স্রষ্টাহীন—যে পৃথিবীর স্বপ্ন কিছু মানুষ দেখে, আদতেই কি তা সম্ভব! এই নীল আকাশ, বিপুল নক্ষত্ররাজি, উত্তাল সাগরের ঢেউ, পৃথিবীর তামাম প্রাণীকুলের হৃদস্পন্দন—এসবের অস্তিত্বের তাহলে কী মানে! . আমাদের শরীরে প্রাণের যে প্রবাহ, হৃদয়ের যে অনুরণন, এর কি কোনোই অর্থ নেই! দিনমান কলকল করে বয়ে যাওয়া পৃথিবীর নির্জন কোনো বনের শান্ত নদীটি কি আমাদের জীবনের সাথে কোনোই যোগসাজস রাখে না! মানবজীবনের যদি কোনো অর্থই না থাকে, তবে কেন বসুধার বৃথা এ বিপুল আয়োজন! . আধুনিক পৃৃথিবীতে মানবজাতির সবচেয়ে বড় সংকট হলো—অস্তিত্বের সংকট! এই সংকটে ভুগা মানুষগুলো জীবনের রূপ-রস-গন্ধের বৈচিত্র্য একপ্রকার হারিয়েই ফেলে। . পুঁজিবাদ ও বস্তুবাদের মরিচিকায় এখন মানুষ আদ্যোপান্ত বিভোর, বিভ্রান্ত। মানুষ মনে করছে, এ জীবন কেবলই ভোগের! এর কোনো পরকালীন অস্তিত্ব নেই, গন্তব্য নেই! . আধুনিক পৃথিবীর তৈরি অস্তিত্বের এই সংকটগুলোকে নিজের জীবনের আয়নায় পোস্টমর্টেম করে একে একে দেখিয়েছেন নাদিউজ্জমান খান রিজভী তার এই ‘অস্তিত্বের কথা’ বইটিতে। . তিনি জীবনের সাথে জগতের সম্পর্ককে ব্যাখ্যা করেছেন একজন যৌক্তিক বিশ্বাসীর দৃষ্টিতে। একইসাথে দীনে ফেরার গল্প, ইবাদতের মর্ম, আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব অনুভব ও চারপাশের সহজ ও জটিল যাপনকে ব্যাখ্যা করে একে একে স্পষ্ট করে তুলতে চেয়েছেন মানবজাতির অনিবার্য এই অস্তিত্বকে। . বুঝাতে সক্ষম হয়েছেন, অস্তিত্ব আসলে কী! কেন মানবজাতির জন্য অস্তিত্বর অনুভবই অনিবার্য বাস্তবতা। . বিষয়বৈচিত্র্যের দিক থেকে কিছুটা জটিল ও দার্শনিকতা সমৃদ্ধ হলেও এই বইয়ের গদ্য বেশ সাবলীল। পড়তে বসলে ছোটগল্পের মতোই লাগবে। . জীবন বিপুল রহস্যময় এক ব্যাপার। মানুষ একে পরিপূর্ণ ব্যাখ্যা করতে পারে না শুধুমাত্র তাত্ত্বিক জ্ঞান দিয়ে। তবে আল্লাহ আমাদেরকে নানানভাবে পথ দেখিয়েছেন। আমাদের হৃদয়ে ঢেলে দিয়েছেন প্রজ্ঞা ও চিন্তার নুড়ি। সেইসব দিয়েই আমরা নিত্য খোঁজে ফিরি মহান রবকে, যিনি আমাদের অস্তিত্বে এনেছেন। . ‘অস্তিত্বের কথা’—এই গ্রন্থ, আমাদের সামনে সুস্পষ্ট করবে জীবনের অনুভবকে, যে অনুভব সত্যিকার জীবনের। আমাদের মুক্তি দিবে অস্তিত্বহীনতার ভ্রান্তির বেড়াজাল থেকে।