প্রকাশক থেকে গ্রন্থকার যদিও আমাদের পৈতৃক বাড়ি ঢাকুরিয়ায়, আমাদের মনে হত কলেজ স্ট্রীটই আমাদের আদত ঠিকানা। কারণ মিত্র ও ঘোষ-এর অবস্থান সেখানে এবং এই প্রতিষ্ঠানই ছিল আমাদের বাড়ির তথা পরিবারের স্নায়ুকেন্দ্র। বইয়ের গন্ধে বাড়ি ছিল ভরপুর। বইমেলার উত্তেজনা আমাদের শিশুকাল থেকে আবিষ্ট করে রাখত। জন্মের পর থেকেই শুনেছি মিত্র ও ঘোষের গোড়াপত্তনের ইতিহাস। শুনেছি আমার সাহিত্যিক দাদু গজেন্দ্রকুমার মিত্র-র ত্যাগ, পরিশ্রম আর স্বপ্নের গড়ে ওঠার কাহিনী। বাবার মুখে শুনতাম আমার সদ্য গড়ে ওঠা জগতের কিংবদন্তীদের গল্প। গোগ্রাসে গলাধঃকরণ করতাম বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, কবিশেখর কালিদাস রায়, প্রবোধকুমার সান্যাল-দের ইতিহাস। মনে হত ইস্, আর-কটা বছর আগে যদি জন্মাতাম। বাবাকে বহুবছর ধরে বলেছি তাঁর অভিজ্ঞতার কথা লিপিবদ্ধ করতে। কিন্তু আমার প্রকাশক বাবার লেখক হয়ে ওঠা আর হয়নি। হয়তো বা নানান পারিপার্শ্বিক চাপও তাঁকে বাধা দিয়েছে। আজ এতদিন পরে বাবা যে কলম ধরতে রাজী হয়েছেন তাতে আমরা অর্থাৎ আমাদের পরিবারের প্রত্যেকটি সদস্য এক কথায় অভিভূত । সুদূর প্রবাসে থাকার জন্য এই বইটির জন্ম সময়ে আমি থাকতে পারব না এই আপশোশটা গ্রহণ করা কষ্টসাধ্য। নতুন বইটির সুমিষ্ট ঘ্রাণ নিতে নিতেই সেই কষ্টকে ভুলতে হবে আরকি। আমার বিশ্বাস বাবার স্বভাবসিদ্ধ সরল, প্রাণোচ্ছল বাভঙ্গিমা তাঁর ঘনিষ্ঠদের ছাড়াও বাংলার পাঠক-কুলকেও আকৃষ্ট করবে। যদি এই বইটি বাংলা পাঠকদের কিছু অংশকেও মুগ্ধ করতে পারে তাহলে সেটি হবে আমার প্রৌঢ় বাবার একনিষ্ঠ এবং দীর্ঘকালীন সাহিত্যসাধনার সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কার।
লেখক Sobitendronath Ray-এর জন্ম ১৯৩৪ সালে। ১৯৪৯ সালে তিনি মিত্রও ঘোষ পাবলিশার্সে যোগ দেন। গজেন্দ্রকুমার মিত্র, তদীয় পত্নী প্রতিমা মিত্র এবং সুমথনাথ ঘোষের স্নেহচ্ছায়ায় তিনি ক্রমশ প্রতিষ্ঠানের পরিচালক গোষ্ঠীর অন্যতম হয়ে ওঠেন। তদবধি এখনও তিনি প্রকাশন পরিচালনায় কর্মরত। এই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অবস্থাতেই তিনি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনো করেছেন। সরকারী কাজের সুযোগ পেয়েও সম্ভবত সাহিত্যিক আড্ডার টানেই এই প্রকাশন প্রতিষ্ঠানে থেকে গেছেন। বহু সাহিত্যিকের সঙ্গলাভে তিনি সমৃদ্ধ হয়েছেন।