“হ্যান্স এন্ডারসনের সেরা রূপকথা” বইটির প্রাককথনঃ হ্যান্স এন্ডারসনের নাম কে না জানে! শিশুসাহিত্যের অমর জাদুকর, রূপকথার নিপুণ স্রষ্টা, মায়াবী, মধুর দুঃখরঞ্জিত সুখের জগতের নির্মাতা এই মহান লেখক জন্মগ্রহণ করেন ডেনমার্কের কোপেনহেগেন শহরে, ১৮০৫ সালের ২ এপ্রিল। প্রায় একশ বছর ধরে পৃথিবীবাসীদের রূপে, গুণে, রসে বিমুগ্ধ করে রেখেছেন তাঁর অনিন্দ্যসুন্দর, অশ্রুতপূর্ব, অনির্বচনীয় সব রূপকথা দিয়ে। রূপকথা অর্থ কী! স্বপ্ন ও বাস্তবের মােহন এক জগৎ। আশ্চর্য রকমের সুন্দর এক কল্পনােক। কী থাকে না সেখানে, সুন্দরের আড়ালে অসুন্দর, হাসির আড়ালে কান্না, মিথ্যার আড়ালে সত্যি, আনন্দের পাশে বেদনা— এই হচ্ছে রূপকথা, চিরকালীন সৌন্দর্যের এক অমলিন চিত্র। এন্ডারসন সেইসব রূপকথা লিখেছিলেন যা পড়ে আজও বিস্মিত হই আমরা । সােনার কাঠির অনুপম নৃত্যে ঘুম ভাঙে আমাদের। প্রবেশ করি স্বর্গীয় উদ্যানে— যেখানে সীমাহীন কল্পনা, অন্তহীন স্বপ্ন ও কঠিন বাস্তবতা। রূপকথার মতােই এন্ডারসনের জীবনকাহিনী। লাজুক, ভীরু, সংকুচিত, স্পর্শকাতর, নম্র এবং চরম নিঃসঙ্গ এক মানুষ। ছেলেবেলায় একা, পিতৃহীন, স্নেহবঞ্চিত শৈশব। প্রতিভাবান— তাই জীবনসংগ্রামের পথে তাঁর দীর্ঘ পরিক্রমা। নাটকে অভিনয় করতে আগ্রহ, মঞ্চে গান গাওয়ার ইচ্ছা, নৃত্যশিল্পী হবার আকাঙ্ক্ষা, কবিতা রচনার চেষ্টা, চিত্রশিল্পী হওয়ার সাধনা— সবকটা মাধ্যমেই সময়ক্ষেপণ করলেন। ব্যর্থতার যন্ত্রণা স্কন্ধে নিয়ে সাহিত্যসাধনার সূত্রপাত— লিখলেন উপন্যাস, গল্প-কবিতা, ভ্রমণকাহিনী। এছাড়াও বহু বিচিত্র বিষয় তাঁর উপজীব্য। এর ফাঁকে এন্ডারসন লিখেছেন রূপকথা। অনেকটাই খেলাচ্ছলে, স্বাদ বদলানাের সাধু প্রক্রিয়ায়। কিন্তু আশ্চর্য, সেই গুরুত্বহীন রচনাসমগ্রই বিশ্বখ্যাত করল তাঁকে। রূপকথার জগতের সােনালি সিংহাসনে একচ্ছত্র আধিপত্য হল তার। তিনি পেলেন প্রভূত সম্মান, পুরস্কার সর্বস্তরের মানুষের আদরণীয়, বরণীয়, পূজনীয়। বেঁচে থাকতেই এন্ডারসন কিংবদন্তিতুল্য সম্মান ও খ্যাতি পেলেন। জয় করলেন শিশুদের বিচিত্র মনােজগৎ। ১৮৩৫ থেকে ১৮৭২ সাল। অন্যান্য লেখালেখির ফাঁকে এই সময়কালে মােট ১৬৮টি রূপকথা রচনা করেন তিনি। পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদের অলঙ্কারে মহিমান্বিত হয়ে আছে মৌলিক এই রূপকথার মায়াবী স্বাদ থেকে। কয়েকটি গল্প নিয়ে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র থেকে প্রকাশিত হল এই সংকলন। অনেকটাই অসম্পূর্ণ, কিন্তু আমরা চেয়েছি— এন্ডারসনের রূপকথার সােনালি একটি ছবি যেন অঙ্কন করা যায়। সেরা গল্পগুলাে যেন থাকে এই সংকলনে। বইটি পাঠকদের ভালাে লাগবে এই প্রত্যাশা। আর শিশুকিশাের পাঠকবন্ধুরা এন্ডারসনের রূপকথার অনিন্দ্য জগতে প্রবেশ করে তােমরা অবনত হও সেই নিঃসঙ্গ মানুষটির প্রতি, যিনি আমৃত্যু জগতের সকল শিশুদের পরম মমতায় ভালােবেসেছেন। গভীর ভালােবাসায় নির্মাণ করেছেন একেকটি অমর রূপকথা
জন্ম ৭ই এপ্রিল ১৯৬৪, লালবাগ, ঢাকা । পিতা প্ৰয়াত সাইফুর রহমান। মাতা প্ৰয়াত আনজিরা খাতুন। পিতৃব্য প্রয়াত কবি হাবীবুর রহমান, খ্যাতনামা শিশুসাহিত্যিক । শিশুসাহিত্যের সকল শাখায় সমান স্বচ্ছন্দ। ২০০৬ সালে পেয়েছেন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার। সবচেয়ে কম বয়সে খামখেয়ালি ছড়াগ্রন্থের জন্য পেয়েছেন শিশু একাডেমী আয়োজিত অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার। পরে এই পুরস্কার পেয়েছেন আরও পাঁচবার । এ ছাড়াও পেয়েছেন সিকানন্দার আবু জাফর সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৪), নুরুল কাদের শিশুসাহিত্য পুরস্কার (২০০৩), পদক্ষেপ সাহিত্য পুরস্কার (২০০৫), ছােটদের পত্রিকা পুরস্কার (২০০৭), ছোটদের মেলা পুরস্কার (২০০৯/২০১০), জাতীয় ছড়া উৎসব। ২০১১ সম্মাননা, শামসুর রাহমান সাহিত্য পুরস্কার (২০১১) এবং ওয়েস্ট এন্ড হাইস্কুল পুনর্মিলনী সম্মাননা। ২০১১ । কলকাতা থেকে অন্নদাশঙ্কর সাহিত্য পুরস্কার ২০১২। প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা দুই শতাধিক। সবই শিশুসাহিত্য। দেশের খ্যাতিমান সকল প্রকাশনা সংস্থা থেকে এক বা একাধিক বই প্ৰকাশিত হয়েছে । দশ বছর সম্পাদক ছিলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র থেকে প্রকাশিত কিশোর-তরুণদের উৎকর্ষধ্যমী মাসিক আসন্না-র । অধুনালুপ্ত দৈনিক বাংলার কিশোরদের পাতা সম্পাদনা করেছেন। পাঁচ বছর । বর্তমানে চ্যানেল আই-এর জেনারেল ম্যানেজারের দায়িত্বে কর্মরত। সাপ্তাহিক-এর প্রকাশকও তিনি। এ ছাড়া বাংলা একাডেমির ফেলো, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের স্থাপনা-সদস্য। প্রিয় শখ পুরোনো বই ও চিত্ৰকলা সংগ্ৰহ, বইপড়া, দাবাখেলা, রবীন্দ্রসংগীত শোনা ।