তৃতীয় পরিচ্ছেদ উৎপন্ন দ্রব্য এবং কৃষি বাণিজ্যের সংক্ষিপ্ত বিবরণ এক্ষণে দার্জিলিং জেলার উৎপন্ন দ্রব্য এবং কৃষি-বাণিজ্যের কিঞ্চিৎ বিবরণে ক্রমান্বয়ে প্রবৃত্ত হওয়া যাইতেছে। সাধারণত এ জেলার ভূমি সতেজ ও উর্বর। তরাই বিভাগে যে স্থান নিম্ন এবং সতত কোন প্রকার নদী বা নির্ঝরের জলে আর্দ্র থাকে, তাহা অতীব উর্বর। তথায় ধান্য প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হয়। পার্বত্য বিভাগে গোল আলু এবং চা যথেষ্ট জন্মিয়া থাকে। মৃত্তিকাও যেন তদুপযুক্তই হইয়া আছে। স্থানবিশেষে ধান্যও সমুৎপন্ন হইতেছে। ফলতঃ অনুধাবন করিয়া দেখিলে প্রতীত হইবে, বর্তমান প্রথা অপেক্ষা লোকে যদি কিঞ্চিদধিক পরিশ্রম ও যত্ন সহকারে কৃষিকার্যে প্রবৃত্ত হয়, তাহা হইলে এ প্রদেশে অপর্যাপ্ত ফসল উৎপাদিত হইতে পারে। তরাই বিভাগ এরূপ সম্ভাবিতরূপে জলপ্রণালীতে পরিপূরিত যে, অন্যান্য জেলার মৃত্তিকা গঠন ও ভূমিস্বভাব সাদৃশ্যে, অতিবৃষ্টি অনাবৃষ্টিজনিত কোন বিশেষ অপকার সংঘটিত প্রায় হইতে পারে না। পরন্তু, মৃত্তিকা এরূপ সহজে গুণ্ডিত ও মিশ্রিত হয় যে, কৃষকরা অধিকাংশ লাঙলে লৌহফলের পরিবর্তে বংশফল ব্যবহার করে। বস্তুত অধিকাংশ মৃত্তিকাই নরম ও ভগ্নপ্রবণ। পর্বত বিভাগে লাঙল ব্যবহৃত নাই; পর্বতবাসীরা কোদাল এবং অপরাপর লৌহাস্ত্র ও স্থানবিশেষে তীক্ষ্ণ অর্থাৎ ছুঁচাল কাষ্ঠ বা বংশখণ্ড দ্বারা মৃত্তিকাকর্ষণ ও খনন করে। বাংলা প্রদেশস্থ কৃষিকদিগের ন্যায় তরাই বিভাগের কৃষিজীবীগণ রোপণ ও বপন কার্যের পারিপাট্য বিশেষ অবগত নহে। তাহারা বলিতে কি, প্রকৃতির কার্যব্যুহের বশবর্তী সুতরাং অপেক্ষাকৃত নিশ্চেষ্ট।