ফ্ল্যাপে লিখা কথা আমাদের দেশে শিল্পকলা বিশেষ করে চিত্রকলার উপর গ্রন্থের সংখ্যা কম। চিত্রকলা ব্যবহারিক বিষয় হলেও এই সম্পর্কিত নানা প্রশ্ন ও চিন্তা চিত্রকর এবং চিত্ররসিকদের আলোড়িত করে। শিল্প সমালোচক ও চিত্রকর এই সব প্রশ্নের উত্তর খোঁজেন নিজস্ব ধারায়। পরবর্তী প্রজন্মের শিল্পচিন্তায় এই ধারা কখনো পুষ্টি জোগায়, কখনো সমান্তরাল কোন ধারা সৃষ্টিতে অনুপ্রেরণা জোগায়। শিল্পী হাসি চক্রবর্তীর শিল্প বিষয়ক প্রবন্ধগুলিতে শিল্পের গভীর কিছু প্রশ্নে উত্তর খোঁজা হয়েছে সহজ ভাষায়। গ্রন্থে চট্টগ্রামের শিল্পচর্চার উপর গবেষণাধর্মী একটি লেকা রয়েছে যাতে লেখক চট্টগ্রামের শিল্পচর্চার মূল উৎসকে আবিষ্কার করেছেন। শিক্ষা বিষয়ক প্রবন্ধে শিক্ষার সাথে নৈতিকতা ও শিল্পের মেলবন্ধনের কথা বলতে চেয়েছেন যা যুগোপযোগী ও জরুরী। প্রিয়জনের বিয়োগে লেখা শোকগাঁথা-বিষয়ক প্রববন্ধগুলি মুদ্রিত হয়েছে এই ভেবে যে হাসি চক্রবর্তীর এই প্রিয়জনরা আমাদের অনেকেরই প্রিয়জন।
আমাদের বিশ্বাস গ্রন্থটি শিল্পী, শিল্পরসিক ও সাধারণ পাঠকের কাছে সমাদৃত হবে।
সূচিপত্র * একুশের চেতনায় চিত্রকলা * শিল্পীর তুলিতে বঙ্গবন্ধু * আমাদের শিল্পকলা ও শিল্পদর্শন * সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী চিত্রকলা * চট্টগ্রামে শিল্পকলা ও শিল্পচর্চা * শিল্পের অভিভাবকত্ব * ভ্যানগগ্ ও তাঁর ছবির ভাবনা-চিন্তা * নায়কোচিত এক বীরের মৃত্যু * চির অমাবস্যায় অনন্ত-জ্যোৎস্না * শিল্পী রশীদ চৌধুরীর জন্মদিনে * একজন শিষ্যের স্বীকারোক্তি * আবহমান বাংলার চিত্রকলা * সামাজিক জীবন তথা পরিবার * শিক্ষা : শিল্পাশ্রিত * শিক্ষক ও চারুকলা * শিক্ষা : প্রাসঙ্গিক ভাবনা * শিক্ষা : পুনর্বাসন * আলো চাই, আর অন্ধকার নয় * বর্ণহীন বর্ণ- পরিচয় * দায়বদ্ধতা : সবার * পরিত্রাণের উপায় আত্মশুদ্ধি * আপনি আচরি ধর্ম পরকে শেখাও
সত্তর দশকে বাংলাদেশের চিত্রশিল্পের যে প্রবল ধারাটি বিষয়ে ও রীতিতে আন্তর্জাতিকতার উদ্বোধন ঘটিয়েছিল, হাসি চক্রবর্তী সেই ধারার শিল্পী। প্রায় চল্লিশ বছর ধরে ছবি আকঁছেন তিনি। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী কর্তৃক আয়ােজিত প্রথম নবীন শিল্পী চারুকলা প্রদর্শনী ১৯৭৫” তে চিত্রকলা মাধ্যমে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার, তৃতীয় নবীন শিল্পী চারুকলা প্রদর্শনী ১৯৭৭' তে সকল মাধ্যমে সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কার লাভ করেন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস, ১৯৮৪' প্রতিযােগিতায় বিশেষ। স্থান লাভ করেন। দেশে বিদেশে তার সাতটি একক চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী আয়ােজিত জাতীয় শিল্প প্রদর্শনী '৭৬, ৭৭, ৮৫, '৮৬, '৯২, নবীন শিল্পকলা প্রদর্শনী '৭৬, '৮০, '৮২, ৮৯ এশিয়ান দ্বিবার্ষিক প্রদর্শনী '৯৩, ৯৫, ৯৭, ৯৯, ২০০১ সহ ইউকে, জার্মানী, বুলগেরিয়া, চেকোস্লোভাকিয়া, ভারত, পাকিস্তান, জাপান, হারারে, জিম্বাবুয়ে, জাম্বিয়া, কিউবা ইত্যাদি দেশে আয়ােজিত বিভিন্ন যৌথ শিল্পকলা প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেন। ছবি আঁকার পাশাপাশি হাসি চক্রবর্তী চিত্রকলা ও শিক্ষা বিষয়ে লেখালিখি করেছেন। তাঁর শিল্পচর্চার প্রধান মাধ্যম তেলরঙ, তবে ড্রইং এ তার মুন্সিয়ানার কথা সর্বজনবিদিত। হাসি চক্রবর্তী ১৯৪৮ সালে বরিশালে জন্মগ্রহন করেন। তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ চারু ও কারুকলা কলেজ থেকে বি.এফ.এ, ১৯৭৩ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এফ.এ এবং ১৯৯১ সালে সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বি.এড ডিগ্রী লাভ করেন। পেশাগত জীবনে হাসি চক্রবর্তী একজন শিক্ষক; চট্টগ্রাম চারুকলা কলেজ ও চট্টগ্রাম শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ শিক্ষকতা করেছেন। দীর্ঘসময় চট্টগ্রাম। চারুকলা কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্বও পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি অবসর জীবন যাপন করছেন।