জনাব সরদার ফজলুল করিম কৃত প্লেটোর রিপাবলিক’-এর বর্তমান অনুবাদ জোয়েট, কর্নফোর্ড এবং লী’র ইংরেজী অনুবাদের ভিত্তিতে পূর্ণাঙ্গ বাংলা অনুবাদ। প্রাচীন দর্শন, রাষ্ট্র-তত্ত্ব, সাহিত্য এবং সমাজতত্ত্বের অতুলনীয় গ্রন্থ ‘রিপাবলিক’-এর এরূপ পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ বাংলাদেশ এবং পশ্চিম বাংলায় এই প্রথম। নাটকের সংলাপ আকারে রচিত রিপাবলিক’-এ আলােচিত বিষয়সমূহ, বিশেষ করে প্লেটোর যুক্তির ধারাকে সহজবােধ্য করার জন্য অনুবাদক ‘রিপাবলিক' গ্রন্থকে পঁচিশটি অধ্যায়ে বিভক্ত করেছেন। প্রত্যেক অধ্যায়ে আলােচিত বিষয়ের চুম্বক অধ্যায়ের সূচনাতে উপযুক্ত শিরােনাম এবং ব্যাখ্যাসহ বর্ণনা করা হয়েছে। প্রতি অন্তর পৃষ্ঠার শীর্ষেও উক্ত পৃষ্ঠায় আলােচিত বিষয়ের শিরােনাম মুদ্রিত হয়েছে। পুস্তকের প্রথমে প্লেটোর জীবনী, তাঁর চিন্তার পটভূমি এবং ‘রিপাবলিক’ গ্রন্থের বিষয়বস্তুর বিস্তারিত আলােচনামূলক একটি ভূমিকা রচনা করা হয়েছে। পুস্তকশেষে একটি বিষয়-নির্ঘন্টও সংযােজিত হয়েছে। পুস্তকের অভ্যন্তরেও প্রাচীন কোন দার্শনিক, কবি, নাট্যকারের নাম কিংবা উপাখ্যানকে টীকাবিহীন রাখা হয় নি। অনুবাদক অনুবাদের প্রশ্নে সাবলীলতার ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরােপ করেছেন। এ সমস্ত কারণে সরদার ফজলুল করিমের ‘প্লেটোর রিপাবলিক অনুবাদ এবং প্লেটোর দর্শন আলােচনার ক্ষেত্রে বাংলা সাহিত্যে একটি মূল্যবান অবদান বলে ইতিমধ্যে সমাদৃত হয়েছে।
মে ১, ১৯২৫- সালের পহেলা মে বরিশালের আটিপাড়া গ্রামের এক কৃষক পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন৷ বাবা খবিরউদ্দিন সরদার কৃষিকাজ করতেন৷ মা সফুরা বেগম ছিলেন গৃহিণী৷ তাঁরা দুই ভাই তিন বোন৷ সরদার ফজলুল করিমের শৈশবকাল কেটেছে গ্রামে৷ ম্যাট্রিকুলেশন শেষে তিনি প্রথম ঢাকা আসেন ১৯৪০ সালে। ঢাকায় ১৯৪২ সনে তিনি তার আই.এ. পাঠ সমাপ্ত করে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ১৯৪৫ সনে দর্শনশাস্ত্রে অনার্স ও ১৯৪৬ সনে এম.এ. ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৪৬ সাল থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শনশাস্ত্রে শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। পরবর্তীতে তার সাম্যবাদী বামপন্থী সামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলনে যুক্ত থাকার পর্যায়ে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক নিগৃহীত হন। রাজবন্দি হিসেবে দীর্ঘ ১১ বৎসর বিভিন্ন পর্যায়ে কারাজীবন যাপন করেন। জেলে থাকা অবস্থাতেই ১৯৫৪ সনে তিনি পাকিস্তান সংবিধান সভার সদস্য হিসেবে কাজ করেন। পরে ১৯৬৩ থেকে '৭১ সাল পর্যন্ত বাংলা একাডেমির সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যক্ষ হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি পাকিস্তান হানাদারবাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হন। পরবর্তিতে তিনি আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৭২ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত শিক্ষক হিসেবে শিক্ষাদান শুরু করেন। তিনি ১৫ জুন, ২০১৪ তারিখে ঢাকার শমরিতা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়মারা যান৷