"বাংলা সাহিত্যের ইতিকথা-৪র্থ পর্যায় (রবীন্দ্রযুগ: দ্বিতীয় পর্ব) " বইয়ের পূর্বভাষ, “বাংলা সাহিত্যের ইতিকথা”র চতুর্থ, তথা শেষ পর্যায় এটি। ১৯৫৪তে প্রথম পর্যায় গ্রন্থ প্রথম মুদ্রিত প্রকাশ পেয়েছিল, রচনার উদ্যম শুরু হয়েছিল আসলে পুরো চার দশক আগে। মূল ভাবনার বয়স অবশ্য আরো পুরানো। সব মিলিয়ে অতদিন পরে পিছু ফিরে দেখার অবকাশ নয় কেবল, প্রয়োজনও দেখা দিল এবারে। এ-লেখার গঠনেই কৈফিয়ত দেবার চাহিদা অনিবার্য : হয়ে আছে। প্রথমেই স্বীকার করতে হয়, চার পর্যায়ে সমাপ্ত এ-লেখা ইতিবৃত্তান্তের সম্পূর্ণতা একেবারেই দাবি করতে পারে না। তেমন রচনার সামর্থ্যই নেই বর্তমান লেখকের। আসলে একটা আকাঙক্ষাই আগাগোড়া এই উদ্যমটিকে পরিচালনা করেছিল। সন-তারিখ-তথ্যবৃত্তান্তের একান্ত নিগড় হতে বাংলা সাহিত্যের চলমান গতিপথকে বাঙালির সজীব জীবনস্রোতের সঙ্গে মিলিয়ে দেখার বিনীত চেষ্টা। সন-তারিখ, তথ্য-বৃত্তান্ত ইতিহাসের অনিবার্য। উপাদান; কিন্তু কেবল ঐটুকুই ইতিহাস নয়। প্রাচীন বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস পড়তে গিয়ে আক্ষেপ থেকেই যেত,—“চণ্ডীদাস সমস্যা’র তর্কবিতর্কের বেড়াজালে চণ্ডীদাসের অপরূপ পদ-লালিত্যের পরিচয় সন্ধানের চাহিদাই কেমন মিলিয়ে যেত বলে। কৃত্তিবাসের জীবৎকালের সীমা নির্ধারণ আর তার পৃষ্ঠাপােষকের সঠিক পরিচয় নির্ণয়ের অতিব্যস্ততায় তার অবিস্মরণীয় কবিকৃতি কেমন বিস্মরণের ভারে চাপা পড়ে যেত। মনে হত, সাহিত্য তাে আসলে জীবনসম্ভব! সাহিত্য যেখানে জীবন্ত, সেখানে সে একান্তই জীবনসংলগ্ন। সাহিত্যের ইতিহাস আসলে পারিপার্শ্বিক জীবনেরই বহমানতার ইতিহাস। সাহিত্যের ইতিহাসের গভীরে জীবনের চলার রূপরেখাটি ধরা কী যায় না? আসলে ঐ আন্তরিক জিজ্ঞাসারই ফল চার পর্যায়ে বিন্যস্ত “বাংলা সাহিত্যের ইতিকথা”। আরো একবার স্পষ্ট করে বলি, পুরো পথের আনুপূর্বিক মানচিত্র এনয় একেবারেই ; পথের মোটামুটি বাঁকগুলোর নিশানা ধরে কেবল প্রাথমিক একটি রূপরেখার খসড়া। একথা ভেবেই শুরুতে এ বই-এর নাম করেছিলাম “সাহিত্য সরণি”। সাহিত্যের পথ-পথের রূপরেখাটির দিশারি সে নাম অভিপ্রেত রচনা-চরিত্রেরও দিশা ধরতে চেয়েছিল। কিন্তু প্রথম প্রকাশকের তরফে চাহিদা ছিল ইতিহাস’বাচী স্পষ্ট একটি নামের। আর অভাবিত যোগাযোগে অধ্যাপক জগদীশ ভট্টাচার্য স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে গ্রন্থের বর্তমান নামটি জুগিয়ে দেন সানুগ্রহে। তাহলেও লেখার মূল পরিকল্পনা পাল্টায় নি কখনো।
Title
বাংলা সাহিত্যের ইতিকথা-৪র্থ পর্যায় (রবীন্দ্রযুগ: দ্বিতীয় পর্ব)