"অন্ধকার যুগ" বইয়ের ফ্ল্যাপে লিখা কথা তরুণদের জন্য রচিত আইজাক আাসিমভের বুদ্ধিদীপ্ত ইতিহাস রচনার ষষ্ঠ খণ্ড এটি। তাঁর আগের বহুল প্রশংসিত বইগুলোতে পুনৎসৃজিত হয়েছে নিটক প্রাচ্য, মিশর, গ্রিস আর রোমের মহাব সভ্যতাগুলো, এখন উনি দৃষ্টি মেলেছেন উত্তর ইউরোপের দিকে, আলোচনা করেছেন ফ্রাঙ্ক এবং গথদের নিয়ে, যারা উত্তরপ্রান্ত থেকে মেডিটারেনিয়ান প্রান্তে এসে সূচনা করেছিলেন নিরঙ্কুশ আধিপত্যময় একটি কালের।
অসংখ্য সমালোচকের মতানুসারে ড. আসিমভ ইতিহাস বর্ণনার ক্ষেত্রে ইতিহাসের নানান শাখায় বৈচিত্র্য এনেছেন আলোর চমকের মতো। স্পষ্ট তাঁর গদ্য ভাষা, যে গদ্য ভাষা পাঠকের মনে বিপুল উৎসাহের সঞ্চার করে, পাঠককে ধরে রাখে তার বিস্তৃত অবাধ দৃশ্যপটে, ঠিক তেমনই একটি বই এই অন্ধকার যুগ। এখনো আমরা দেখি জার্মান উপজাতিদের আর গথিক রাজ্যসমূহ, দেখতে পাই আঁধারের আগমন। উদঘাটিত সামরিক ঘটনাস্রোতে দেখতে পাই খ্রিস্টধর্মের প্রবল প্রতাপ। আমরা দেখি টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙ্গে গেছে সাম্রাজ্য, পতন ঘটেছে রাজরাজরাদের । এখানে আমরা মুখোমুখি হই কতিপয় মনোমুগ্ধকর ব্যক্তিত্বে- অ্যালেরিখ্ , শর্লোমন আর তাঁর ক্যারোলিঙ্গিয়ান উত্তরাধিকারীদের সাথে। পরিশেষে আমরা অন্ধকার পাড়ি দিয়ে দেখা পাই একটুকরো বিমর্ষ আলোর। যা আরো বেশি আলোকিত হয়ে আমাদের কাছে ধরা দেবে বলে প্রতিজ্ঞিাবদ্ধ।
অন্ধকার যুগ ইতিহাসের একটি অধ্যায় যা অনেকের কাছেই অজানা। ড. আসিমভ এই সময়টিকে আমাদের কাছে উপস্থাপন করেছেন এক গুরুত্বপূর্ণ সময় হিসেবে, যা জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দ্বারা অনুসন্ধানযোগ্য।
সূচিপত্র জার্মান বনাম রোম * প্রথম সংঘর্ষ * জার্মানির পুনর্বিজয় * রোমানদের পুনঃবিজয় * খ্রিস্টীয় ধর্ম * হুন * পথিক রাজ্য * সাহসী অ্যালারিখ্ * তুলুসু রাজ্য * হুনদের পুনঃআগমন * আইন ও ভাষা * পথ্দের মধ্যে মহত্তম
বিংশ শতকের অন্যতম সেরা লেখক আইজ্যাক আসিমভ সাহিত্যজগতের এক উজ্জ্বল নাম। তিনি ১৯২০ সালের ২ জানুয়ারি সোভিয়েত রাশিয়ার পেত্রোভিচি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে পরিবারের সাথে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে ব্রুকলিনে শুরু করেন নতুন জীবন। ছোটবেলায়ই তাঁর বাবা তাকে লাগিয়ে দেন নিজেদের ক্যান্ডিশপে দোকানদারির কাজে। ছোট্ট আসিমভ পাঁচ বছর বয়সেই নিজে নিজে পড়তে শিখে যান। মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি হাই স্কুল শেষ করেন এবং কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন। এখান থেকেই তিনি ১৯৩৯ সালে ব্যাচেলর অব সায়েন্স এবং পরবর্তীতে এমএ ও পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫৫ সালে বোস্টন ইউনিভার্সিটিতে তিনি বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। পরবর্তীতে অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি হলেও তিনি লেখালেখিতে মনোনিবেশ করতে নিয়মিত শিক্ষকতা করেননি। ১৯৫০ সালে বের হয় তাঁর প্রথম বই ‘পেবলস ইন দ্য স্কাই’, যা জয় করে নেয় সাধারণ পাঠকের মন। এরপর একের পর এক লেখা বের হতেই থাকে তাঁর। তাঁর সৃষ্ট সাহিত্যকর্মের মূল আধেয় হলো সায়েন্স ফিকশন, পপুলার সায়েন্স, রহস্য ইত্যাদি। সৃজনশীল মেধাসম্পন্ন এই লেখক ৫০০টিরও বেশি বই রচনা ও সম্পাদনা করেছেন। জনপ্রিয় লেখক আইজ্যাক আসিমভ এর বই সমূহ হলো, ‘আই,রোবট (১৯৫০)’, ‘ফাউন্ডেশন (১৯৪২)’, ‘দ্য এন্ড অব ইটারনিটি (১৯৫৫)’, ‘দ্য কেভস অব স্টিল (১৯৫৩)’, ফ্যান্টাস্টিক ভয়েজ (১৯৬৬)’ ইত্যাদি। তাঁর রচিত উপন্যাসই শুধু নয়, তুমুল জনপ্রিয় তাঁর ছোটগল্পগুলোও। আসিমভ এর রচনাগুলো থেকে নির্মিত হয়েছে বেশ কয়েকটি বড় বাজেটের চলচ্চিত্র, যার মাঝে আছে ‘আই,রোবট (২০০৪)’, ‘বাইসেন্টেনিয়াল ম্যান (১৯৯৯)’ ইত্যাদি। বিশ্বজোড়া প্রকাশিত আইজ্যাক আসিমভ এর বই সমগ্র জয় করে নিয়েছে সায়েন্স ফিকশন পাঠকদের মন। তাঁর বই থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বিশ্বের নামিদামী পরিচালক তৈরি করেছেন চলচ্চিত্র, বানিয়েছেন সিরিজ। ১৯৮৭ সালে ‘সায়েন্স ফিকশন রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকা’ তাকে ‘গ্র্যান্ড মাস্টার অব সায়েন্স ফিকশন’ সম্মানে ভূষিত করে। তাঁর লেখা ‘ফাউন্ডেশন (ট্রিলজি)’ ১৯৬৬ সালে এনে দেয় ‘হুগো এওয়ার্ড’, ‘দ্য গডস দেমসেল্ভস’ এনে দেয় একইসাথে ‘হুগো’ ও ‘নেবুলা’ অ্যাওয়ার্ড। কল্পবিজ্ঞানের এই মহা কারিগর ১৯৯২ সালের ৬ এপ্রিল ব্রুকলিনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।