"আজাজেল্" বইটির প্রথম ফ্ল্যাপ-এর লেখাঃ আইজাক আসিমভ কল্পবিজ্ঞানের সুবিখ্যাত কথাশিল্পী, অসীম কল্পনাশক্তিতে তার খেয়ালী কলম মেলে। ধরেছেন রূপক কাহিনী গ্রন্থনে। আঠারােটি গল্পকে সংকলনে বন্দী করে আমাদের উপহার দিয়েছেন। যারা রূপক কাহিনী ভালবাসেন এবং আসিমভের। অনুরাগী ভক্তবাহিনী, সকলকেই অভিভূত করবে। আজাজেলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করুন, দুই সে.মি. দীর্ঘ। আগুন-লাল-রঙা এক জিন প্রচন্ড ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ও চমৎকার জাদুশক্তির অধিকারী। শুধুমাত্র জর্জ। বিটারনাট, যিনি এক খামখেয়ালী ভাষাবিদ, জিন ও আত্মা আহ্বানের জাদুমন্ত্রে পারদশী এবং তারই ইচ্ছায় আজাজেল আবির্ভূত হয়। কিন্তু, আজাজেল। তার বিস্ময়কর জাদুবিদ্যা, জর্জের ব্যক্তিগত লাভের খাতিরে ব্যবহৃত হতে অনুমতি দেবে না। জর্জের বন্ধুদের প্রয়ােজন পড়লে, তারা অনুগ্রহ পেতে পারে। কিন্তু একটাই সমস্যা। এই অন্য পার্থিব চমৎকার করিঙ্কর্মার, পার্থিবব্যঞ্জনা এবং মানবিক দুর্বলতা সম্পর্কে স্বল্পই জ্ঞান আর তার সদিচ্ছাপ্রসূত অবৈধ হস্তক্ষেপ যারপরনাই তামাসা ও অপ্রত্যাশিত বিশৃঙ্খলায় পর্যবসিত হয়। এই কাহিনীগুলির শ্রমসাধ্য সংকলন আজাজেল ও বেচারি বিটারনাটের উদ্ভট ও ব্যর্থ অভিযানসমূহ অনুসরণ করেছে, যখন তারা ভালমনেই কিছু পরিচিত দুর্ভাগাদের ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করছিল। আসিমভের নিজস্ব ভঙ্গিতে এবং বিষমই মজা করে বর্ণিত আজাজেল ঘণ্টার পর ঘণ্টা নির্মল দুষ্টুমি-মাখা আনন্দ দেওয়ার দাবি রাখে। আজাজেল এর সতেরটি গল্প, প্রথম ‘দ্য ফ্যান্টাসি অ্যাণ্ড সায়েন্স ফিকশন’ ও ‘আইজাক আসিমভস সায়েন্স ফিকশন ম্যাগাজিন'-এ প্রকাশিত হয়েছিল। এই সংকলনিটর প্রথম গল্প ‘দুই সে.মি. জিন' বিশেষ করে এই বইটির জন্যই লেখা।
বিংশ শতকের অন্যতম সেরা লেখক আইজ্যাক আসিমভ সাহিত্যজগতের এক উজ্জ্বল নাম। তিনি ১৯২০ সালের ২ জানুয়ারি সোভিয়েত রাশিয়ার পেত্রোভিচি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবে পরিবারের সাথে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে ব্রুকলিনে শুরু করেন নতুন জীবন। ছোটবেলায়ই তাঁর বাবা তাকে লাগিয়ে দেন নিজেদের ক্যান্ডিশপে দোকানদারির কাজে। ছোট্ট আসিমভ পাঁচ বছর বয়সেই নিজে নিজে পড়তে শিখে যান। মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি হাই স্কুল শেষ করেন এবং কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন। এখান থেকেই তিনি ১৯৩৯ সালে ব্যাচেলর অব সায়েন্স এবং পরবর্তীতে এমএ ও পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫৫ সালে বোস্টন ইউনিভার্সিটিতে তিনি বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। পরবর্তীতে অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি হলেও তিনি লেখালেখিতে মনোনিবেশ করতে নিয়মিত শিক্ষকতা করেননি। ১৯৫০ সালে বের হয় তাঁর প্রথম বই ‘পেবলস ইন দ্য স্কাই’, যা জয় করে নেয় সাধারণ পাঠকের মন। এরপর একের পর এক লেখা বের হতেই থাকে তাঁর। তাঁর সৃষ্ট সাহিত্যকর্মের মূল আধেয় হলো সায়েন্স ফিকশন, পপুলার সায়েন্স, রহস্য ইত্যাদি। সৃজনশীল মেধাসম্পন্ন এই লেখক ৫০০টিরও বেশি বই রচনা ও সম্পাদনা করেছেন। জনপ্রিয় লেখক আইজ্যাক আসিমভ এর বই সমূহ হলো, ‘আই,রোবট (১৯৫০)’, ‘ফাউন্ডেশন (১৯৪২)’, ‘দ্য এন্ড অব ইটারনিটি (১৯৫৫)’, ‘দ্য কেভস অব স্টিল (১৯৫৩)’, ফ্যান্টাস্টিক ভয়েজ (১৯৬৬)’ ইত্যাদি। তাঁর রচিত উপন্যাসই শুধু নয়, তুমুল জনপ্রিয় তাঁর ছোটগল্পগুলোও। আসিমভ এর রচনাগুলো থেকে নির্মিত হয়েছে বেশ কয়েকটি বড় বাজেটের চলচ্চিত্র, যার মাঝে আছে ‘আই,রোবট (২০০৪)’, ‘বাইসেন্টেনিয়াল ম্যান (১৯৯৯)’ ইত্যাদি। বিশ্বজোড়া প্রকাশিত আইজ্যাক আসিমভ এর বই সমগ্র জয় করে নিয়েছে সায়েন্স ফিকশন পাঠকদের মন। তাঁর বই থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বিশ্বের নামিদামী পরিচালক তৈরি করেছেন চলচ্চিত্র, বানিয়েছেন সিরিজ। ১৯৮৭ সালে ‘সায়েন্স ফিকশন রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকা’ তাকে ‘গ্র্যান্ড মাস্টার অব সায়েন্স ফিকশন’ সম্মানে ভূষিত করে। তাঁর লেখা ‘ফাউন্ডেশন (ট্রিলজি)’ ১৯৬৬ সালে এনে দেয় ‘হুগো এওয়ার্ড’, ‘দ্য গডস দেমসেল্ভস’ এনে দেয় একইসাথে ‘হুগো’ ও ‘নেবুলা’ অ্যাওয়ার্ড। কল্পবিজ্ঞানের এই মহা কারিগর ১৯৯২ সালের ৬ এপ্রিল ব্রুকলিনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।