সূচি * ভাষা নিয়ে কথা * পাকিস্তান আমলে বাংলা বনাম উর্দু * মার্চের আন্দোল * জিন্নাহ সাহেবের ঢাকা সফর * নতুন করে উর্দু নিয়ে মাতম * পঞ্চাশ থেকে বায়ান্ন * একুশের প্রস্তুতিপর্ব * আন্দোলন বানচাল করতে ৪৪-ধারা জারি * আমতলায় ছাত্রসভা * আমতলা থেকে মেডিকেল ব্যারাকে * গুলিবর্ষণের প্রতিক্রিয়া * বাইশে ফেব্রুয়ারিঃ ঢাকা সহ সারাদেশ উত্তাল * শহীদ মিনারঃ জাতীয় চেতনার প্রতীক * শহীদ মিনারঃ স্মৃতির মিনার * শহীদ মিনার ও অব্যাহত আন্দোলন * সরকারি দমননীতি ও ছাত্রজনতার ভুমিকা * নারায়ণগঞ্জ ও অন্যত্র ভাষা-আন্দোলন * নবগঠিত সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ * বায়ান্নর পর একুশে পালন * একুশের উত্তর-প্রভাব * যুক্তফ্রন্টঃ একুশ দফার জয় * মন্ত্রীসভা বাতিলঃ গভর্নরের শাসন জারি * আপোষরফায় নয়া সরকারঃ একুশে পালন * বাংলাভাষার আনুষ্ঠানিক বিজয় * একুশের চেতনা, তার পথরেখা ধরে * একুশের কিছু মূল দাবি এখনো পূরণের অপেক্ষায়
একটি আহ্বান আটচল্লিশ থেকে বাহান্নর তরুণ প্রজন্ম বিশেষত ছাত্রসমাজ মাতৃভাষা বাংলার অধিকার সম্বন্ধে সচেতন হয়ে ওঠে, দাবি জানায় রাষ্ট্রভাষা বাংলার। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী সব। তারা বুঝতে পারে দেশের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা বাংলা না হলে বাঙালি জাতির উন্নতির সম্ভাবনা নেই। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী সে দাবি মানতে নারাজ। তাই তাদের আন্দোলনে নামতে হয়। সে আন্দোলনে যোগ দেয় ছাত্র নয় এমন সব তরুণও, সবকিছু দেখে এগিয়ে আসে সাধারণ মানুষ। আন্দোলন এভাবেই জমজমাট হয়ে ওঠে। পুলিশের গুলিতে রক্ত ঝরে, শহীদ হন অনেকে। ঐ আন্দোলনের জেরে ১৯৫৬ সালে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকে মেনে নেয় পাকিস্তান সরকার। এই ভাষা আন্দোলনের জের ধরে গণআন্দোলন শুরু, শেষ পর্যন্ত একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং স্বাধীন বাংলাদেশ। রাষ্ট্রভাষা বাংলা হওয়া সত্ত্বেও শিক্ষার সর্বস্তরে বাংলা চালু হয়নি, বিশেষ করে উচ্চশিক্ষা ও বিজ্ঞানশিক্ষায় এবং উচ্চ আদালতে। ভাষা আন্দোলনের একটি প্রধান দাবি ছিল জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে বাংলা প্রচলন। স্বাধীনতার ৩৮ বছর পরও তা হয়নি। অথচ ভাষা আন্দোলন যা আমরা এককথায় একুশের (১৯৫২) আন্দোলন হিসাবে চিনি তার মূলকথা ছিল জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে মাতৃভাষার ব্যবহার ছাড়া জাতির উন্নতি সম্ভব নয়। আজকে তাই বর্তমান তরুণ প্রজন্মকে ভাষা-আন্দোলনের ইতিহাস, তার ঘটনাবলী জানতে হবে, বুঝতে হবে তখন কেন আন্দোলন হয়েছিল, আন্দোলনের দাবি আজ-তক কতটুকু পূরণ হয়েছে আর কী বাকি আছে যে জন্য দরকার আবার নতুন করে আন্দোলন। আর সে আন্দোলন তো শুরু করতে হবে তখনকার মত আজকের তরুণদের, ছাত্রছাত্রীদের। জড়ো করতে হবে দেশের মানুষজনকে যাতে আন্দোলনের চাপে সরকার বাধ্য হয় একুশের অপূর্ণ দাবি পূরণ করতে। বায়ান্নর আন্দোলনের একজন তরুণ সংগ্রামী জীবনের শেষপ্রান্তে পৌঁছে এ প্রজন্মের তরুণদের আহ্বান জানাচ্ছে অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার জন্য এগিয়ে আসতে। -- আহমদ রফিক
প্রাবন্ধিক, কবি ও কলামিস্ট হিসাবে খ্যাত আহমদ রফিক, (জন্ম ১৯২৯) ছাত্রজীবন থেকেই সাহিত্য-সংস্কৃতি ও রাজনীতির আকর্ষণে সমভাবে আলোড়িত ছিলেন। তিনি বাহান্নার ভাষা-আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক। প্রগতিশীল রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কারণে তার শিক্ষাজীবন বার বার বিপর্যস্ত হয়েছে। পেশাগতভাবে শিল্প ব্যবস্থাপনার সঙ্গে একদা যুক্ত থাকা সত্ত্বেও মননের চর্চাতেই তিনি অধিক সমর্পিত। এখন পুরোপুরি সাহিত্যকর্মে সক্রিয়। একাধিক সাহিত্য ও বিজ্ঞান পত্রিকার বিভিন্ন সামাজিক কর্মযজ্ঞে। রবীন্দ্রচর্চা কেন্দ্র ট্রাস্টের তিনি প্রতিষ্ঠাতা, বাংলা একাডেমীর ফেলো এবং বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির জীবন সদস্য। তাঁর উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে শিল্প সংস্কৃতি জীবন (১৯৫৮), আরেক কালান্তরে (১৯৭৭), বুদ্ধিজীবীর সংস্কৃতি (১৯৮৬), ভাষা আন্দােলন : ইতিহাস ও তাৎপর্য (১৯৯১), রবীন্দ্রনাথের চিত্রশিল্প (১৯৯৬), জাতিসত্তার আত্মঅন্বেষা (১৯৯৭), রবীন্দ্ৰভুবন পতিসর (১৯৯৮) এবং জীবনানন্দ : সময় সমাজ ও প্রেম (১৯৯৯)। নির্বাচিত কলাম (২০০০), বাংলাদেশ : জাতীয়তা ও জাতিরাষ্ট্রের সমস্যা (২০০০), একাত্তরে পাকবর্বরতার সংবাদ ভাষ্য (২০০১), কবিতা আধুনিকতা ও বাংলাদেশের কবিতা (২০০১)। কবিতাগ্রন্থের মধ্যে নির্বাসিত নায়ক (১৯৯৬), বাউল মাটিতে মন (১৯৭০), রক্তের নিসর্গে স্বদেশ (১৯৭৯), বিপ্লব ফেরারী, তবু (১৯৯৮), পড়ন্ত রোদুরে (১৯৯৪), Selected Poems (১৯৯৪), শ্রেষ্ঠ কবিতা (১৯৯৮). ভালোবাসা ভালো নেই (১৯৯৯), নির্বাচিত কবিতা (২০০১) উল্লেখযোগ্য। তিনি ১৯৭৯ সালে বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৯২ সালে অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার, অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার পান। সাহিত্যক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৯৫ সালে রাষ্ট্রীয় পুরস্কার একুশে পদকে ভূষিত হন। কলকাতার টেগোর রিসার্চ ইনস্টিটিউট থেকে পেয়েছেন ‘রবীন্দ্রতত্ত্বাচার্য’ উপাধি ও স্বদেশে রবীন্দ্র পুরস্কার (১৪১৮) । এছাড়া অনেক কাঁটা প্রতিষ্ঠান থেকে সম্মাননা ও স্বর্ণপদক।