“শঙ্খ ঘোষের শ্রেষ্ঠ কবিতা" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ অল্পবয়সে বুদ্ধদেবের একটি লাইন নিয়ে আমরা কৌতুক করেছি খুব। মাত্র চল্লিশেই কেন উনি বিলাপ করবেন ‘আমি বুড়াে, প্রায় বুড়াে, কী আছে আমার আর তীব্র তেতাে মত্ত স্মৃতি ছাড়া’? এই ছিল হাসাহাসির বিষয়। কিন্তু এখন, ওই বয়সে পৌছবার আর সামান্যই যখন বাকি, এখন যেন টের পাওয়া যায় শব্দগুলির ভিতরকার লাঞ্ছনা। কৌতুকটা বুঝি ফিরিয়ে নিতে হলাে আজ। আরাে তা ফিরিয়ে নিতে হলাে গােপীমােহনবাবুর ‘শ্রেষ্ঠ কবিতার ডাক শুনে। সহৃদয় তার আহ্বান, সাহসিক। কিন্তু শ্রেষ্ঠ কবিতা ? শুনে মনে হয় যেন পরীক্ষাঘরের শেষ ঘণ্টা বেজে উঠল। এই কি আমাদের অবসান তবে? আমরা তাে ভাবছিলাম আরাে অনেক বাকি আছে। এগিয়ে-পিছিয়ে খেলা, অনেক নতুন করে শুরু কিংবা নতুন করে ছাড়া। তাহলে তা নয় ? | সত্যি বলা ছাড়া আর কোনাে কাজ নেই কবিতার। কিন্তু জীবিকাবশে শ্ৰেণীবশে এতই আমরা মিথ্যায় জড়িয়ে আছি দিনরাত যে একটি কবিতার জন্যেও কখনাে-কখনাে অনেকদিন থেমে থাকতে হয়। উপরন্তু আমি যে আধুনিকতার কথা ভাবি সেখানে মন্থর পুনরাবৃত্তির কোনাে। মানে নেই, অবাধ প্রগম্ভতার কোনাে প্রশ্রয় নেই। তাই কম লিখি বলে আমার ভয় হয় না। আমার ভয় কেবল এই যে সমস্তটা মিলিয়ে আদ্যন্ত একটিই-যে নাটক গড়ে উঠবার কথা ছিল, আজও তার অবয়ব দেখতে পাই না স্পষ্ট। বলা হয় না কিছু’ : এখনও রয়ে গেল পুরােনাে সেই নিষ্ফলতার বােধ। এ সংকলনের সবচেয়ে প্রাচীন লেখা “কবর”, সবচেয়ে নতুন “ভূমধ্যসাগর” ; মধ্যবর্তী ঠিক কুড়ি বছরের সময় থেকে সাজিয়ে নিতে গিয়ে দেখি, হতাশা ছাড়া হাতে থাকে না কিছুই। | তাই, শ্রেষ্ঠ কবিতা বলার কোনাে মানে নেই একে।
জন্ম ৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩২। তিনি একজন বিশিষ্ট ভারতীয় বাঙালি কবি ও সাহিত্য সমালোচক। তিনি একজন বিশিষ্ট রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ। তাঁর প্রকৃত নাম চিত্তপ্রিয় ঘোষ। যাদবপুর, দিল্লি ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপনাও করেছেন। বাবরের প্রার্থনা কাব্যগ্রন্থটির জন্য তিনি ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কার সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৬ খ্রিঃ লাভ করেন ভারতের সর্বোচ্চ সাহিত্য সম্মান ,জ্ঞানপীঠ পুরস্কার। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে, এ আমির আবরণ, উর্বশীর হাসি, ওকাম্পোর রবীন্দ্রনাথ ইত্যাদি। শঙ্খ ঘোষ ১৯৫১ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বাংলায় কলা বিভাগে স্নাতক এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি বঙ্গবাসী কলেজ, সিটি কলেজ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় সহ বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেন। তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯২ সালে অবসর নেন। ১৯৬০ সালে মার্কিন যুক্তরাস্ট্রে আইওয়া রাইটার্স ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণ করেন। তিনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়,শিমলাতে ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ আডভান্স স্টাডিজ এবং বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষকতা করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অনেকগুলো অনেকগুলো পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।