ফ্ল্যালে লিখা কিছু কথা বাংলাদেশ জয়ী হবেই। জয়ী বাংলাদেশের লড়াকু সাধারণ মানুষের। জয়ী হবে মুক্তিযুদ্ধে অপরিসীম ত্যাগ স্বীকারকারী এই জনপদের মানুষেরা।আনিসুল হক তার অরণ্যে রোদন কলামে সেই আশার কথাই শোনান। তিনি কঠিন রাজনীতির কথাও বলেন সহজ গল্প বলার ভঙ্গিতে । কৌতুক প্রিয়তা আর রসবোধ তার বড় গুন। লেখাগুলোরকে প্রাণবন্ত আন্তরিক করে তোলে সহজ আবেগময়তা। এই সব লেখা পড়ে পাঠকের উদ্দীপিত হন, কখনও ফিক হেসে ফেলেন,কখনও বা নিজের অজান্তেই পাঠকের চোখ খেকে বেরিয়ে আসে অশ্রু। দেশের প্রতি মানুষের প্রতি প্রতিটি মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসাভরা অশ্রু। ভূমিকা গত এক বছরে প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত অরণ্যে রোদন নামের কলামের লেখাগুলো একত্রিত করে এই গন্থ।কলাম লেখা হয় সাধারণ সমসাময়িক কোনো বিষয় নিয়ে। ফলে এসবের একটা সীমাবদ্ধতা হলো ,ওই সময়কাল পেরিয়ে গেলে অনেক কথাই হয়তো তার প্রাসঙ্গিক হারিয়ে ফেলে। কিন্তু কলামের একটা ইতিবাচক বৈশিষ্ট্যও থাকে। এটি হয়ে ওঠে চলমান সময়ের স্থির প্রতিচ্ছবি। ভবিষ্যতে যখন আমরা জানতে চাইব ২০০৮ সালটা কেমন গিয়েছিল , তখন এই বইটা কাজে লাগাতে পারে। তারপরেও কথা থাকে। আমি ইদানীং চেষ্টা করি ,দৈনিক রাজনৈতিক টানাপড়েনের বাইরে মানুষের চিরায়ত দুঃখবেদনা,দেশ নিয়ে আমাদের স্বপ্ন ও সংগ্রামের কথাই কলামের মাধ্যমে বলতে । মানুষকে শোনাতে চাই আশার কথা,জাগরনের কথা। ফলে, আমার বিশ্বাস , এই লেখাগুলো এখনও প্রাসঙ্গিকতা হারায়নি। নিকট ভবিষ্যতওে হয়তো হারাবে না। সকলকে ধন্যবাদ। আনিসুল হক জানুয়ারি,২০০৯
আনিসুল হক, বাংলাদেশে গত শতাব্দীর আশির দশকে আবির্ভূত হওয়া একজন প্রখ্যাত কবি, কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার ও সাংবাদিক। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, গদ্যকার্টুন, রম্যরচনা, ভ্রমণকাহিনী, শিশুসাহিত্যসহ সাহিত্যের নানা ক্ষেত্রে রয়েছে তার সাবলীল বিচরণ। বর্তমানে বাংলাদেশের জনপ্রিয় দৈনিক প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক এবং কিশোর আলোর সম্পাদক হিসেবে কর্মরত আছেন। আনিসুল হকের জন্ম ১৯৬৫ সালের ৪ মার্চ নীলফামারীতে। শিশু মনোবিজ্ঞানের শিক্ষক বাবার অনুপ্রেরণায় ছোটবেলা থেকেই আগ্রহ জন্মেছিলো লেখালেখি আর ছবি আঁকায়। ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন সাহিত্যজগতে প্রবেশ করেন প্রথম কবিতার বই ‘খোলা চিঠি সুন্দরের কাছে’ প্রকাশের মধ্য দিয়ে। আনিসুল হক এর বই প্রকাশের কালটি ছিলো উত্তাল স্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলনের সময়। আনিসুল হক এর বই সমূহ প্রেমের প্রতি পক্ষপাত করলেও একইসাথে সেসময়ের রাজনৈতিক অস্থিরতার চিত্রও ফুটিয়ে তুলেছে। তাঁর অন্যান্য কাব্যগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘আমি আছি আমার অনলে’, ‘আসলে আয়ুর চেয়ে বড় সাধ তার আকাশ দেখার’, এবং ‘জলরংপদ্য’। মুক্তিযুদ্ধের সত্য ঘটনা নিয়ে লেখা উপন্যাস ‘মা’, আনিসুল হক এর বই সমগ্র এর মধ্যে পাঠকের মনে সবচেয়ে বেশি দাগ কেটেছিল। এছাড়াও ‘বীর প্রতীকের খোঁজে’, ‘নিধুয়া পাথার’, ‘আয়েশামঙ্গল, খেয়া’, ‘ফাঁদ’, ‘বেকারত্বের দিনগুলিতে প্রেম’, ‘ভালোবাসা আমি তোমার জন্য কাঁদছি’, ‘ফাল্গুন রাতের আঁধারে’ তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস। বিভিন্ন স্বনামধন্য পত্রিকার সম্পাদকের ভূমিকা পালন করেছেন দীর্ঘদিন, এখনও লিখে যাচ্ছেন পত্রিকার কলাম। লিখেছেন বেশ কিছু টেলিভিশন নাটক ও সিনেমার চিত্রনাট্যও। কথাসাহিত্যে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ বেশ কিছু পুরস্কার পেয়েছেন বাংলা সাহিত্যের আধুনিক এই লেখক।