"আমার দেবোত্তর সম্পত্তি" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: পঞ্চাশ বছর বয়সে পৌঁছে শ্রীনীরদচন্দ্র চৌধুরী লিখেছিলেন জীবনের প্রথম যে-গ্রন্থ, সেটি তাঁর নিজেরই আত্মজীবনী । ইংরেজি ভাষায় রচিত সেই গ্রন্থনামে নিজেকে তিনি চিহ্নিত করেছিলেন অখ্যাত এক ভারতীয় রূপে। বিস্ময়ের বিষয় এই যে, গ্রন্থটি প্রকাশের পর দেখা গেল, অখ্যাত সেই ভারতীয়ই রাতারাতি পৌছে। গেছেন আন্তজাতিক খ্যাতির চূড়ায় এবং একইসঙ্গে, বিতর্কেরও। বিশেষত, স্বদেশে। এরপর সাতচল্লিশ বছর অতিক্রান্ত। আজ তাঁর বয়স সাতানব্বই। তবু এখনও সমান সজাগ তাঁর মন, লেখনী সক্রিয় এবং পূর্ববৎ ঝড়-তােলা। শতাব্দীর দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়ে সেই ঝড়-তােলা। লেখনীতেই শ্রীচৌধুরী নতুনভাবে আরেকবার শােনালেন তাঁর সুদীর্ঘ জীবনের কাহিনী। আমার দেবােত্তর সম্পত্তি’ নামের তাঁর এই নতুন জীবনকথা শুধু যে আকারেই বড় তা নয়, প্রকারেও পুরােপুরি পৃথক স্বাদের। আর তাই, মূল্যেও,অনন্য গরিমাপূর্ণ। এই বই, তাঁর নিজেরই ভাষায়, বাঙালির জন্য বাঙালির লেখা। তাঁর ইংরেজি আত্মজীবনী যদি আত্মপরিচয়, বাংলা ভাষায় লেখা এই জীবনকথা সেক্ষেত্রে আত্মপরীক্ষা। কোথায় তফাৎ, কেন। আত্মপরীক্ষা, কোন বিশেষ উদ্দেশ্যে নতুনভাবে লেখা হল এই বই, তা নিজেই জানিয়েছেন তিনি। কোন দৃষ্টিকোণ থেকে জীবন প্রতিভাত দেবােত্তর সম্পত্তি রূপে, জানিয়েছেন সেকথাও। এই গ্রন্থে শ্রীনীরদচন্দ্র চৌধুরীর জন্ম থেকে সাম্প্রতিক কাল পর্যন্ত বহুব্যাপ্ত ও বৈচিত্র্যময় জীবনের প্রতি পর্বের নানান কৌতুহলকর কাহিনী। বংশপরিচয়, বাল্যজীবন, শিক্ষাদীক্ষা, রােমান্স, দাম্পত্যজীবন, চাকুরিজীবন, লেখালেখির জীবন, বিলেতবাসের জীবন—এমন সমস্ত কিছুর আনুপূর্বিক বিবরণের পাশাপাশি তাঁর জীবনচর্যার, জীবনবােধের ও জীবনদর্শনেরও অকপট পরিচয়। সেই বিবরণ ও সেই পরিচয়ের মধ্য দিয়ে এই বিংশ শতাব্দীর চলমান এক সমাজচিত্রই শুধু চোখের সামনে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে না, এতকাল-অপরিচিত, কিংবদন্তী-পরিকীর্ণ এক ব্যক্তিমানুষের অন্তরঙ্গ চেহারাটাও ক্রমশ উন্মােচিত হতে থাকে। সন্দেহ নেই, এই জীবনকথা নতুন করে চেনাবে শ্রীনীরদচন্দ্র চৌধুরীকে, তাঁর সম্পর্কে প্রচলিত বহু ভ্রান্ত ধারণার ঘটাবে অবসান। অন্যদিকে, উদ্দীপিত করবে বহু পাঠক-পাঠিকাকে।
Nirodchandra Chowdhury (জন্ম: ২৩ নভেম্বর, ১৮৯৭ - মৃত্যু: ১ আগস্ট, ১৯৯৯) একজন খ্যাতনামা দীর্ঘজীবী বাঙালি মননশীল লেখক ও বিশিষ্ট চিন্তাবিদ। স্কলার এক্সট্রাঅর্ডিনারী শীর্ষক ম্যাক্স মুলারের জীবনী লিখে ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে নীরদচন্দ্র চৌধুরী ভারত সরকার প্রদত্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাহিত্য সম্মাননা হিসেবে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। তিনি তাঁর ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি ও তীর্যক প্রকাশভঙ্গীর জন্য বিশেষভাবে আলোচিত ছিলেন।