"আমিষ ও নিরামিষ আহার ২য় খণ্ড" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: যে সময়ে বাংলা ভাষায় রান্নার বই লেখার চেলই ছিল না, সেই সময়ে প্রজ্ঞাসুন্দরী দেবী খণ্ডে-খণ্ডে লিখেছিলেন রকমারি আমিষ ও নিরামিষ রান্নার এই কিংবদন্তীপ্রতিম মহাগ্রন্থ। ঠাকুরবাড়ির কন্যা প্রজ্ঞাসুন্দরী—হেমেন্দ্রনাথের সন্তান, বিবাহসূত্রে অসমের সাহিত্যরথী লক্ষ্মীনাথ বেজবড়য়ার পত্নী। রান্নাকে তিনি শিল্প হিসেবেই গ্রহণ করেছিলেন। রন্ধনচর্চা তাঁর কাছে ছিল সৃজনশীল এক কর্মেরই সুশৃঙ্খল অনুশীলন। সেই সৃষ্টির আনন্দযজ্ঞে বসুধাকুটুম্বকে আমন্ত্রণ জানাতেই সে-যুগে হাতে কলমও তুলে নিয়েছিলেন প্রজ্ঞাসুন্দরী। এ-বই সেই আনন্দেরই চিরায়ত ফসল। বস্তুত ‘আমিষ ও নিরামিষ আহার’ গ্রন্থের প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয় গত শতকের প্রথম দশকে। তাঁর স্ব-উদ্ভাবিত দ্বিসহস্রাধিক রান্নার সঙ্গে বাঙালি ঘরের ঐতিহ্যমণ্ডিত নানান রান্নার কলাকৌশল বর্ণনা করে এই সুবৃহৎ গ্রন্থের খণ্ডে-খণ্ডে সাজিয়ে দিয়েছিলেন প্রজ্ঞাসুন্দরী দেবী। তিন খণ্ডে প্রকাশিত এই মহাগ্রন্থে যেসব রান্না মুদ্রিত হয়েছিল, তার বাইরেও ছিল তাঁর আরও কয়েকটি রান্নার বই, এ-ছাড়াও বেশ কিছু রন্ধনপ্রণালীর পাণ্ডুলিপি লেখিকার মৃত্যুর পর আবিষ্কৃত হয়েছে। সেই সমূহ রচনা একত্র করে সুপরিকল্পিত দুটি খণ্ডে ‘আমিষ ও নিরামিষ আহার গ্রন্থটির নতুন এই প্রকাশ-পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এই দ্বিতীয় খণ্ডে রইল আমিষ আহারের এক ব্যাপ্ত, বর্ণাঢ্য ও বৈচিত্র্যপূর্ণ রন্ধনপ্রণালী। এমন কোনও আমিষ রান্নার কথা কল্পনা করাও কঠিন, যা এই বইতে নেই। মাছ-মাটন-মুরগি আর ডিম-চিংড়ি-কাঁকড়া থেকে শুরু করে হাঁস-হরিণ-হ্যাম, এমন-কি, পর্ক-পাখি-খরগােশ পর্যন্ত। আর সে-সব দিয়ে রান্নাও বা কত ধরনের! কারি-কালিয়া, কাবাব-কোপ্তা, চপ-কাটলেট, পাই-পােলাও, সস-ভাজা, দোলমা-কোরমা, গ্রিল-ঘণ্ট, সুপ-স্টুকী নেই! প্রথমের মতাে এই খণ্ডেও-সে-যুগের গ্রন্থকে এ-যুগের উপযােগী করে তােলার জন্য—যথাযােগ্য টীকা এবং এই খণ্ডে অন্তর্ভুক্ত রান্নার বণানুক্রমিক এক তালিকা সংযােজিত হয়েছে। আমিষ আহারের এক কোষগ্রন্থ এই দ্বিতীয় খণ্ড।