"মরণ একদিন আসবেই "বইটির ভূমিকা: إن الحمد لله نحمده ونستعينه ونستغفره ونعود بالله من شرور أنفسنا ومن سيئات أعمالنا من يهده الله فلا مضل له ومن يضلل فلا هادي له وأشهد أن لا إله إلا الله وحده لا شريك له وأشهد أن محمدا عبده ورسوله মরণ একদিন আসবেই' একথা বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে অবগত। পরে যখন কুরআন হাদীছের কিছু জ্ঞান অর্জন করলাম তখন আরও দৃঢ়ভাবে বুঝলাম যে, মানুষ মরণশীল। মরণ একদিন চলেই আসবে, মরণকে এড়ানাের বিকল্প কোন পথ নেই। তবুও মরণকে নিয়ে ভাবতাম না। আমার শ্বশুর বৃদ্ধ মানুষ, মসজিদে যেতেন-আসতেন। আমি আমার শ্বশুর বাড়ী থেকে বের হলে অনেক দূর পর্যন্ত আমার পিছে পিছে আসতেন। আমি তার লাঠি ধরে চলার গতি দেখে ভাবতাম, মরণ একদিন চলেই আসবে। দেখতে দেখতেই সেদিন চলে আসল। ২০০৬ সালের ২রা জুন বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টার সময় তিনি মৃত্যুবরণ করলেন। আমরা তার জন্য আল্লাহ্র নিকট ক্ষমাপ্রার্থনা করি, আল্লাহ যেন তাকে ক্ষমা করেন এবং জান্নাতে সুউচ্চ আসন দান করেন। আমীন! তার মৃত্যুর পর থেকেই মরণ একদিন আসবেই’ এ মর্মে একটি বই লিখার স্বাদ জাগে। তাই কিছু দিন পর লেখার কাজ আরম্ভ করলাম। কিন্তু বইটি লেখা শেষ হতে না হতেই ১৪ই রামাযান, ২০০৭ সালের ২৬শে সেপ্টেম্বর রােজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার সময় আমার আব্বাও মৃত্যুবরণ করলেন। আমরা তার জন্য আল্লাহর নিকট মাগফিরাত কামনা করি, আল্লাহ যেন তাকেও ক্ষমা করেন এবং জান্নাতে সুউচ্চ আসন দান করেন। আমীন! মানুষ মরণের কথা জানে, মানুষের সামনে মানুষ রাত-দিন মারা যাচ্ছে। কিন্তু মানুষ একটুও ভ্রুক্ষেপ করে না যে, তাকেও একদিন মরতে হবে। সে একথাও ভাবে না যে, মরণের পর তার পরিণতি কি হবে? তাই এই বইটি লিখে মানুষকে মরণের কথা স্মরণ করাতে এবং মরণের পর মানুষের কি ভয়াবহ অবস্থা হবে তা অবগত করাতেই আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। কেননা নবী করীম কাে বলেন, তােমরা বেশী বেশী মরণকে স্মরণ কর। মরণ মানুষের মরণ একদিন আসবেই জীবনের স্বাদ নষ্ট করে দেয়। রাসূল সুর আরও বলেন, “তােমরা কবর যিয়ারত কর, কবর তােমাদের মরণ স্মরণ করায়। বইটি গত রামাযানে বের করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু শত ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সম্ভব হয়নি। কারণ আল্লাহর ইচ্ছায় সবকিছু হয়। তাই আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর তাবলীগী ইজতেমা ২০০৮ উপলক্ষ্যে বইটি প্রকাশিত হ’ল-ফালিল্লাহিল হামদ। বইটি প্রকাশে আমাকে একান্তভাবে সহযােগিতা করেছে আমার সহধর্মিণী উম্মু। মরিয়ম। সে আমার অন্যান্য বইগুলিতেও যথাসাধ্য সহযােগিতা করেছে। আমি তার জন্য প্রাণখােলা দো'আ করছি, আল্লাহ যেন তাকে এর উত্তম পারিতােষিক দান করেন এবং আমার লেখনী কাজে আরাে সহযােগিতা করার তাওফীক দান করেন-আমীন! আমার স্নেহাস্পদ ছাত্র মুকাররম বিন মুহসিন বইটির কম্পােজসহ বিভিন্নভাবে সহযােগিতা করেছে। এছাড়া আরাে অনেকে বিভিন্নভাবে বইটি প্রকাশে আমাকে সহযােগিতা করেছেন, তাদের সবার জন্য দো'আ করছি। আল্লাহ যেন তাদের সবাইকে উত্তম প্রতিদান প্রদান করেন-আমীন! অনেক সতর্কতা অবলম্বন সত্ত্বেও বইটিতে কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি ও মুদ্রণ প্রমাদ থেকে যাওয়া অসম্ভব নয়। সে বিষয়ে সম্মানিত পাঠকগণ অবহিত করলে পরবর্তী সংস্করণে তা সাদরে বিবেচিত হবে ইনশাআল্লাহ্। বইটি পাঠ করে মুসলিম নর-নারী মরণকে স্মরণ করে তার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারলে আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা স্বার্থক বলে মনে করব।
জন্মঃ শায়খ আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জেলা চাপাইনবাবগঞ্জের দেবীনগর উপজেলার অধীন মাওলা বক্স হাজীরটলা গ্রামে এক ধার্মিক পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন।পড়াশোনাঃ এলাকার মক্তবে শিক্ষা জীবনের হাতে খড়ি হওয়ার পর তিনি নাচল নবাবগঞ্জ মাদরাসা থেকে হাদীসের অন্যতম কিতাব মিশকাত শরীফ পর্যন্ত পড়েন। তারপর উচ্চ শিক্ষার আশায় ভারত গমন করেন এবং উত্তর প্রদেশের দারুল উলুম মউনাথভাঞ্জান থেকে দাওরা হাদীস শেষ করেন। তিনি দুই বার দাওরা হাদীস শেষ করেছেন। তারপর দেশে ফিরে কর্ম জীবনের পাশাপাশি ফাজিল ও কামিল পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করেন। তিনি হাদীস ও তাফসীর নিয়ে ১ম বিভাগে কামিল পাশ করেন। শায়খের বক্তব্যের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তিনি মাজহাব ও মাসলাক নির্বিশেষে আম মুসলমানদের উদ্দেশ্যে নসীহত মূলক বক্তব্য দেন । বিশেষ করে জান্নাত, জাহান্নাম, কিয়মাত, আদর্শ পরিবার, কে বড় ক্ষতি গ্রস্ত ইত্যাদি বিষয়ে তারবক্তব্য মাসলাক মাজহাব নির্বিশেষে সকল মুসলমানের হৃদয়ে নাড়া দিতে সক্ষম। ইসলামী শিক্ষাকে বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য তিনি অনেক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন যেমন: আল জামিয়াতুস সালাফিয়া, রুপগঞ্জ নারায়নগঞ্জ, আল মাদ্রাসাতুস সালাফিয়া, আটমল, বগুড়া, বীরকুস্টিয়া দারুল হাদীস সালাফিয়া মাদরাসা বগুড়া। এবং অনেক প্রতিষ্ঠানকে সামনের দিকে এগিয়ে দিতে সহযোগিতা করেন। যেমন আল মারকাজুল ইসলামী আস সালাফী, রাজশাহী এবং মহিলা সালাফিয়া মাদরাসা, রাজশাহী।