ফ্ল্যাপে লেখা কথা বঙ্গবন্ধুর জীবনের রূপরেখা মোটামুটি আমরা সবাই জানি। বাংলাদেশের পটভূমিও আমাদের অজানা নয়। তাঁর জীবন তো এক অর্থে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামেরাই ইতিহাস। ১৯৪৮, ১৯৫৪,১৯৬৬, ১৯৬৯, ১৯৭০-প্রতিটি বছর আমাদের ইতিহাসের মাইলফলক এবং প্রতিটির সঙ্গে তিনি জড়িত। ১৯৬৬-১৯৭০ অনেকের ধারণা এ সময়কালের মধ্যে বাংলাদেশের আন্দোলণের সৃষ্টি। ড. মুনতাসীর মামুন এ গ্রন্থে দেখিয়েছেন ১৯৪৮ সাল থেকেই বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি অস্পষ্ট ধারনা ছিল বঙ্গবন্ধুর। ক্রমে তা পরিচিত পায় ছয় দফা এবং আরো পরে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে। এ তো গেল বাহ্যিক দিক। কিন্তু স্বাধীনতা আনার জন্য আরো অনেক উপাচারের দরকার ছিল। এর একটি ছিল ভারতের সঙ্গে যো্গাযোগ। অন্তরালে এই ঘটনা গুলি অধিকাংশ মানুষেরই অজানা।সেই অজনা, অন্তরালের ঘটনাগুলিকে ভিত্তি করে অধ্যাপক মামুন তৈরি করেছেন স্বাধীনতা আন্দোলনের এক নতুন বয়ান। আমাদের স্বাধীনতার পটভূমি হিসেবে এই বয়ান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইতিহাস যে এত রোমাঞ্চকর হতে পারে বা সাহিত্য হতে পারে তা অধ্যাপক মামুনের এই গ্রন্থ না পড়লে বোঝা যাবে না। বাংলাদেশের অন্যতম ঐতিহাসিক ড. মামুন যাঁর কৃতিত্ব ইতিহাসকে সাধারণ্যে পৌঁছে দেয়ার ,এ-গ্রন্থে সে কাজটুকুই করেছেন। বঙ্গবন্ধু কীভাবে আমাদের স্বাধীনতা এনেছিলেন বইটি পড়া এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা।এই রচনার সঙ্গে সংকলিত হয়েছে বঙ্গবন্ধুসংক্রান্ত আরো আটটি প্রবন্ধ।
সূচি * বঙ্গবন্ধু কীভাবে আমাদের স্বাধীনতা এনেছিলেন * বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহামানের শাসনকাল * বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ * কেন মনে থাকে ৭ই মার্চ * বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তন * দুই বন্ধু * যে হত্যার পেছনে ছিল গভীর ষড়যন্ত্র * বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করাই ছিল যেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুরের অপরাধ! * বাঙালির মন ও সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি
মুনতাসীর মামুনের পৈতৃক বাড়ি চাঁদপুর জেলার গুলবাহার গ্রামে, কিন্তু তিনি ঢাকার ইসলামপুরে নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে। সেখানেই পোর্ট ট্রাস্ট প্রাইমারি ও হাই স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা নেন। পরে ভর্তি হন চট্টগ্রাম কলেজে। অতঃপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে স্নাতক, স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন এবং একই বিভাগ থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। শিক্ষাজীবনে সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত ছিলেন, কাজ করেছেন ‘দৈনিক বাংলা বিচিত্রা’য়। এছাড়াও স্বাধীনতার পর প্রথম ডাকসু নির্বাচনের সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংসদের সভাপতি হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৭৪ সালে প্রভাষক পদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপরই তার বিভিন্ন অনুবাদগ্রন্থ, চিত্র সমালোচনা এবং ইতিহাস বিষয়ক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। ইতিহাসের প্রতি তার ভালোবাসা এবং দায়িত্ববোধ থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে 'মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ গবেষণা ইন্সটিটিউট' প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলার ইতিহাসকে তিনি প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চান- এই উদ্দেশ্যেই মুনতাসীর মামুনের বই লেখা। একজন শিক্ষক হওয়ার পাশাপাশি তিনি একজন ইতিহাসবিদ ও সাহিত্যিক। ঢাকা শহর নিয়ে তার রয়েছে গবেষণাপত্র। গড়ে তুলেছেন ‘সেন্টার ফর ঢাকা স্টাডিজ’ নামের ইতিহাস চর্চার একটি প্রতিষ্ঠান, যেখান থেকে মুনতাসীর মামুন এর বই সমগ্র তথা ১২টি গবেষণামূলক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। মননশীল এই লেখক দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে লিখে যাচ্ছেন নানা বিষয়ে। মুনতাসীর মামুন এর বই সমূহ এর বিষয় বহুমাত্রিক। তার গ্রন্থের সংখ্যা ২২০, যাতে স্থান পেয়েছে গল্প, প্রবন্ধ, গবেষণা এবং অনুবাদ সাহিত্য। শিশু-কিশোরদের নিয়েও তার লেখা গ্রন্থ প্রশংসা কুড়িয়েছে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনেও তার সক্রিয় উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়। বর্তমানে এই ইতিহাসবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিষয়ের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।