"ব্রিটিশ শাসনে বাজেয়াপ্ত বাংলা বই " বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: ‘নিষিদ্ধ নজরুল’ গ্রন্থেই শিশির কর চমকে দিয়েছিলেন। বৃটিশ শাসনে বাজেয়াপ্ত বাংলা বই সম্পর্কে যে কত তথ্য আমাদের অজানা, সে-গ্রন্থেই স্পষ্ট হয়ে ধরা পড়েছিল। এও বােঝা গিয়েছিল যে, সাধারণ লেখকের পক্ষে এই সব তথ্য জড়াে করা মােটেই সহজসাধ্য কাজ নয়। তার কারণ, কিছু তথ্য যদি ছড়িয়ে থাকে নতুন দিল্লির জাতীয় লেখ্যাগারে, কিছু রয়েছে কলকাতার স্টেট আর্কাইভস-এ। কিছু তথ্য যদি লর্ড সিনহা রােডের গােয়েন্দা দপ্তরে, বেশ কিছু তথ্য ছড়িয়ে রয়েছে লন্ডনের ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরিতে। আর সাধারণ, উৎসাহী লেখকের পক্ষে এত দূর-দূর প্রান্তে গিয়ে নথিপত্র ঘাঁটার চেষ্টা করা অবাস্তব ব্যাপার। কোথায় ব্রিটিশ মিউজিয়াম লাইব্রেরি আর কোথায় রাইটার্স বিল্ডিংস-এর গ্রন্থাগার। মধ্যে হাজার-হাজার মাইলের ব্যবধান। এ ছাড়াও জড়িত রয়েছে পাশপাের্ট-ভিসার ঝক্কি ঝামেলা ও অর্থব্যয়ের প্রশ্ন। কিন্তু বস্তুতই এত ঝক্কি ঝামেলা ঘাড়ে নিয়ে সময় ও অর্থব্যয় করেছেন শিশির কর। একবার ছুটেছেন লন্ডনে, একবার দিল্লিতে। গােয়েন্দা দপ্তরের পুরনাে ফাইল ঘেঁটেছেন, ধুলাে সরিয়েছেন একের-পর-এক গ্রন্থাগারে বসে। প্রথমে কিছুটা নেশায়, পরে কিছুটা বাধ্য হয়ে। দীর্ঘ এক দশক ধরে তাঁর নিরন্তর গবেষণা অবশেষে সম্মানিত হয়েছে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁর ইংরেজ আমলে নিষিদ্ধ বাংলা পুস্তক’ বিষয়ে ব্যাপক গবেষণার জন্য পি এইচ ডি উপাধি দিয়েছেন তাঁকে। সেই গবেষণার ভিত্তিতেই এই গ্রন্থ। বলা বাহুল্য, এমন বিস্তৃত আলােচনা এর আগে হয়নি। জাতীয় আন্দোলনের বিভিন্ন স্তরে নানান গ্রন্থ ও অভিনয়াদি নিষিদ্ধ করার উদ্দেশ্যে যে সমস্ত আইন প্রণয়ক করা হয়েছিল, তার প্রকৃতি ও প্রয়ােগ সম্পর্কে যে দীর্ঘ আলােচনা এ গ্রন্থে সন্নিবিষ্ট হয়েছে, তা বস্তুতই অভূতপূর্ব। নিষিদ্ধ গ্রন্থাদি সম্পর্কেও যে সব তথ্য এ গ্রন্থে শুনিয়েছেন তিনি, তাও অতীব চাঞ্চল্যকর। শুধু গ্রন্থাদি নয়, ইস্তাহার, গােপন পত্র-পত্রিকা, নাট্যাভিনয়ে নিষেধাজ্ঞা—এ সবও তাঁর আলােচনার অন্তর্গত। গােপন নথিপত্রের অবিকল উদ্ধৃতি ও বেশ কিছু দুর্লভ সাক্ষ্য প্রমাণের ফোটোকপি এ গ্রন্থের আকর্ষণ বৃদ্ধি করেছে। তাঁর আলােচনা ভঙ্গি সরস ও স্বাদু। ‘ব্রিটিশ শাসনে বাজেয়াপ্ত বাংলা বই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে, বলা। যেতে পারে, তত্ত্ব ও তথ্যের দিক থেকে সব থেকে প্রামাণিক ও চিত্তজয়ী গ্রন্থ।
Sisir Kar জন্মঃ ১৩৪২ বঙ্গাব্দ। হাওড়ায়। আদিবাড়ি খানাকুল হলেও হাওড়াতেই বসবাস। হাওড়া বিবেকানন্দ ইনস্টিট্রশন থেকে ম্যাট্রিক পাশ। হাওড়া নরসিংহ দত্ত কলেজ থেকে আই এস সি, বঙ্গবাসী কলেজ থেকে স্নাতক এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এ। ওই বিশ্ববিদ্যালয়েই “ইংরেজ আমলে নিষিদ্ধ বাংলা পুস্তক” সম্পর্কে গবেষণা করে পি এইচ ডি (১৯৮৪)। এ বিষয়ে গবেষণার জন্য দেশ বিদেশে বিভিন্ন আকাইভস্ ও লাইব্রেরিতে গিয়েছেন এবং পড়াশোনা করেছেন। লন্ডনে ইন্ডিয়া অফিস লাইব্রেরি, ব্রিটিশ মিউজিয়ম (লাইব্রেরি) নয়াদিল্লির ন্যাশনাল আকাইভস, কলকাতার স্টেট আকাইভস, রাইটার্স বিল্ডিংস-এর স্টেট লাইব্রেরি, লর্ড সিংহ রোডে গোয়েন্দা দপ্তর প্রভৃতিতে রক্ষিত ব্রিটিশ আমলে সরকারী নথিপত্র ও গোপন ফাইল থেকে দীর্ঘ প্রায় এক দশক ধরে তথ্যাদি সংগ্রহ করেছেন। পেশায় সাংবাদিক| সাংবাদিকতার হাতে খড়ি দিল্লির হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকায়, বর্তমানে আনন্দবাজার পত্রিকার সহকারী বাতা-সম্পাদক। টমসন ফাউন্ডেশন ও প্রেস ইনস্টিটুট অব ইন্ডিয়ার সাংবাদিক কোর্সে ট্রেনিং ও ডিপ্লোমা। একাধিক গ্রন্থের লেখক| প্রথম গ্রন্থ—উপন্যাস, নাম : পত্রমিতা। অন্যান্য বই : ভালবাসা দূরের শহরে (ছোটগল্প), গঙ্গায় বাঘ (কিশোর সাহিত্য), নিষিদ্ধ নজরুল (প্রবন্ধ)। দু একটি যন্ত্রস্থ। দুই বাংলার নানা পত্রিকার নিয়মিত লেখক। ছোটবেলা থেকেই লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনে জড়িত। নেশা: লেখা, জনকল্যাণ, সমাজসেবা, ভ্রমণ।