তেভাগা আন্দোলন বইয়ের ফ্ল্যাপে লেখা কথা বিশ শতকের তৃতীয় দশকে সামাজিক ও রাজনৈতিক বিবর্তনের একটি বিশেষ পর্যায়ে উত্তরবঙ্গে, দিনাজপুর-রংপুর-জলপাইগুড়ি কোচবিহার-মালদহ, এই পাঁচটি জেলার নানা জায়গায়, স্থানীয় কৃষকদের প্রজন্মব্যাপী বঞ্চনার আক্রোশ বিদ্রোহ ও আন্দোলনে পরিণতি লাভ করে। ভারতীয় কমিউনিস্ট পাটি তখন গণবিপ্লব-আন্দোলনের তরঙ্গশীর্ষে। খুব স্বাভাবিকভাবেই এই রাজনৈতিক দল কৃষক আন্দোলনের নেতৃত্ব গ্রহণ করে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সমস্ত সংগ্ৰামী মানুষ কমিউনিস্ট পার্টির পতাকার তলায় সমবেত হন। ফলে, রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের প্রেরণায় এই আন্দোলন দুর্বর গতি লাভ করে ও অন্য মাত্রা পেয়ে যায়। সময়—দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের অন্তিম অধ্যায়, ভারতের রাষ্ট্ৰীয় স্বাধীনতার পূর্বাহ্ণ। তখনকার স্মৃতিতে এবং এখনকার ইতিহাসে এই বিদ্রোহের প্রথম অধ্যায় আধিয়ার বিদ্রোহ, দ্বিতীয় অধ্যায়। তেভাগা আন্দোলন নামে বিখ্যাত। তেভাগা আন্দোলনের বীজ পোঁতা হয়েছিল আধিয়ার আন্দোলনে। উত্তরবঙ্গের ভাগচাষি ‘আধিয়ার’রা নির্মম অভিজ্ঞতা জানত, জোতদারের কাব্জায় একবার ধান চলে গেলে তার কপালে আধি বা অর্ধেক তো জুটবেই না, বরং নানা অজুহাতে, নানা পাওনার নাম করে সেই আধি থেকে মোটা অংশ কেটে নেবে জোতদার। তাই আওয়াজ উঠল, আর জোতদারের গোলায় বা “খোলানে” ধান নয়, ‘নিজ খোলানে ধান তোলো।’ যেসব এলাকায় খোলানে ধান তোলা হয়ে গেল সেখানে ঠিক হল, জোতদারকে আইনসঙ্গত নোটিশ দিয়ে ধান ভাগ করা হবে। যথারীতি জোতদাররা নোটিশ অস্বীকার করে। ভাগচাষিরা তখন গাঁয়ের দশজনকে সাক্ষী রেখে মোট ধান তিনভাগে ভাগ করল। তার নিজের দুভাগ, জোতদারের একভাগ।