মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ভ‚মিকা পুলিশ বাহিনীর ইতিবৃত্ত পুলিশের প্রাগৈতিহাসিক ইতিহাস: ফরাসী বিপ্লবের পর ফ্রান্সের রাজা হেনরি দেশের শাসন কায়েম রাখার জন্য সরকারের অনুগত কয়েকটি বাহিনী প্রতিষ্ঠা করেন। সমাজে বিকৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়াই ছিল এই বাহিনীর প্রধান কাজ। এসব বাহিনীর সদস্যরা সরকারের বিরুদ্ধে যড়যন্ত্রকারীদের ধরে বিচারের মুখোমুখি করতো। এমনই একটি সংস্থার প্রধান ছিল গ্যাবরিয়েল মন্টগোমারি। রাজার স্কটগার্ডের প্রধান মন্টগোমারির অন্যতম প্রধান কাজ ছিল দৃস্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া এবং তা রাজা হেনরিকে নিজে জানানো। রাজা হেনরীর বিরোধী পক্ষ হিসেবে খ্যাত প্রটেস্টান্ট ও ক্যালভিনিস্ট গোষ্ঠীর অভিযোগ ছিল যে, রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের নির্মূল করার জন্যই সরকার এসব বাহিনীর সৃষ্টি করেছিলেন। ঊনবিংশ শতাব্দীতে এসে পশ্চিমা বিশ্বে, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশ বাহিনীর সৃষ্টি হয়। উদ্দেশ্য জনগণের যানমালের নিরাপত্তা দেয়া। বিংশ শতাব্দীতে এসে পুলিশ ব্যবস্থার আমুল পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৮৬২ সালে ইংরেজ শাসনামলে পাকÑভারত উপমহাদেশে পুশিল বাহিনী প্রতিষ্ঠা করা হয়। মধ্যযুগীয় সময়কালে পুলিশ: মধ্যযুগীয় সময়ে পুলিশি কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায় না। তবে ভারত বর্ষের সুলতানী শাসনামলে একটি সরকারি পুলিশি স্তর বিন্যাস লক্ষ্য করা যায়। শহর অঞ্চলে কোতোয়াল পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তা দায়িত্বে ছিলেন। মোঘল আমলের পুলিশি ব্যবস্থা সংক্রান্ত তথ্য আইনÑইÑআকবরী গ্রন্থে পাওয়া যায়। মধ্যযুগের পুলিশি ব্যবস্থা শেরশাহ শুরী দ্বারা প্রবর্তিত হয় যা সম্রাট আকবরের সময়কালে আরও সংগঠিত হয়েছিল। সম্রাট তার ফৌজদারী প্রশাসনিক কাঠামো তিন ভাগে ভাগ করেছিলেন। (১) মীর আদাল অর্থাৎ সম্রাটের প্রধান প্রতিনিধি, (২) কাজী অর্থাৎ প্রধান বিচারক এবং (৩) কোতোয়াল অর্থাৎ বড় বড় শহরের প্রধান পুলিশ কর্মকর্তা। এই কোতয়ালী পুলিশ ব্যবস্থার নামানুসারে বর্তমান রাজধানী ঢাকায় কোতয়ালী থানা আছে এবং দেশের অনেক জেলা শহরের সদর পুলিশ স্টেশনকে ‘কোতয়ালী’ থানা বলা হয়। মোঘল আমল পর্যন্ত যদিও একটি সুকৃঙ্খল পেশাদারী ব্রিটিশ পুলিশ সিস্টেম প্রবর্তিত হয়নি। তবুও সাধারণভাবে, এটি প্রতিষ্ঠিত ছিল মুসলিম শাসকদের রাজত্বের সময়ে। এখানে আইন কৃঙ্খলা এবং অপরাধ প্রতিরোধমূলক প্রশাসন অত্যন্ত কার্যকর ছিল। ‘লন্ডন মেট্রো পুলিশ’ ও ‘নিয়ইয়র্ক সিটি নগর পুলিশ কর্তৃপক্ষ: শিল্প বিপ্লবের কারণে ইংল্যান্ডের সামাজিক ব্যবস্থায় অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধির ফলে স্যার রবার্ঁ পিল একটি নিয়মতান্ত্রিক পুলিশ বাহিনীর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। ১৮২৯ সালে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী পার্লামেন্টে পুলিশ গঠনের বিল উত্থাপন করেন। এর প্রেক্ষিতে গঠিত হয় ‘লন্ডন মেট্রো পুলিশ’। অপরাধ দমনে এই পুলিশ বাহিনীর সাফল্য ইউরোপÑআমেরিকায় ব্যাপকভাবে সাড়া ফেলে। ১৮৩৩ সালে লন্ডন মেট্রো পুলিশের অনুকরণে আমেরিকা গঠন করে ‘নিয়ইয়র্ক সিটি নগর পুলিশ কর্তৃপক্ষ’। ভারতবর্ষে পুলিশ বাহিনী গঠন: ১৮৫৬ সালে বৃটিশ সরকার ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর নিকট হতে ভারত বর্ষের পূর্ণ শাসনভার গ্রহণ করে। এ সময় লন্ডন মেট্রো পুলিশের সাফল্যে অনুপ্রানিত হয়ে বৃটিশ সরকার ভারতে স¦তন্ত্র একটি পুলিশ ফোর্স গঠনে উদ্যোগ গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে ১৮৬১ সালে ঃযব পড়সসরংংরড়হ ড়ভ ঃযব চড়ষরপব অপঃ (অপঃ ঠ ড়ভ ১৮৬১) বৃটিশ পার্লামেন্টে পাস হয়। এই আইনের অধীনে ভারতের প্রতিটি প্রদেশে একটি করে পুলিশ বাহিনী গঠন করা হয়। প্রদেশ পুলিশ প্রধান হিসাবে একজন ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ এবং জেলা পুলিশ প্রধান হিসাবে সুপারিটেনটেন্ড অব পুলিশ পদ সৃষ্টি করা হয়। বৃটিশদের তৈরীকৃত এই ব্যবস্থা এখনও বাংলাদেশ পুলিশে প্রবর্তিত আছে। পাকিস্তানী শাসনামলে পুলিশ: ১৯৪৭ সালে ভারতÑপাকিস্তান স¦াধীনতা লাভের পর বাংলাদেশের তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের পুলিশ বাহিনীর নাম প্রথমে ‘ইষ্ট বেঙ্গল পুলিশ’ এবং পরবর্তীতে ‘ইষ্ট পাকিস্তান পুলিশ’ রাখা হয়। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পূর্ব পর্যন্ত এই নামে পুলিশের কার্যক্রম অব্যহত থাকে।