"রঙ রেখায় ছবি আঁকি" বইটির সম্পর্কে কিছু কথা: শিশুর ছবি আঁকার বিষয়টি শিশুর লেখাপড়া, খেলাধুলা ও গান শেখার মতাে শিখতে হয় না। গান শেখার সময় যেমন—সারেগামা সহ সুর, তাল ইত্যাদি কিছু নিয়ম শিখতে হয়। ছবি আঁকার বেলায় তাকে কোনাে নিয়মের কথা না বলে ইচ্ছেমতাে আঁকতে দিন। রঙ, তুলি কাগজ, পানি, বাের্ড ইত্যাদি জোগাড় করে তার হাতের কাছে দিন। দেখবেন—সে মনের আনন্দে নিজের খেয়াল খুশীমতাে ছবি আঁকছে এবং খুব মজা পাচ্ছে। ওর কাছে ছবি আঁকাটা মজার খেলা। সাধারণত তিন বছর বয়স থেকে শিশুরা আঁকতে চায়। বাের্ডে কাগজ লাগিয়ে তার সামনে দিলে রঙ-তুলি, চক, প্যাস্টেল, পেন্সিল-কলম যেটাই সে পায় আঁচড় কেটে, রঙ ঘসে ঘসে মজার মজার সব ছবি ফুটিয়ে তােলে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে শিশুর আঁকায় পরিবর্তন হয়। রেখা ধীরে ধীরে দৃঢ় হয়, রঙ লেপনে পারঙ্গমতা দেখা দেয়। ছবির বিষয়গুলাে ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। মানুষকে চেনা যায়, গরু গাছপালা সবই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আকাশের রঙ, নদীর রঙ, সবুজ মাঠের রঙ সে ঠিকঠাক মতাে লাগাতে পারে । শিক্ষক ও অভিভাবকেরা শিশুকে আঁকায় সহযােগিতা করার সময় বিশেষভাবে তার বয়সটাকে বিবেচনায় আনবেন। যে সব বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে সে গুলাে হলাে— ১. শিশুকে তার ইচ্ছেমতাে আঁকতে দিন। ২. আঁকার বিষয়ে তাকে নির্দেশ দেয়া থেকে বিরত থাকুন। যেমন, এভাবে আঁক, এভাবে রঙ লাগাও, তােমার আঁকাতাে ঠিক হচ্ছে না অমুকের মতাে করে আঁকতে পার না? এরকম আঁকলে তাে পুরস্কার পাবে না। আমি যেভাবে বলি সেভাবে আঁকছাে না কেন? এমনি সব কথাবার্তা বলে তার উৎসাহকে দমিয়ে দেবেন না।
শিল্পী হাশেম খানের পূর্ণ নাম মুঃ আবুল হাশেম খান ১৯৬৩ সাল থেকে চারুকলা ইনস্টিটিউটে অধ্যাপনা ও দেশে চারুকলা রিকাশের আন্দোলনে, প্রগতিশীল সংস্কৃতি চর্চার পরিবেশ সৃষ্টিতে নিবেদিত প্রাণ। রুচিস্নিগ্ধ ও সুশােভন পুস্তক প্রকাশনায় তার বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। ছােটদের বই ইলাস্ট্রেশনে দক্ষ শিল্পী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছেন। নিয়মিত ছবি আঁকেন এবং প্রায়শ লেখালেখি করেন। দেশে বিদেশে অসংখ্য প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণসহ পেশাগত দায়িত্ব নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। 'হাশেম খান শিরােনামে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি তাঁর ওপর চিত্রকলা বিষয়ক গ্রন্থ প্রকাশ করেছে। ১৯৯২ সালে শিল্পকলা ক্ষেত্রে অবদানের জন্য একুশে পদকে ভূষিত হয়েছেন। বাংলা একাডেমি তাকে ‘সম্মানিত ফেলাে হিসেবে ভূষিত করেছে। এ পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ২০টি।। উল্লেখযােগ্য বই : চারুকলা পাঠ, গুলিবিদ্ধ একাত্তুর, জয়নুল আবেদিনের সারাজীবন, দু'জন শিক্ষক আমি ছাত্র, ছবি আঁকা-ছবি লেখা, স্বাধীনতা ও জরিনারা, নিবারণ কন্যার গল্প অল্প।