"ভারতবর্ষের প্রাগিতিহাস" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: লিখিত তথ্য ও উপাদান বাদ দিয়েও যে প্রাগৈতিহাসিক ভারতবর্ষের, বিস্তৃত এই উপমহাদেশের গােড়ার ইতিহাস রচনা করা যেতে পারে, বর্তমান গ্রন্থটি তার অন্যতম প্রমাণ। লেখক বিস্তৃত আলােচনায় সাজিয়ে দিয়েছেন প্রত্নযুগের মানুষের বেঁচে থাকার ইতিহাসের ক্রম আবর্তন এবং বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন পর্যায়ের ভেতর দিয়ে তার জীবনযাত্রার বিচিত্র বিকাশ। প্রত্নমানুষের খাদ্যসংগ্রহ ও খাদ্যউৎপাদনের প্রচেষ্টাকে প্রাগিতিহাসচর্চার অন্তর্ভুক্ত করে লেখক খুঁজেছেন ভারতবর্ষের জীবনসংস্কৃতি। অরণ্য, পর্বত ও মৃত্তিকাসংলগ্ন সেই পুরাপ্রস্তর যুগের পথ ধরে এই গ্রন্থের আলােচনা পৌছেছে ঐতিহাসিক যুগে। নগরপত্তন, লিপির উদ্ভব ও ব্যবহার, মুদ্রার প্রচলন প্রভৃতি প্রাচীন ইতিহাসের উপাদানগুলিকে প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় কীভাবে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে দেখতে হবে সে সম্পর্কে লেখকের অভিমত স্পষ্ট। প্রত্ন-ইতিহাস আজ আর কেবল ইতিহাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান এখন অনিবার্য। যদিও এই চর্চায় বিজ্ঞানের প্রয়ােগ অত্যন্ত সীমিত। অথচ প্রাগিতিহাসের হারানাে লুকননা সম্পদ উদ্ধারের জন্য প্রত্নতাত্ত্বিক বিজ্ঞান ছাড়া এক পা-ও এগােনাে অসম্ভব। এই গ্রন্থে ব্যবহৃত তথ্য ও লেখকের অভিমত। অনেকক্ষেত্রেই হয়তাে বিতর্কমূলক। তবে লেখক এখানে নিঃসংশয়ে প্রমাণ করেছেন, প্রাচীন ইতিহাস শুধু পণ্ডিতদের রচনায় নেই, আমাদের চারপাশে তার ধারা বইছে নিরবধি কাল।
ড. দিলীপ কুমার চক্রবর্তী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৬ সালে পি.এইচ.ডি. ডিগ্রি লাভ করেন। বিভিন্ন সরকারি কলেজে অধ্যাপনা করার পর ২০০১ সালে। প্রেসিডেন্সি কলেজে প্রাণীবিজ্ঞানের বিভাগীয় প্রধান হিসাবে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি কলকাতার জুলজিক্যাল সােসাইটির ফেলাে নির্বাচিত হন। দেশবিদেশে তার গবেষণা পত্রের সংখ্যা পঞ্চাশটিরও বেশি।