শিল্প-সাহিত্য : সমাজ-চৈতন্যের এক রূপ ‘পথ চলেছিল একটানা বাইরের দিকে, তার নিজের মধ্যে নিজের অর্থ ছিল না। পৌঁছল এসে ঘরে, সেখানে অর্থ পাওয়া গেল, আরম্ভ হল ভিতরের লীলা। মানুষে এসে পৌঁছল সৃষ্টি ব্যাপার, কর্মবিধির পরিবর্তন ঘটল; অন্তরের দিকে বইল তার ধারা। অভিব্যক্তি চলছিল প্রধানত প্রাণীদের দেহকে নিয়ে, মানুষে এসে সেই প্রক্রিয়ার সমস্ত ঝোঁক পড়ল মনের দিকে।' জীবজগতের বিবর্তনের ধারায় মানুষ কী করে পৃথক হয়ে গেল অন্যান্য প্রাণী থেকে, রবীন্দ্রনাথের এই মন্তব্য ইঙ্গিত করছে সেই দিকে। মানবেতর প্রাণীর বিকাশ হয়েছে দেহের দিক থেকে, কিন্তু মানুষের বিকাশ একই সঙ্গে দৈহিক ও মানসিক। দেহের বিকাশের ক্ষেত্রে দেখা যায়, মানুষ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে, দেহের চতুষ্পদী ছন্দ থেকে হাত দুটিকে দিয়েছে মুক্তি। আর মনের দিক থেকে মানুষ জীবনধারণের প্রাত্যহিকতাকে একমাত্র সত্যরূপে আঁকড়ে না ধরে পরার্থে আত্মোৎসর্গ করেছে, প্রকৃতির সীমাশাসন লঙ্ঘন করেছে, নিত্যনূতন শিল্প-সাহিত্য সৃষ্টি করেছে। দেহের দিক থেকে হাতের মুক্তি ও মনের দিক থেকে শিল্প-সাহিত্য রচনা মানবইতিহাসের দুটি উল্লেখ্য ঘটনা। বিশ শতকের ত্রিশের দশকের গোড়ার দিকে রবীন্দ্রনাথ ‘মানুষের ধর্ম’ আলোচনা কালে নিজস্ব দৃষ্টিকোণ থেকে মানবসভ্যতা বিকাশের যে রূপরেখা অঙ্কন করেছেন, তার সঙ্গে গত শতকের শেষার্দ্ধে ভিন্ন প্রান্ত থেকে উচ্চারিত মনীষী এঙ্গেলস-এর অভিমতের সাদৃশ্য লক্ষ্য করার মত।