সম্মোহন কিরূপে হয় ? সম্মোহন কিরূপে হয় এবং কেন হয় এ প্রশ্নটা প্রায়ই মনে উঠিতে পারে। ইহার বিস্তৃত বিবরণ কাগজে-কলমে লিখিয়া বুঝানো কষ্টকর, ইহা মনে মনে বুঝি কিন্তু ভাষায় ব্যক্ত করিতে পারিতেছি না। তবে সম্মোহন করিবার যতগুলি প্রক্রিয়া আছে সবগুলিকে প্রধানত দুইভাগে বিভক্ত করা চলিবে। ১। প্রভাব-মূলক সম্মোহন (Hypnosis by domination ) ২। সমবায়-মূলক সম্মোহন (Hypnosis by co-operation ) প্রথমোক্ত প্রক্রিয়ায় অর্থাৎ প্রভাবমূলক সম্মোহন বিদ্যায় সম্মোহক তাঁহার পাত্রের উপর নিজের মানসিক বলের ক্রিয়া দেখান। ভয় এবং বিস্ময়ে পাত্রের মন অভিভূত করিয়া দেন এবং পাত্রকে প্রথম হইতেই নিজের বাধ্য করিবার জন্য তিনি (সম্মোহক) অনেক প্রক্রিয়া করেন। পুরাকালের কাপালিকগণের সম্মোহন এবং ইতিহাস বর্ণিত যাদুকর রাসপুতিনের সম্মোহন অনেকটা এই শ্রেণীর। কিন্তু সমবায়-মূলক সম্মোহনে ঐরূপ জোরের কোন প্রশ্নই নাই। সেখানে মেসমেরিজম্ পাত্র ও প্রদর্শকের ইচ্ছাশক্তির পরস্পর বিরোধে উৎপন্ন হয় না, পরস্পর মিলনে হয়। কাজেই পাত্রের ইচ্ছাশক্তি প্রবল বা দুর্বলে কিছুই আসে যায় না। সেখানে সম্মোহক তাঁহার পাত্রকে একটা আরাম কেদারায় শোয়াইয়া যতদূর সম্ভব আরাম দিবেন। তারপর বলিতে হয় “তুমি তোমার মন হইতে দুঃখ- ক্লেশ সব ভুলিয়া সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের কথা মনে কর এবং দেহকে কৌচের উপর এলাইয়া দিয়া উহা ভাবিতে থাক। মনে কর যে তোমার ঘুম আসিতেছে — তুমি ঘুমাইবে।” (ডাক্তার ব্রেইড প্রভৃতি অনেক সম্মোহক এই সময়ে পাত্রকে উঁচুতে কোন বিশিষ্ট একটি জিনিসের প্রতি তাহার দৃষ্টি নিবদ্ধ করিতে বলেন। তাহাতে চক্ষুর পেশীগুলি শ্রান্ত হয় এবং সমস্ত দেহে ক্লান্তি আসে।) সম্মোহক তখন পুনরায় বলেন “তুমি ঘুমাও-ঘুমাও” এই কথা বলিয়া তাহার শরীরে হাত বুলাইয়া দেওয়া হয়। ইহাতেই পাত্র ঘুমাইয়া পড়ে। এই নিদ্রোৎপাদনই ‘হিপ্নোটিজম্’। কাজেই দেখা যাইতেছে পাত্রের প্রথমে যে লক্ষণটি প্রকাশ পায় উহা অনাসক্তি লক্ষণ। কারণ এই অবস্থায় যদি তাহাকে বলা হয় তুমি চক্ষু খুলিতে পারিবে না, সে কিছুতেই পারিবে না। সে তখন বলিবে “আমি খুলিতে পারি কিন্তু মোটেই ইচ্ছা করিতেছে না।” ইহার পর এই নিদ্রা ক্রমেই গাঢ় হইতে আরম্ভ হইবে।
পি. সি. সরকার (জন্ম: ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯১৩, মৃত্যু: ৬ জানুয়ারি ১৯৭১) বর্তমান বাংলাদেশের (পূর্বে: বেঙ্গল, ব্রিটিশ ভারত) টাঙ্গাইল জেলার অশোকপুর গ্রামে একটি দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তিনি শিবনাথ উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন। তিনি তার জাদুবিদ্যার প্রাথমিক ধারণা নেন গণপতি চক্রবর্তীর কাছ থেকে। তার জাদু ১৯৩০ সালের দিকে জনপ্রিয় হওয়া শরু হয়। তিনি কলকাতা, জাপান এবং আরো অনেক দেশেই জাদু দেখিয়েছেন। প্রতুলচন্দ্র সরকার কলকাতার বাসন্তী দেবীকে(মৃত্যু: ২৬ ডিসেম্বর ২০০৯, কলকাতা) বিয়ে করেন। তার তিন ছেলে, মানিক সরকার, পি.সি. সরকার জুনিয়র ও পি.সি. সরকার ইয়ং। তিনি অন্যতম একজন আন্তর্জাতিক জাদুকর ছিলেন যিনি ১৯৫০ থেকে ১৯৬০ সাল পর্যন্ত তার জাদু দেখিয়েছেন। তার অন্যতম প্রদর্শনী ছিল ইন্দ্রজাল প্রদর্শনী”। এই প্রদর্শনী তিনি প্রথমে মঞ্চে ও তারপর টেলিভিশনে দেখিয়েছিলেন