দক্ষিণ এশিয়ার শহর-নগরগুলির ওপর গবেষণালব্ধ গ্রন্থের সংখ্যা এখন পর্যন্ত খুবই সামান্য। বাংলাদেশের শহর-নগরকে নিয়ে ইতিহাস চর্চার দৃষ্টান্ত আরো কম। ব্যতিক্রম হিসাবে প্রফেসর ড. শরীফ উদ্দিন আহমেদ-এর ঢাকা: ইতহাস ও নগর জীবন, ১৮৪০-১৯২১ গ্রন্থটি উল্লেখ করা যেতে পারে। এটি কেবল ব্যতিক্রমধর্মী গ্রন্থই নয় বরং বর্তমান বাংলাদেশের রাজধানী মহানগরী ঢাকার এক ক্রান্তিকালের ইতিহাসও বটে। অতি সমৃদ্ধ ও উন্নত এবং ক্ষমতাবান একটি মুগল রাজধানী হিসাবে ঢাকা কি করে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আঘাতে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছিল এবং নগরটি কিভাবে বহু বৈরী অবস্থা ও পরিবেশকে অতিক্রম করে তার নিজস্ব ভৌগোলিক অবস্থানগত গুরুত্ব এবং ঐশ্বর্যমন্ডিত পশ্চাদভূমিকে মূলধন করে আবারো তার হৃত গৌরব ফিরে পায় এবং পুনরুজ্জীবন লাভ করে সে ইতিহাস অনেকেরই অজানা। ড. শরীফ ঢাকার পুনরুজ্জীবনের ইতিহাস রচনা করা ছাড়াও এই পুনরুত্থানের বিভিন্ন ধাপ এবং এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব নিয়েও আলোচনা করেছেন। গ্রন্থে উপস্থাপিত তথ্য অনেক ক্ষেত্রেই চমকপ্রদ এবং বিস্ময়কর। ঢাকাভিত্তিক পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত যে নতুন এক মধ্যবিত্ত ও বুদ্ধিজীবী শ্রেণী গড়ে উঠেছিল, যারা পরবর্তী কালে দেশের রাজনৈতিক এবং সামাজিক অঙ্গনে নেতৃত্ব দেয়ার অধিকার অর্জন করেছিলেন ড. শরীফ তারও এক প্রাঞ্জল বিবরণ দিয়েছেন। নিঃসন্দেহে এই গ্রন্থটি উপমাহাদেশের শহর ও নগর বিষয়ক গ্রন্থের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান করে নিতে সক্ষম হবে।