে। রবার্ট এ. হেইনলেইন লিখেছেন যে ““প্রায় সব কল্পবিজ্ঞানের একটি সহজ সংক্ষিপ্ত সংজ্ঞা হতে পারে: সম্ভাব্য ভবিষ্যতের ঘটনা সম্পর্কে বাস্তববাদী অনুমান, বাস্তব জগৎ, অতীত এবং বর্তমানের পর্যাপ্ত জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে এবং প্রকৃতি এবং তাৎপর্যের পুঙ্খানুপুঙ্খ বোঝার উপর ভিত্তি করে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির লেখাই সায়েন্স ফিকশন। বাংলা ভাষাভাষীদের মধ্যে সায়েন্স ফিকশন এক সময় শুধুমাত্র শিশু সাহিত্য হিসাবয়ে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু বর্তমান বিশ্বে সায়েন্স ফিকশন একটি অতি জনপ্রিয় সাহিত্য ধারাই শুধু না, সায়েন্স ফিকশন লিখে নোবেল পুরস্কার লাভ করেছেন বৃটিশ লেখক ডড়িস লেসিং। আমি ব্যক্তিগতভাবে সায়েন্স ফিকশন কে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিরিয়াস সাহিত্যধারা মনে করি। সাহিত্যে মৌলিকত্ব বলে কিছু আছে কী না তা নিয়ে প্রশ্ন করা যেতেই পারে। তবু একজন চিকিৎসা বিজ্ঞানী ও চিকিৎসা শাস্ত্রের মানুষ হয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানের নানান রকমের অবিস্কার, ভবিষ্যৎ চিন্তা ইত্যাদি মৌলিক গল্প হয়ে উঠেছে আমার লেখার মূল বিষয়। প্রথম সায়েন্স ফিকশন “আয়ুষ্কাল ও ত্রিমিলার প্রেম” লিখেছিলাম মানুষের বৃদ্ধ হওয়ার মেডিক্যাল দিক নিয়ে। সেখানে “টেলিমেয়ার’ ধারণাটি ব্যবহার করি যার আবিষ্কারক হিসাবে ঠিক পরের বছর নোবেল পুরস্কার পান ডক্টর এলিযাবেথ ব্ল্যাকবার্ন এবং সে বছর আমেরিকান এসোশিয়েশন ফর ক্যান্সার রিসার্চ থেকে “এমএসআই ফ্যাকাল্টি স্কলার এওয়ার্ড” ডক্টর এলিযাবেথ ব্ল্যাকবার্নের হাতে থেকে নিয়েছিলাম এক সম্মেলনে, যেখানে তিনি পৃথিবীর কয়েক হাজার বিজ্ঞানীর সামনে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের মানুষ সাহিত্য পাঠের সঙ্গে বিজ্ঞান মনস্ক হয়ে উঠুক। সেবচনের মাধ্যমে লিখেছিলাম “বিজ্ঞানমনস্কতা একটি দর্শন, একটি প্রসেস। ডাক্তারি, ইঞ্জিনীয়ারিং বা অন্য বিজ্ঞান বিষয়ে পড়ে, এমন কি একটি পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেও তা তৈরি হয় না। বিজ্ঞানমনস্ক হওয়া এক ধরনের সাধনা, পুরনোকে ঝেড়ে ফেলে কঠিন, কঠোর সত্যকে গ্রহণ করার সাধনা। বিজ্ঞানমনস্কতা ছাড়া মানব সমাজের মুক্তি নেই।“ আমার এই প্রবচনটি গুরুত্বপূর্ণ এজন্যে যে মানব মুক্তি বলতে শুধু অর্থনৈতিক মুক্তিই না, চিন্তার স্বাধীনতা, মানুষের কল্যাণ, সমাজের উত্তিরণ সমস্ত কিছু বুঝায়। সায়েন্স ফিকশনের সম্ভাবনাময় কাহিনি ও সাহিত্য রসের মধ্য দিয়ে সেই বিজ্ঞানমনস্কতা তৈরি হলেই এই লেখাগুলো সার্থক হবে।
সেজান মাহমুদ, পেশাগত নাম সালেহ মো. মাহমুদুর রহমান। ঢাকা থেকে এম.বি.বি.এস পাশ করার পর আমেরিকার বিশ্বখ্যাত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এন্ডোক্রাইনোলজিতে ফেলোশিপ, জনস্বাস্থ্যে এম.পি.এইচ এবং বার্মিংহাম থেকে জনস্বাস্থ্যের ওপরে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। সাহিত্যে তাঁর বিচরণ বহুবিধ ক্ষেত্রে। তাঁর নিরীক্ষাধর্মী উপন্যাস ‘অগ্নিবালক’ (২০০৯) প্রকাশিত হলে সৃজনশীল ও মননশীল লেখক মহলে নতুনধারার লেখা হিশেবে প্রশংসিত হয়। তার লেখা বাংলাদেশ টেক্সট বুক বোর্ড কর্তৃক ষষ্ঠ শ্রেণির জাতীয় পাঠ্য বইতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে বাংলা সাহিত্যের দিকপালদের পাশাপাশি (১৯৯৬)। মুক্তিযুদ্ধে নৌ-কমান্ডোদের গৌরবজনক ভূমিকার অকথিত সত্যি ঘটনা নিয়ে তাঁর লেখা ‘আপারেশন জ্যাকপট’ ১৯৯১ সালে প্রকাশিত হলে সুধীমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়। বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বেতারের গীতিকার হিসেবে লিখেছেন অনেক জনপ্রিয় গান। প্রকাশিত গ্রন্থ: অগ্নিবালক (উপন্যাস), হারাম ও অন্যান্য গল্প (গল্পগ্রন্থ), হার্ভার্ডের স্মৃতি ও অন্য এক আমেরিকা (স্মৃতিকথা), পথ হারানোর পথ (কলামসমগ্র-১); মুক্তিযুদ্ধের কিশোর রচনাসমগ্র-১, বিজ্ঞান নির্ভর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র-১, প্রোজেক্ট ভূতং আধুনিকং (গল্পগ্রন্থ), হাবিজাবি (ছড়া), তুষারমানব, দ্বীপ পাহাড়ে আতঙ্ক, বিশ্বের শ্রেষ্ঠ দশ অভিযাত্রী, কিশোর রহস্য গল্প, পালটে শুধু লেবাস, ও ছড়ায় ছড়ায় সায়েন্স ফিকশন। পুরস্কার: বাংলাদেশ শিশু একাডেমি কর্তৃক প্রদত্ত অগ্রণী ব্যাংক শিশু সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৮)। আমেরিকান এসোসিয়েশন ফর ক্যান্সার রিসার্চ ফ্যাকাল্টি স্কলার এওয়ার্ড (২০০৮, ২০১০), আমেরিকান পাবলিক হেলথ এসোসিয়েশন ‘আরলি ক্যারিয়ার এওয়ার্ড (২০০৬), আওয়ার প্রাইড এওয়ার্ড (২০০৫), অ্যালাবামা পাওয়ার ফাউন্ডেশন আউটস্ট্যান্ডিং অ্যাচিভমেন্ট এওয়ার্ড (২০০০), ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশন ফেলোশিপ এওয়ার্ড (১৯৯৬)। বর্তমানে আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অব সেন্ট্রাল ফ্লোরিডা কলেজ অব মেডিসিনে সহকারী ডিন এবং মেডিক্যাল এডুকেশনের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। স্ত্রী চিকিৎসক ও অভিনয়শিল্পী তৃষ্ণা মাহমুদ, পুত্রদ্বয়- তিশিয়ান মাহমুদ এবং রেনোয়া মাহমুদকে নিয়ে বাস করছেন আমেরিকার ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যে।