”অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা’ বইয়ের ভূমিকা: শতাব্দী থেকে শতাব্দী বাংলাদেশের এই ভূখণ্ডে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষ তাদের স্বস্ব ধর্ম-কর্ম, সংস্কৃতি, আচার-অনুষ্ঠানসহ মােটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করে এসেছে। এই সহাবস্থানমূলক বসবাসের মাধ্যমে এদেশের মানুষ গড়ে তুলেছে সমৃদ্ধশালী. ঐতিহ্য। তবে যুগে যুগে এই ভূখণ্ডের জনগণ বিদেশী শাসকশােষকদের হাতে শােষিত-নিপীড়িত এবং লুণ্ঠিত হয়েছে। বৃটিশ শাসক-শােষকের সুদীর্ঘ দু'শাে বছরের শােষণ এখনাে অনেকের স্মৃতিতে দুঃস্বপ্নের মতই জেগে আছে। একইভাবে হিন্দু ব্রাহ্মণ্যবাদ এবং জালেম জমিদারী প্রথার মাধ্যমেও নিষ্পেষিত হয়েছে এই ভূখণ্ডের শান্তিপ্রিয় জনগণ। সর্বশেষে, ভারত বিভক্তি এবং তারই ফলশ্রুতিতে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে পাকিস্তান অর্জন। বৃটিশ রচিত ঔপনিবেশিক আমলাতান্ত্রিক রাষ্ট্রীয় কাঠামাে বহাল রেখে পাকিস্তানের উঠতি পুঁজিবাদীগােষ্ঠী, বিশেষ করে সামরিক এবং বেসামরিক আমলাগােষ্ঠী এ অঞ্চলের জনগণের ওপর বিমাতাসুলভ আচরণ এবং শশাষণ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখে। যার ফলে এ অঞ্চল থেকে যায় অনগ্রসর, অবহেলিত এবং নিগৃহীত। নিগৃহীত জনগণের অভাব-অনটন; হতাশা ও বিক্ষোভ ক্রমশঃই পুঞ্জীভূত হতে থাকে এবং ধীরে ধীরে ধূমায়িত হতে হতে ১৯৭১ সনে একটি প্রবল আগ্নেয়গিরির মতনই উদ্গীরণ ঘটে। এ উদ্গীরণই পরবর্তীতে স্বাধীনতা সংগ্রামে রূপ নেয়। ১৯৭১ সনের স্বাধীনতা সংগ্রাম হচ্ছে বাঙালী জাতির ধারাবাহিক মুক্তি আন্দোলনেরই একটি স্বতঃস্ফূর্ত এবং সক্রিয় রূপ। যুগ যুগ ধরে বাঙালী জাতি দেশী-বিদেশী শাসকশােষকের বিরুদ্ধে নিরবচ্ছিন্নভাবে লড়াই করে এসেছে—কখনাে করেছে সংঘবদ্ধভাবে, কখনাে বা বিচ্ছিন্নভাবে। কিন্তু এ জাতির বিকাশের ইতিহাসে কোনকালেই সংগ্রামী জনগণ একেবারে নিস্তব্ধ হয়ে যায়নি। নিরবচ্ছিন্ন লড়াইয়ের মধ্যে লালিত মুক্তিপাগল বাঙালী জাতি সর্বযুগেই শােষকদের কবর রচনা করে এসেছে এবং আন্দোলনের ধারা রেখেছে অব্যাহত।
সূ চি প ত্র* মুক্তিযুদ্ধ-পূর্ব তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান-১৭ * সশস্ত্র গণবিস্ফোরণ-২০ * শেখ মুজিব ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-২৪ * মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রকৃত অবস্থা-৩০ * ভারতে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং শিবির-৩৭ * ডিসেম্বর ও ভারতীয় সৈন্যের অনুপ্রবেশ-৪৬ * বাংলাদেশে ভারতীয় বাহিনীর পরিকল্পিত লুণ্ঠন-৫২ * স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি ও ইসলাম-৫৫ * আওয়ামী লীগের চার রাষ্ট্রীয় মূলনীতির উৎস-৬১
মেজর এম.এ. জলিল জীবনপ্রবাহ জন্ম ও জন্মস্থান : ৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৪২, বরিশাল জেলার উজিরপুর থানা সদরে মামার বাড়িতে জন্ম। জন্মের তিন মাস পূর্বেই পিতার মৃত্যু। পিতার নাম জনাব আলী মিয়া। মাতার নাম রাবেয়া খাতুন। ১৯৬০ ; উজিরপুর ডব্লিও বি ইনস্টিটিউশন থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে ম্যাট্রিক পাস। স্কুলজীবনে ‘পথের কাঙ্গাল’ ও ‘রীতি' নামক দুটি উপন্যাস রচনা। পরে পাণ্ডুলিপি হারিয়ে যায়।। ১৯৬১ ; ইয়ং ক্যাডেটে ভর্তি। রাওয়ালপিন্ডির মারীতে শিক্ষাগ্রহণ। ১৯৬৩ : ইন্টারমিডিয়েট পাস করে পাকিস্তানের কাবুলে সামরিক একাডেমিতে প্রশিক্ষণ লাভ। ১৯৬৫ : সেপ্টেম্বর মাসে কমিশন লাভ করে পাকিস্তান আন্টিতে ট্যাংক বাহিনীতে যোগদান। পাকিস্তান, ভারত যুদ্ধে ১২ নং ক্যাঙালরি রেজিমেন্টের অফিসার হিসেবে সক্রিয় অংশগ্রহণ। ১৯৬৬ : যুদ্ধ বিরতির পর পাকিস্তান একাডেমি থেকে গ্রাজুয়েশন লাভ। পরবর্তীতে মুলতান থেকে ইতিহাসে এমএ ডিগ্রি লাভ। ১৯৭০ : ট্যাংক ডিভিশনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে মেজর পদে প্রমোশন লাভ। ১৯৭১ ; অসুস্থ মাতা রাবেয়া খাতুনকে দেখতে এক মাসের ছুটিতে দেশে আগমন। ১০ ফেব্রুয়ারি ছুটি শেষে পাকিস্তানে প্রত্যাবর্তন না করে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে আত্মনিয়োগ। ২৭ মার্চ থেকে ২৪ এপ্রিল পর্যন্ত বরিশাল পটুয়াখালিকে মুক্ত অঞ্চল হিসেবে রাখতে সক্ষম। খুলনা রেডিও সেন্টার মুক্ত করতে মেজর জলিলের অপারেশন- ৭ এপ্রিল। অস্ত্র সংগ্রহের উদ্দেশ্যে সুন্দরবনের পথ ধরে ভারত গমন। ফিরে এসে নিজ সেক্টরে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনে নেতৃত্ব দান- ২১ এপ্রিল।