“শিশুতোষ বিজ্ঞানসমগ্র" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ এ যুগ বিজ্ঞানের যুগ। এ যুগ প্রযুক্তির যুগ। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে না পারলে এ যুগে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে প্রতিযােগিতায় টিকে থাকা অসম্ভব। আর যে কোনাে জ্ঞানচর্চার জন্যই মাতৃভাষা যে সবচেয়ে বেশি কার্যকর বাহন সে কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। সর্বোপরি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কঠিন। ও দুরূহ বিষয়গুলাে আয়ত্ত করার জন্য যেমন চাই নিরলস অধ্যয়ন ও চর্চাতেমনি চাই সাধারণ পাঠকদের উপযােগী ভাষায় লেখা আকর্ষণীয় অসংখ্য বই। কেননা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে প্রাথমিক ধারণা ব্যতীত কোনাে দেশে বা দেশের মানুষদের মধ্যে বিজ্ঞানমনস্কতা তৈরি হয় না । আবদুল্লাহ আল-মুতী সারা জীবন নিরলস সাধনা করেছেন বিজ্ঞানের নানা আবিষ্কার এবং জ্ঞান ও তথ্য বাংলা ভাষায় মনােজ্ঞ, সুন্দর ও আকর্ষণীয়ভাবে সকলের জন্য তুলে ধরতে। আর এ কাজে তার সাফল্য তুলনারহিত।। আবদুল্লাহ আল-মুতী তার অনুপম ভাষায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নানা বিষয় সর্বস্তরের পাঠকদের জন্য তুলে ধরেছেন। লিখেছেন বিজ্ঞানের বহু বিষয় নিয়ে বই, বেতার ও টেলিভিশনে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নানা বিষয় উপস্থাপন করেছেন মনােগ্রাহী ভাষায় ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে। প্রধানত বিজ্ঞানবিষয়ক রচনা ও বইয়ের জন্য তিনি যে অতুলনীয় জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন, দেশের ও। বিদেশের বিভিন্ন পুরস্কার লাভ করেছেন তাতেই আমরা তার সাধনার ব্যাপকতার পরিচয় পাই।। আবদুল্লাহ আল-মুতী তার বিজ্ঞানবিষয়ক রচনার। বেশির ভাগই লিখেছেন শিশু-কিশােরদের জন্য। এ দেশের শিশু-কিশােরদের বিজ্ঞান-শিক্ষা ও বিজ্ঞানচর্চার প্রতি আকৃষ্ট করাই ছিল তার বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চার প্রধান লক্ষ্য। তিনি বিশ্বাস করতেন মাতৃভাষাই হচ্ছে জ্ঞানচর্চার শ্রেষ্ঠ মাধ্যম।
বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানসাহিত্য রচনার ক্ষেত্রে আবদুল্লাহ আল-মুতী নিজস্ব একটি ভুবন তৈরি করেছিলেন। বিজ্ঞানের নানা বিষয় জনবোধ্য ও সরস করে পরিবেশনের যে স্বপ্ন রবীন্দ্রনাথ দেখেছিলেন আবদুল্লাহ আল-মুতীর লাবণ্যময় রচনায় আমরা তার বাস্তবরূপ দেখতে পাই । বিজ্ঞানসাহিত্য রচনার জগতে তাই তার অনন্য একটি ভূমিকা আমরা প্রত্যক্ষ করি। ড. আবদুল্লাহ আল-মুতীর জন্ম ১৯৩০ সালে । শিক্ষাজীবন শুরু রাজশাহী সরকারি মাদ্রাসায় । তারপর কলকাতা, চট্টগ্রাম, সিরাজগঞ্জ ও ঢাকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় এম.এসসি ডিগ্রি অর্জন করার পর কর্মজীবন শুরু হয় ১৯৫৪ সালে রাজশাহী কলেজে অধ্যাপনার মাধ্যমে। শিক্ষা বিষয়ে স্নাতকোত্তর ও পিএইচ.ডি ডিগ্রি লাভ করেন শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। শিক্ষকতাকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করে শিক্ষা প্রশাসনে বিভিন্ন করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যা বিভাগের সচিব হিসেবে। দুরারোগ্য জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ ৩০ নভেম্বর ১৯৯৮। বিজ্ঞানসাহিত্যের ক্ষেত্রে অবদানের জন্য তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন ১৯৭৫ এবং ইউনেস্কোর আন্তর্জাতিক কলিঙ্গ পুরস্কার ১৯৮৩ সালে। তবে তাঁর সবচেয়ে বড় পুরস্কার অগণিত পাঠকের অকৃত্রিম ভালোবাসা। এ ক্ষেত্রে তাঁর বিষয়ে তিনি এখনো অপ্রতিন্দ্বন্দ্বী।