"প্রাচীন সভ্যতা সিরিজঃ ৮টি বইয়ের রকমারি কালেকশন" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ সভ্যতার ইতিহাস লেখায় নিজেকে যুক্ত রেখেছি প্রায় দেড় দশক। এ-সংক্রান্ত আমার লেখা বই। সাধারণ পাঠক ও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ও প্রয়ােজন কিছুটা মেটায়। প্রাচীন পৃথিবী নামে ছােটদের জন্য আমার লেখা প্রাচীন সভ্যতার ইতিহাস বিষয়ে একটি বই এক দশক আগে প্রকাশিত হয়। এর পর থেকেই একটি শূন্যতা অনুভব করছিলাম। আমি বিশ্বাস করি, শিক্ষাজীবনের শুরু থেকে শিশু-কিশােরের মধ্যে খুব সাধারণভাবে হলেও বিশ্ব ইতিহাস, বিশেষ করে সভ্যতার ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা থাকা জরুরি। এর ভেতর দিয়ে নিজেকে ও জগৎকে জানার আগ্রহ বেড়ে যায়। কিন্তু এই আগ্রহ তৈরির জন্য প্রয়ােজন ইতিহাসের তথ্যে ভারাক্রান্ত কোনাে বই নয়—রঙিন ছবিতে সমৃদ্ধ সহজ, সাবলীল ভাষায় যতটা সম্ভব নির্ভার তথ্যে সীমিত পৃষ্ঠায় বিশ্বসভ্যতা উপস্থাপন। এই দায়িত্ববােধ থেকে নিজেকে যখন প্রস্তুত করছিলাম, তখন এগিয়ে এল প্রথমা প্রকাশন। প্রকাশকের আগ্রহের সঙ্গে আমার চিন্তা মিলে যাওয়ায় আমি বই লেখায় নিজেকে যুক্ত করলাম। প্রতিনিধিত্বশীল কয়েকটি সভ্যতা নিয়ে প্রাচীন সভ্যতা সিরিজ নামে আট খণ্ডে বই লেখার যাত্রা শুরু এভাবেই। এই সিরিজের সপ্তম বইটি গ্রিক সভ্যতা নিয়ে লেখা। প্রাচীন পৃথিবীতে নগরসভ্যতার বিকাশ ঘটেছিল প্রধানত এশিয়া ও আফ্রিকার নানা অঞ্চলে। ইজিয়ান সভ্যতার মধ্য দিয়ে ইউরােপে একসময় নগরসভ্যতার যাত্রা শুরু হয়। এরপর ইউরােপের গ্রিস ও রােমে দুটো পূর্ণাঙ্গ নগরসভ্যতার বিকাশ ঘটে। গ্রিসের সভ্যতা মিসর, মেসােপটেমিয়া বা চীনের মতাে কোনাে বিশাল ভূখণ্ডে এককভাবে গড়ে উঠেছে বলা যাবে না। খাড়া খাড়া পাহাড়ে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল এক অঞ্চলের সঙ্গে অন্য অঞ্চলকে। তাই এক একটি নগরই রাষ্ট্র হয়ে যায়। এর মধ্যে দুটো নগররাষ্ট্র স্পার্টা ও এথেন্স সভ্যতার ইতিহাসে সামনে চলে আসে। ভিন্ন ধারার এই দুই নগররাষ্ট্রের নানা অগ্রগতির কথা তুলে ধরা হয়েছে বইটিতে। গ্রিসের সভ্যতা বিবর্ণ হয়ে যাওয়ার আগেই গ্রিসের উত্তরাঞ্চলে মেসিডােনিয়া রাজ্যের রাজা মহান আলেকজান্ডার গ্রিক সভ্যতার ওপর অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর তিনি মিসরসহ প্রাচ্যের অনেক দেশও দখল করে নেন। পরে আলেকজান্ডার প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য জ্ঞান-বিজ্ঞানের মিলন ঘটিয়ে একটি নতুন সংস্কৃতির বিকাশ ঘটান। জন্ম নেয় আরেকটি সভ্যতার। এই সভ্যতা ইতিহাসে হেলেনিস্টিক সভ্যতা নামে পরিচিত। মূল গ্রিস আর হেলেনিস্টিক সভ্যতার নানা কথায় সাজানাে হয়েছে এ বইটি।
ড. এ কে এম শাহনাওয়াজ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় ১৯৬০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তাঁর জন্ম। পৈতৃক নিবাস বিক্রমপুরের টঙ্গীবাড়ি উপজেলার গনাইসার গ্রামে। পিতা মরহুম মোসলেম চোকদার ও মা মরহুমা রেজিয়া বেগম। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে১৯৮২ ও ১৯৮৩ সালে যথাক্রমে স্নাতক সম্মান ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট থেকে ফারসি ভাষায় সার্টিফিকেট কোর্স সম্পাদন করেন। ১৯৮৫ সালে। ফোর্ড ফাউন্ডেশনের বৃত্তি নিয়ে ভারতের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি.এইচ.ডি. অর্জন করেন ১৯৯৪ সালে। সত্তর ও আশির দশকে ‘শাহনাজ কালাম’ লেখক নামে ছড়া ও গল্প লিখিয়ে হিসেবে পরিচিত হলেও পেশা জীবনে এসে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের পাঠক্রমভিত্তিক গ্রন্থ রচনা এবং শিল্প-সংস্কৃতি ও প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ক গ্ৰন্থ ও প্ৰবন্ধ লেখায় বিশেষ মনোনিবেশ করেন। ড. শাহনাওয়াজের রচিত ও সম্পাদনাকৃত গ্রন্থের সংখ্যা অর্ধশতাধিক। এক যুগের বেশি সময়কাল ধরে তিনি বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে রাজনীতি ও সমাজ-সংস্কৃতি বিষয়ক কলাম লিখে আসছেন।