"দেশবিভাগ: পশ্চাৎ ও নেপথ্য কাহিনী" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: ভারতবর্ষের স্বাধীনতার পিছনে যেমন শত শহীদের আত্মােৎসর্গের গৌরবকাহিনী, তেমনই রয়েছে রক্ত-কলুষিত দেশবিভাগের করুণ ঘটনা। বস্তুত স্বাধীনতা দেশবিভাগের মূল্যেই অর্জিত। তবু যাঁরা দেশবিভাগ চেয়েছিলেন তাঁদের উল্লাস-দাবি সনদের পূর্ণ প্রাপ্তির অভাবে—হয়েছে কণ্টকিত, আর, যাঁরা তা চাননি তাঁদের মন স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় ভারাক্রান্ত। কিন্তু দেশবিভাগ কি একান্তই আকস্মিক কোনও ঘটনা ? মােটেই তা নয়। কিছু লােকের অকারণ জিদ, কিছু মানুষের ভুল বােঝাবুঝি অথবা কোনও-কোনও লােকের অহেতুক ক্ষমতাপ্রিয়তার পরিণাম মাত্র নয় যেমন দেশবিভাগ, তেমনই। হয়তাে দেশবিভাগের দাবিকেও সম্পূর্ণ অযৌক্তিক বলা যাবে না। বস্তুত, দেশবিভাগের সুনির্দিষ্ট। পরিকল্পনা না থাকলেও এর জন্য প্রস্তুতি চলেছিল দীর্ঘ দিন ধরে। সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ধীরে ধীরে এর জন্য প্রস্তুতিপর্ব চালিয়ে গিয়েছিল। তাদের বিষের বাঁশির সুরের তালে তালে প্রলয়নাচন নেচেছে ভারতবর্ষের মানুষ। যদি দেশবিভাগকে কোনওভাবে আটকান যেত, তবে তার জন্য কী মূল্য দিতে হােত সেকথাও ভেবে দেখার মতাে। জরুরি এক বিষয়। উনিশ শো সাতচল্লিশ সালের চোদ্দই ও পনেরই আগস্টের আগে বহুবহু বছর ধরে নাটকের যে-মহড়া চলছিল নেপথ্যে, তৈরি হচ্ছিলেন কুশীলবেরা, শাণিত করছিলেন তাঁদের অস্ত্র, সেই ঐতিহাসিক কাহিনীই বিবৃত হয়েছে এই বইটিতে। ক্রোধ এবং বেদনা উদ্রেককারী দেশবিভাগের ঘটনাবলীর যে বিশ্লেষণ এতে করা হয়েছে তা নতুন করে মানুষকে চিন্তা করার অবকাশ এনে দেবে।