আমি কুরআন ও সুন্নাহর সংস্পর্শে থাকলে, বিশুদ্ধ মানুষদের সঙ্গ অবলম্বন করলে আমার মনমননে একধরনের ‘রূহ’ তথা নবপ্রাণের সঞ্চার হতে থাকবে। আমার চেতনার শিরা-উপশিরায় সচল থাকবে একটি ঈমানি বিদ্যুৎস্রোত। নবপ্রাণের এই পবিত্র বায়ু আমার কল্পিত ভ্রান্তভ্রমের প্রাচীর ভাঙতে শুরু করবে। ঈমানি রূহের নীরব অথচ শক্তিশালী আঘাতে ভ্রান্তভ্রম-প্রাচীরের ইট একে একে খসে পড়তে থাকবে। শেষ ইটটি ধসে পড়ার বিকট আওয়াজ চারিদিক প্রকম্পিত করে তুলবে। কারণ, শেষ ইটটা গিয়ে পড়বে গহ্বরে আগে পড়া ইটগুলোর উপর। এটা বাতিল পতনের আওয়াজ। এটা মিথ্যা ধসে পড়ার শব্দ। এটা অন্ধকার দূর হওয়ার ধ্বনি।আকায়েদ সর্বদা সচেতন প্রচেষ্টায় অর্জন করতে হয়। সচেতন প্রচেষ্টায় শুদ্ধ রাখতে হয়। প্রচলিত সংস্কৃতিকর্মীরা সমাজে ধর্মীয় চেতনার মূলে কুঠারাঘাত করে চলেছে। মিডিয়ায় তাদের কুপ্রভাবে জনজীবনে ও গণমানুষের মনমানসে ধর্মভাব হ্রাস পাচ্ছে। এসব দুষ্ট প্রভাব কাটিয়েই একজন মুমিনকে নিজের আকিদা-বিশ্বাস অক্ষত রাখতে হয়; অক্ষুন্ন রাখতে হয়।মানুষের চাহিদার কোনো শেষ নেই। দশ জনের দশ রকম চাহিদা। ধর্মহীন গণতন্ত্রের গতি সবসময় মানুষের চাহিদা অনুসারেই হয়ে থাকে। আল্লাহবিহীন গণতন্ত্রে মানুষের চূড়ান্ত গন্তব্য হয়ে ওঠে তার ‘প্রবৃত্তি’ আর ব্যক্তিগত ‘স্বার্থ’। তার মন যা চায়, সে তার অনুসরণ করে। এজন্য দেখা যায়, ধর্মের বিপরীতে গিয়ে হলেও দলের স্বার্থ রক্ষা করতে সচেষ্ট থাকে। যে ব্যবস্থায় ‘স্বার্থ’ আর ‘প্রবৃত্তি’ হয়ে ওঠে চূড়ান্ত, সেখানে পরিণতি কী হতে পারে কল্পনা করা কি খুব কঠিন? যে আল্লাহর উবুদিয়্যত থেকে বেরিয়ে যায়, আল্লাহ তাকে সবকিছুর দাস বানিয়ে দেন।গণতন্ত্র কোনো নিছক কর্মকৌশল নয়, গণতন্ত্র একটি ধর্ম, দর্শন ও আকিদা। এই ধর্মের রব, ‘আমি’-‘জনগণ’। এই ধর্মের নবী, ‘নাফ্স’ তথা প্রবৃত্তি। এই ধর্মের কেবলা, ‘স্বার্থ’।পশ্চিমারা মুসলিম ও তৃতীয় বিশ্বে গণতন্ত্র রপ্তানি করেছে সাম্য, স্বকীয়তা, স্বাধিকার, মানবাধিকার, জনগণের শাসন, সুবিচার, মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা, স্বাধীন বিচারব্যবস্থা ইত্যাদির লোভনীয় সুদৃশ মোড়কে। এসবের কৃত্রিম ভড়ং দিয়ে মুসলিম জনগণ ও বুদ্ধিজীবীদের মাথা কিনে নিয়েছে। চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে জেনারেল শিক্ষিত অগণিত পোড় খাওয়া শিক্ষাবিদ-পণ্ডিত তো বটেই, অসংখ্য আখেরাতমুখী যবরদস্ত আলেমও গণতন্ত্রের উপরমিষ্ট-তলতিক্ত ‘মিছরি’র শুধু টোপই নয়, ফেতনা ছাড়িয়ে ছিপশুদ্ধ গিলে বসে আছেন।গণতন্ত্র হলো দুর্বল জাতি ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পশ্চিমা স্বার্থান্বেষী মহলের যুদ্ধের উপাদান। গণতন্ত্র কোনো শাসনব্যবস্থা নয়। গণতন্ত্রকে তারা সবসময়ই নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছে। গণতন্ত্রের মুলো ঝুলিয়ে তারা বহুদেশে নিজেদের নব্য উপনিবেশ স্থাপন করেছে। গণতন্ত্রকে তারা কমিউনিজমের বিরুদ্ধে নিজেদের স্বতন্ত্র আত্মপরিচয় হিসেবে দাঁড় করিয়েছে; প্রতিষ্ঠা করেছে। একেক দেশে একেক রকমের ভুয়া গণতন্ত্রের মোড়ক স্বাধিকার, সাম্য, সুবিচারের রঙিন ফানুস ব্যবহার করে তারা মুসলিম দেশগুলোর মাথা কিনে নিয়েছে। দখলে নিয়েছে প্রায় সব মুসলিম দেশ।