"ছন্দোময় জীবন" বইয়ের ভূমিকা ‘মানুষের শিল্পের উপাদান কেবল তাে কাঠপাথর নয়, মানুষ নিজে। বর্বর অবস্থা থেকে মানুষ নিজেকে সংস্কৃত করেছে। এই সংস্কৃতি তার স্বরচিত। বিশেষ ছন্দোময় শিল্প। এইভাবে একবার রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন ‘ছন্দের প্রকৃতি’ প্রবন্ধে, ১৯৩৩ সালে। সেখানে, ছন্দের প্রকৃতি বােঝাতে গিয়ে প্রথমে তিনি বােঝাতে চেয়েছিলেন প্রকৃতির ছন্দ। কেননা, প্রকৃতির সেই ছন্দই ধরা দেয় জীবনের ছন্দে, শিল্পের ছন্দে। একথা যিনি মনে করেন আন্তরিক বিশ্বাসে, তার নিজের জীবন বা নিজের সৃষ্টির মধ্যেও যে তেমন-কোনাে ছন্দের আয়ােজন থাকবে, এটা আশা করা অসংগত নয়। কিন্তু আছে কি তা সত্যি? সৌষম্যময় কোনাে চলন তার জীবন বা শিল্পে (আর শিল্পও তাে তাঁর জীবন) কি সত্যিই লক্ষ করা যায়? যাকে একই বৃহৎ রচনার দুই অংশ বলে ভাবতে চাইতেন রবীন্দ্রনাথ, সেই তার জীবন আর শিল্পের গতিপথে কি কোনাে শৃঙ্খলা দেখতে পাই আমরা? কিছুদিন ধরে নানা পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথ বিষয়ে যেসব টুকরাে লেখা লিখেছি, তার বেশ-কয়েকটির মধ্যে প্রচ্ছন্ন ছিল এইরকম একটা জিজ্ঞাসা। জিজ্ঞাসা যে সবজায়গায় ঠিক একইভাবে এসেছে তা নয়, সব জায়গায় যে তার পূর্ণ বিশ্লেষণ হয়েছে তাও নয়। সেইজন্য এখনই এই টুকরােগুলিকে একত্রবদ্ধ করবার কোনাে পরিকল্পনা আমার ছিল না। কিন্তু নাছােড়বন্ধু শ্রীস্বপন মজুমদারের উদ্যমের কাছে শেষ পর্যন্ত হার মানতে হলাে, একটু অপ্রস্তুত অবস্থাতেই সংকলিত হলাে লেখাগুলি। বিভিন্ন জায়গা থেকে এগুলি সংগ্রহ করে দেবার কাজে-অন্যান্যবারের মতােই-সাহায্য করেছেন শীতারাপদ আচার্য।
জন্ম ৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩২। তিনি একজন বিশিষ্ট ভারতীয় বাঙালি কবি ও সাহিত্য সমালোচক। তিনি একজন বিশিষ্ট রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ। তাঁর প্রকৃত নাম চিত্তপ্রিয় ঘোষ। যাদবপুর, দিল্লি ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপনাও করেছেন। বাবরের প্রার্থনা কাব্যগ্রন্থটির জন্য তিনি ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কার সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৬ খ্রিঃ লাভ করেন ভারতের সর্বোচ্চ সাহিত্য সম্মান ,জ্ঞানপীঠ পুরস্কার। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হল মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে, এ আমির আবরণ, উর্বশীর হাসি, ওকাম্পোর রবীন্দ্রনাথ ইত্যাদি। শঙ্খ ঘোষ ১৯৫১ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বাংলায় কলা বিভাগে স্নাতক এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি বঙ্গবাসী কলেজ, সিটি কলেজ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় সহ বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেন। তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯২ সালে অবসর নেন। ১৯৬০ সালে মার্কিন যুক্তরাস্ট্রে আইওয়া রাইটার্স ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণ করেন। তিনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়,শিমলাতে ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ আডভান্স স্টাডিজ এবং বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষকতা করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অনেকগুলো অনেকগুলো পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।