ফ্ল্যাপে লিখা কথা শ্রীকৃষ্ণ কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের প্রাক্কালে বলেছেন- ‘যদা যদাহি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত, অভ্যুত্থানমর্ধস্য তদাত্মাং সৃজাম্যহম্।’ সেই শ্রীকৃষ্ণ যখন দ্বাপরযুগের জম্মেছিলেন এবং কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের যখন তিনিই একরকম প্রধান নায়ক -তখন বুঝতে হবে যে ধর্মের গ্লানি ও অধর্মের অভ্যুত্থান ভালরকমই ঘটেছিল, পৃথিবীর মানুষ অত্যাচারে অবিচারে দুঃখে কষ্টে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল, রাজশক্তি তথা ক্ষাত্রশক্তি লোভ অসূয়া দ্বেষ হিংসা শূন্যগর্ভ -অহংকার ও আত্মনাশা বুদ্ধিতে আচ্ছন্ন এবং মতিভ্রান্ত হয়ে গিয়েছিল। শ্রীকৃষ্ণ কি ভারতকে তার পঙ্ক-শয্যা থেকে, নিত্য আত্মাবমাননা ও মালিন্য থেকে উদ্ধার করতে চেয়েছিলেন? চেয়েছিলেন কি সম্ভোগমত্ত মদগর্বিত নির্বোধ বিকৃত ক্ষাত্রশক্তির হাত থেকে দেশের শাসনক্ষমতা কেড়ে নিয়ে শুভবুদ্ধি সম্পন্ন সৎ মানুষের হাতে দেশের ভার তুলে দিতে? চেয়েছিলেন কি দরিদ্র, নিপীড়িত, মূঢ়, মূক সেইসব সাধারণ মানুষদেরই সঙ্ঘ-শক্তিকে শাসন শক্তিতে রূপান্তরিত করতে? এইজন্যই কি তাঁর বিখ্যাত ঘোষক শঙ্খের অন্য কোন নাম না দিয়ে পাঞ্চজন্য রাখা হয়েছিল? সেইজন্যই কি তিনি রাজসূয় যজ্ঞে সাদারণ মানুষদের পাদ-প্রক্ষালনের ভার নিয়েছিলেন? ‘পাঞ্চজন্য’ গ্রন্থের মহাভারতীয় কাহিনীর মধ্যে লেখক এই সব প্রশ্নেরই উত্তর সন্ধান করেছেন।
গজেন্দ্রকুমার মিত্র (জন্ম: ১১ নভেম্বর - মৃত্যু: ১৬ অক্টোবর ১৯৯৪) তার জন্ম ১১ই নভেম্বর কলকাতা শহরে। বাল্যশিক্ষা শুরু হয় কাশীর এংলো-বেঙ্গলী স্কুলে। কলকাতায় ফিরে এসে ঢাকুরিয়া অঞ্চলে গজেন্দ্রকুমার বসবাস শুরু করেন এবং বালিগঞ্জ জগদ্বন্ধু ইনস্টিটিউশনে ভর্তি হন। স্কুল জীবন অতিক্রম করে অতঃপর তিনি সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে ভর্তি হন। পড়াশোনা অসমাপ্ত রেখে বই এর ব্যবসায় যোগ দেন ও ১৯৪০ সাল পর্যন্ত্য বই বিক্রি করেছেন গজেন্দ্রকুমার। স্কুল শিক্ষা সমাপ্তির কিছু পরেই বন্ধু সুমথনাথের সঙ্গে মাসিক সাহিত্যিক পত্রিকা 'কথাসাহিত্য' শুরু করেন| ১৯৩৬ সালে তৈরি হয় মিত্র ও ঘোষ প্রকাশনা সংস্থা। গজেন্দ্রকুমারের প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস 'মনে ছিল আশা', গল্পগ্রন্থ 'স্ত্রিয়াশ্চরিত্রম' | ১৯৫৯ সালে তাঁর 'কলকাতার কাছেই' উপন্যাস আকাদেমি পুরুস্কারে সম্মানিত হয়| 'কলকাতার কাছেই', 'উপকন্ঠে', 'পৌষ-ফাগুনের পালা'-এই ট্রিলজিকে (ত্রয়ী উপন্যাস) আধুনিক বাংলা কথাসাহিত্যের অন্যতম উল্লেখযোগ্য উপন্যাস বলে গণ্য করা হয়| পৌষ-ফাগুনের পালা ১৯৬৪ সালে রবীন্দ্র পুরুস্কার পায়| গজেন্দ্রকুমারের লেখনীর বিচরনক্ষেত্র বিরাট ও ব্যাপক, সামাজিক উপন্যাস, পৌরানিক উপন্যাস, ঐতিহাসিক উপন্যাস, ছোট গল্প.কিশোর সাহিত্য-সর্বত্র তাঁর অবাধ গত| সুদীর্ঘ ষাট বছরের অধিককাল ধরে তাঁর কয়েক হাজার ছোটগল্প ও পঞ্চাশটিরও বেশি উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে| তিনি ছিলেন একজন প্রখ্যাত ভারতীয় বাঙালি লেখক, প্রকাশক ও অনুবাদক।