"শাহজাদা দারাশুকো ১ ও ২" বইয়ের ফ্ল্যাপের লেখা: হিন্দুস্থানের বাদশা শাহজাহান তার বড়ছেলে শাহজাদা দারাশুকোকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসতেন। কয়েকবার তিনি বলেছেন, আল্লাতালার অসীম করুণা—তাই এমন ছেলে আমি পেয়েছি। সেই ছেলে দারাশুকো সব ধর্মের ভেতর দিয়ে মানুষের ধর্ম খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন। বাদশার সেজো ছেলে শাহজাদা আওরঙ্গজেব তার আব্বা হুজুরের স্নেহ ভালবাসা তাে তেমন পানই নি বরং প্রাণপণ লড়াই করেও বাদশার কাছ থেকে পেলেন কঠিন বাক্যবাণ, বদলির হুকুম, অপমান। আর লড়াই না করেও দারা পেলেন বিজয়ীর সংবর্ধনা। কট্টর মােল্লারা হিন্দুস্থানের পহেলা শাহজাদা দারাশুকোর মতিগতি বুঝতে না পেরে আঁতকে উঠলেন। ভাবলেন, দারার হাতে ইসলাম বিপন্ন। এমন শাহজাদা যদি হিন্দুস্থানের বাদশা হন তাে ঘাের বিপদ। মুঘল শাহী তাে যাবেই—ইসলামও হিন্দুস্থানে তলিয়ে যাবে । তাই মােল্লারা এসে দাড়ালেন আওরঙ্গজেবের পাশে। হিন্দুস্থানের মসনদকে ঘিরে ক্ষমতা, ধর্ম, ভালবাসা, ঈর্ষার এক গােল্লাছুট খেলা শুরু হয়ে গেল। খেলা ভাঙলে দেখা গেল মানুষের ধর্ম খুঁজতে গিয়ে শাহজাদা দারা তার মাথাটি হারিয়েছেন। হিন্দুস্থানে মুক্তদৃষ্টি, মুক্তবােধর স্বচ্ছন্দ চলাচল বন্ধ হয়ে গেল। বাংলা ঐতিহাসিক উপন্যাসের সংজ্ঞা পাল্টে দেওয়ার জন্যে এ লেখাটি অত্যন্ত জরুরী ছিল।
Shyamal Gangopadhyay (২৫ মার্চ, ১৯৩৩ - ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০০১) একজন ভারতীয় বাঙালি লেখক ও সম্পাদক ছিলেন। ছদ্মনাম- বৈকুন্ঠ পাঠক। সাহিত্যিক শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্ম অবিভক্ত ভারতের খুলনা্তে(অধুনা বাংলাদেশ)। তার পিতার নাম মতিলাল ও মাতা কিরনবালা। খুলনা জিলা স্কুলে তার প্রাথমিক শিক্ষা। দেশভাগের পর ১৯৪৭ সালে তার পরিবার কলকাতায় চলে আসে। শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় ছাত্রাবস্থায় রাজনীতির সাথে যুক্ত হয়ে পড়েন এবং বেলুড়ে ইস্পাত কারখানার কাজে যোগ দেন। শেষ পর্যন্ত ১৯৫৬ সালে স্নাতক পাশ করে চেতলায় শিক্ষকতার চাকরিও করেন কিছুকাল। শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় প্রথম জীবনে আনন্দবাজার পত্রিকায় কর্মরত ছিলেন, ১৯৬১ সালে আনন্দবাজারে যোগ দেওয়ার পর তার ছোটগল্প হাজরা নস্করের যাত্রাসঙ্গী, ধানকেউটে ইত্যাদি প্রকাশিত হয়। তার প্রথম উপন্যাস বৃহন্নলা, কিন্তু দেশ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে কুবেরের বিষয় আশয় প্রকাশিত হওয়ার পরেই শ্যামলের লেখনী বাংলা পাঠকমহলে সমাদৃত হয়। ব্যক্তিজীবনে বোহেমিয়ান, সুরসিক ও আড্ডাবাজ ছিলেন তিনি। আনন্দবাজার পত্রিকা গোষ্ঠীর অন্যতম কর্তা সন্তোষকুমার ঘোষের সাথে তার মনোমালিন্য হওয়ায় তিনি যুগান্তরে যোগ দেন। যুগান্তরের সাহিত্য পত্রিকা অমৃত সম্পাদনা করতেন। দেশভাগের ওপর রচিত তার উপন্যাস আলো নেই। তার শেষ উপন্যাস হল গঙ্গা একটি নদীর নাম। ১৯৯০ সালে অবসরের পরে আজকাল পত্রিকা ও সাপ্তাহিক বর্তমানে নিয়মিত লিখতেন তিনি। গ্রামীন জীবন, চাষবাস, সম্পর্কের জটিলতা ইত্যাদি শ্যামলের রচনার বৈশিষ্ট্য। ছোটদের জন্যে সাধু কালাচাদের গল্প, ভাস্কো ডা গামার ভাইপো, ক্লাস সেভেনের মিস্টার ব্লেক ইত্যাদি বই লিখেছেন। ১৯৯৩ সালে শ্যামল সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কারে সম্মানিত হন তার বিখ্যাত উপন্যাস শাহজাদা দারাশিকোহ বইটির জন্যে। তার সম্পাদিত গ্রন্থ বাংলা নামে দেশ। শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা দেশ বিদেশের নানা ভাষাতে অনূদিত ও প্রকাশিত হয়েছে।