"মুসলিম ধর্মতত্ত্ব ও দর্শন" বইটি সম্পর্কে কিছু কথা: দর্শন ধর্ম ধর্মতত্ত্ব ধর্মদর্শন প্রভৃতি বিষয় এবং তাদের পারস্পরিক সম্বন্ধ নিয়ে বিভ্রান্তি ও ভুল বােঝাবুঝির অন্ত নেই। তাই মুসলিম ধর্মতত্ত্ব ও দর্শন নিয়ে। আলােচনা শুরু করার আগে প্রথমেই আলােচিত হয়েছে উল্লিখিত বিষয়সমূহের স্বরূপ ও পারস্পরিক সম্বন্ধ । এই প্রারম্ভিক আলােচনার সূত্র ধরেই এক এক করে এসেছে স্রষ্টা, জগৎ ও জীবন সম্বন্ধে । ইসলামী ধ্যান-ধারণা, ইসলামী আচার-অনুষ্ঠানঅনুশীলন, আইন-অনুশাসন, মুসলিম ধর্মতাত্ত্বিকদার্শনিক সম্প্রদায়সমূহের উদ্ভব ও বিকাশের প্রসঙ্গ। মধ্যযুগে সমগ্র ইউরােপ যখন নিমজ্জিত ছিল। কুসংস্কার ও ধর্মান্ধতার অতলে, তখন কোরআনহাদিসের প্রেরণাপুষ্ট মুসলমানরা আট-তেরাে শতকে কীভাবে জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চায় এক গৌরবােজ্জ্বল ঐতিহ্য রচনা করতে সক্ষম হয়েছিল, এ ঐতিহ্য চৌদ্দ-ষােলাে শতকের ইউরােপীয় রেনেসাঁ ও পরবর্তী মানবতাবাদী আন্দোলনসমূহকে কতটুকু প্রভাবিত করেছিল ; অতঃপর তেরাে-সতেরাে শতকে মুসলমানরা যে এক দুর্ভাগ্যজনক অবক্ষয়ের সম্মুখীন হলাে, এবং সবশেষে আঠারাে শতকের দিকে আরব, তুরস্ক,ভারতীয় উপমহাদেশ প্রভৃতি বিভিন্ন অঞ্চলের মুসলমানদের মধ্যে যে এক বুদ্ধিবৃত্তিক-ধর্মতাত্ত্বিক নবজাগরণ দেখা দিল – এ সবেরই ব্যাখ্যা ও মূল্যায়ন করা হয়েছে মুসলিম ধর্মতত্ত্ব ও দর্শনগ্রন্থে।
অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম ১৯৪৩ সালে কুমিল্লা শহর - সংলগ্ন জামবাড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫৮ সালে প্রবেশিকা এবং ১৯৬০ সালে আই. এ. পাশ করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে ভর্তি হন এবং ১৯৬৩ সালে বি. এ. অনার্স ও ১৯৬৪ সালে এম, এ, ডিগ্রি লাভ করেন। উভয় পরীক্ষায়ই তিনি প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান দখল করেন। কলা অনুষদের অন্তর্গত সকল বিভাগের পরীক্ষার্থীদের মধ্যে অনার্স ও সাবসিডিয়ারি বিষয়ে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ায় তিনি নীলকান্ত সরকার স্বর্ণপদক লাভ করেন। তিনি ১৯৭৩ সালে ব্রিটেনের। সেন্ট এনড্রজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে The Individual and the Absolute শীর্ষক থিসিসের ওপর পিএইচ, ডি. ডিগ্রি লাভ করেন। ড. ইসলাম ১৯৬৫ সালের ১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যােগদান করেন এবং এখনও প্রফেসর পদে অধিষ্ঠিত আছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যান, কলা। অনুষদের ডীন, উচ্চতর মানববিদ্যা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক, সূর্যসেন হলের প্রভােস্ট, গােবিন্দ দেব দর্শন গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক, এশিয়াটিক সােসাইটি অব বাংলাদেশ-এর সহসভাপতি এবং বাংলাদেশ দর্শন সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বপালন করেন। বর্তমানে তিনি উচ্চতর মানববিদ্যা গবেষণা কেন্দ্র এবং বাংলাদেশ দর্শন সমিতির সভাপতি। একজন লেখক হিসেবেও তিনি সুপরিচিত। তার কয়েকটি পাঠক। সমাদৃত গ্রন্থ : প্রাচীন ও মধ্যযুগের পাশ্চাত্য দর্শন, আধুনিক পাশ্চাত্য দর্শন, সমকালীন পাশ্চাত্য দর্শন, মুসলিম ধর্মতত্ত্ব ও দর্শন, জগৎ জীবন দর্শন, বাঙালির দর্শন; প্রাচীনকাল থেকে সমকাল, নীতিবিজ্ঞান ও মানবজীবন।