“কেমন করে বাস্তববাদী হবেন” বইয়ের কিছু কথা: অতীত নয়, বর্তমানই আমাদের উপাস্য। বাস্তববাদীরা কখনও অতীত আঁকড়ে বসে থাকেন না। যদিও যে কোন মানুষের কথা বেশি করে বলতে ভালবাসে। অতীতকে নিয়ে যদি গর্ব করার কিছু থাকে তাহলে সে গর্ব অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু বর্তমান যদি অতীতের রেকর্ডকে স্নান করে না দিতে পারে তাহলে তা লজ্জা। দেখা যায়, যারা গৌরবে অতীতের সমকক্ষ হতে পারে না তারাই বর্তমানের ব্যর্থতাকে ঢাকা দেবার জন্য অতীতের গৌরবের কথা বেশি করে বলে। অতীতে তাদের কি ছিল সেটাই সাতখানা করে লোককে শোনায়। প্রথম প্রজন্মের উদ্ধাস্তুরা যারা ছিন্নমূল হয়ে একদেশ থেকে আর এক দেশে যান তারাইনিয়ে বিনিয়ে লোককে শোনান, দেশে তঁদের কী বিপুল পরিমাণ সম্পদ ছিল। পরবতী প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা যখন নিজেদের পায়ে দাঁড়িয়ে ভিনদেশে যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করে তখন আর তারা অতীতের কথা তোলেনা। যদি কখনও গৈীরবে আপনার পূর্বপুরুষের সমকক্ষ হতে না পারেন, তাহলে কদাচ লোকের কাছে বংশের বড়াই করবেন না। এর ফলে আরও হাস্যাস্পদ হবেন। পিতৃপরিচয় নয়, আত্মপরিচয়ের গৈীরবই প্রকৃত গীরব। অসফল ব্যক্তিরা তাদের কৃতী আত্মীয়দের নামে পরিচিত হতে চায়। ভাবে এই বিচ্ছরিত গৈীরবে তাদের মর্যাদা বাড়বে। প্রকৃতপক্ষে তা কখনও বাড়ে না। আপনি যদি নিজে যোগ্য হন, তাহলেই কৃতী আত্মীয়দের গৈীরব আপনার সঙ্গে যুক্ত হয়। পরীক্ষায় যেমন সব বিষয়ে ভাল নম্বর পেলে তবেই ফাস্ট ডিভিশন তোলার জন্য অ্যাডিশনাল সাবজেক্টের নম্বর কাজে লাগে।
ড. পার্থ চট্রোপাধ্যায়ের জন্ম উত্তর ২৪ পরগনা জেলার গোবরডাঙ্গা গ্রামে। ১৯৫৯ সালে স্থানীয় কলেজ থেকে গ্রাজুয়েট হয়ে তিনি মাত্র ত্রিশ টাকা সম্বল করে কলকাতায় এসে সংবাদপত্র যোগ দেন। সাংবাদিকতার চাকরির সঙ্গে সঙ্গে স্নাতকোত্তর পড়াশোনা চলতে থাকে। তারপর হঠাৎই কমনওয়েলথ সাংবাদিক বৃত্তি পেয়ে ব্রিটেনে চলে যান সংবাদপত্র সম্পর্কে হাতে-কলমে পাঠ নিতে। ১৯৬১ তে দেশে ফিরে এক নাগাড়ে চারটি পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেছেন ৩৭ বছর ধরে। বেশির ভাগ সময় ছিলেন আনন্দ বাজারে। চার বছর ‘পরিবর্তন’ পত্রিকার সম্পাদনা করেন। ১৯৯৮ সালে অসম বিশ্ববিদ্যালয়ে গণজ্ঞাপন বিভাগের অধ্যক্ষ ও ডিনের পদে যোগ দেন। ২০০২ সালে অবসর নিয়ে এখন সর্বসময়ের লেখক। সারা প্রথিবী ঘুরেছেন বহুবার। বহু পুরস্কার ও সম্মান পেয়েছেন। ১৯৭৪ সালে পান আন্তর্জাতিক জেফারসন ফেলোশিপ। ইংল্যান্ড ও আমেরিকায় ছিলেন বেশ কিছুকাল। বই এর সংখ্যা ৮৮। গল্প উপন্যাস, ভ্রমণ, প্রবন্ধ। এখন বিশেষ মনোযোগ দিয়েছেন জীবনবাদী বই লেখায় আর যুব ও ছাত্রদের মধ্যে মূল্যবোধ ও ব্যক্তিত্বগঠনের জন্য তৈরি করেছেন সিপডাভে নামে একটি প্রতিষ্ঠান।