বইটি লেখকের আত্মজীবনী নয়। তবে তাঁর সময়ে চারপাশের মানুষের যাপিত জীবন, সংস্কৃতি এবং প্রকৃতির রূপকে নিপুণভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। বইয়ের ভাষা সরল ও সুখপাঠ্য। ভৌগোলিক অবস্থানের দিক থেকে যশোর-খুলনা অঞ্চল বাংলাদেশের অনেক ঘটনাবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস-ঐতিহ্যের পরিচয়ের ধারক। বইটিতে এ-অঞ্চলের জনজীবনের প্রবাহমানতা, দেশভাগ, মুক্তিযুদ্ধ, বদলে যাওয়া অর্থনীতি ও রাজনীতি, দুর্ভিক্ষ, দৃশ্যমান সামাজিক উন্নয়ন সত্ত্বেও অবক্ষয়, জনসমাজে প্রতিষ্ঠিত দেশাত্মবোধ- এমন সব বিষয় ঠাঁই করে নিয়েছে। লেখকের দৃষ্টিতে স্পষ্ট, দৃঢ় ও নৈর্ব্যক্তিক এক সময়ের দারুণ পর্যবেক্ষণ উঠে এসেছে বইটিতে। এতে খুঁজে পাওয়া যাবে তাঁর যাপিত জীবনের উপলব্ধি, সংগ্রাম, অন্তর্দৃষ্টির এমন এক ইতিহাস, যাতে বিলুপ্ত সামাজিক উপাত্তও স্থান পেয়েছে। গত শতকের পঞ্চাশের দশক থেকে একুশ শতকের শুরু পর্যন্ত পেশাদার গবেষণার বাইরে এই ধরনের প্রামাণ্যকথন রচনায় খুব একটা উৎসাহ দেখা যায় না। অঞ্চলবিশেষের গণ্ডি পেরিয়ে এ বই বৃহত্তর সমাজের সম্পদ হয়ে উঠবে। ‘সহজ কথা সহজে বলা’ খুব কঠিন হলেও লেখক খুব সহজে তুলে ধরেছেন তাঁর মাতৃভূমির স্বরূপ; এখানেই বইটির সার্থকতা।