ফ্ল্যাপে লেখা কিছু কথা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ও বাঙালি সমাজ প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৭৫ সালে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও সাধারণ গবেষকদের কাছে তখনই বইটি প্রবলভাবে আদৃত হয়েছিল।আজ ২৭ বচর পরে পরিবর্ধিত নতুন সঙস্করণ প্রকাশিত হলো। সম্পাদক ভূমিকায় বলেছেন-“চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বাংলাদেশের সমাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ভিত্তি তৈরি করেছে। এবং এভাবেই পূর্বতন সমাজব্যবস্থার সঙ্গে নতুন সমাজব্যবস্থার বৈপ্লবিক ব্যবধান সূচিত হয়েছে। চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত থেকে উদ্ভুত হয়েছে নতুন এক শ্রেণী ; চিরস্থয়ী বন্দোবস্ত রাজনৈতিক নেতৃত্বের পটভূমি নির্মাণ করে দিয়েছে, সাংস্কৃতিক বিকাশের সীমারেখা চিহ্নিত করেছে এবং অর্থনৈতিক বিকাশে ভূমিকা রচনা করেছে।” তিনি আরো জানিয়েছেন, এই ব্যবস্থা বাংলাদেশের সমাজে যে প্রবল অভিঘাত হেনেছিলো তা থেকে আমরা এখনও পুরেপুরি মুক্ত হতে পারিনি।বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের খ্যাতনামা ঐতিহাসিক, সমাজবিজ্ঞানী, অর্থনতিবিদ ও সাহিত্যিকদের রচনা দিয়ে সাজানো হয়েছে এই সংকলন। যাঁদের রচনা সংকলিত হয়েছে তাঁরা হলেন-বিনয় ঘোষ, সুপ্রকাশ রায়, বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, বদরুদ্দীন উমর, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সিরাজুল ইসলাম আবদুল মমিন চৌধুরী, আবু আবদুল্লাহ, মুনতাসীর মামুন, এম. মোফাখখারুল ইসলাম, আফসান চৌধুরী ও মাহবুব আহমেদ।
সূচিপত্র *পটভূমি *প্রাচীন বাংলার ভূমিব্যবস্থা *মধ্যযুগের বাংলার ভূমি শাসনব্যবস্থা *বাংলাদেশের ভূমিবিন্যাস ব্যবস্থা *চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পটভূমি *ভূমি-রাজস্বের “চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত” নতুন জমিদারশ্রেণীর সৃষ্টি *চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে জমিদারদের প্রতিক্রিয়া *জমিদার শ্রেণীর রূপান্তর *চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পূর্ববঙ্গের সমাজকাঠামো ও শ্রেণীবিন্যাস * বাংলার কৃষি ও জমিদারশ্রেণী *চিরস্থায়ী বন্দোবস্তোর উদ্দেশ্য ও ফলাফল *কৃষির উৎপাদনশীলতার ওপর চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে প্রভাব *চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে সমাজবিন্যাস *বাংলা উপন্যাসে জমিদার *বিশ শতকের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত *নির্ঘন্ট
মুনতাসীর মামুনের পৈতৃক বাড়ি চাঁদপুর জেলার গুলবাহার গ্রামে, কিন্তু তিনি ঢাকার ইসলামপুরে নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে। সেখানেই পোর্ট ট্রাস্ট প্রাইমারি ও হাই স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা নেন। পরে ভর্তি হন চট্টগ্রাম কলেজে। অতঃপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে স্নাতক, স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন এবং একই বিভাগ থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। শিক্ষাজীবনে সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত ছিলেন, কাজ করেছেন ‘দৈনিক বাংলা বিচিত্রা’য়। এছাড়াও স্বাধীনতার পর প্রথম ডাকসু নির্বাচনের সম্পাদক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংসদের সভাপতি হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৭৪ সালে প্রভাষক পদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপরই তার বিভিন্ন অনুবাদগ্রন্থ, চিত্র সমালোচনা এবং ইতিহাস বিষয়ক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। ইতিহাসের প্রতি তার ভালোবাসা এবং দায়িত্ববোধ থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে 'মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ গবেষণা ইন্সটিটিউট' প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলার ইতিহাসকে তিনি প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চান- এই উদ্দেশ্যেই মুনতাসীর মামুনের বই লেখা। একজন শিক্ষক হওয়ার পাশাপাশি তিনি একজন ইতিহাসবিদ ও সাহিত্যিক। ঢাকা শহর নিয়ে তার রয়েছে গবেষণাপত্র। গড়ে তুলেছেন ‘সেন্টার ফর ঢাকা স্টাডিজ’ নামের ইতিহাস চর্চার একটি প্রতিষ্ঠান, যেখান থেকে মুনতাসীর মামুন এর বই সমগ্র তথা ১২টি গবেষণামূলক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। মননশীল এই লেখক দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে লিখে যাচ্ছেন নানা বিষয়ে। মুনতাসীর মামুন এর বই সমূহ এর বিষয় বহুমাত্রিক। তার গ্রন্থের সংখ্যা ২২০, যাতে স্থান পেয়েছে গল্প, প্রবন্ধ, গবেষণা এবং অনুবাদ সাহিত্য। শিশু-কিশোরদের নিয়েও তার লেখা গ্রন্থ প্রশংসা কুড়িয়েছে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনেও তার সক্রিয় উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়। বর্তমানে এই ইতিহাসবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিষয়ের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।